সামিউল হত্যার আসামি কামরুল সৌদিতে গ্রেপ্তার

কামরুলের হাতে লাঠি। এই লাঠি দিয়েই শিশু
শেখ মো. সামিউলকে পেটানো হয়। ছবিটি
ভিডিওচিত্র থেকে নেওয়া। ছবি: প্রথম আলো
সিলেটের শিশু শেখ মো. সামিউল হত্যা মামলার আসামি কামরুল সৌদি আরবে গ্রেপ্তার হয়েছেন। সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ আজ সোমবার রাতে মোবাইলে প্রথম আলোকে এ কথা জানান।
গোলাম মসিহ বলেন, ‘সিলেটের শিশু সামিউল হত্যা মামলার আসামি কামরুল সৌদি আরবে গ্রেপ্তার হয়েছেন। কামরুল এখন সৌদি পুলিশের হেফাজতে আছেন।’ তিনি আরও জানান, বর্তমানে সৌদি আরবে অবস্থান করছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। সামিউল হত্যা মামলার আসামি কামরুল সৌদি আরবে আসার খবরে প্রতিমন্ত্রী সৌদি পুলিশকে কামরুলকে গ্রেপ্তারের জন্য আহ্বান জানান।
চুরির অভিযোগে গত বুধবার সিলেটের কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ডে সবজিবিক্রেতা সামিউলকে দোকানঘরের খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনের একপর্যায়ে মারা যায় সামিউল। পরে তার লাশ গুম করার চেষ্টা করা হয়। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে নগরের কুমারগাঁওয়ের শেখপাড়ার বাসিন্দা মুহিতকে আটক করে পুলিশে দেয় এলাকাবাসী। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করে। মামলায় মুহিতসহ তাঁর ভাই কামরুল ইসলাম (২৪), তাঁদের সহযোগী আলী হায়দার ওরফে আলী (৩৪) ও চৌকিদার ময়না মিয়া ওরফে বড় ময়নাকে (৪৫) আসামি করা হয়েছে।
ভিডিওচিত্রের সূত্র ধরে গতকাল রোববার প্রথম আলোর শেষ পৃষ্ঠায় ‘নির্মম, পৈশাচিক! ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হলে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়।
সামিউলকে নির্যাতন করার ২৮ মিনিট ৫২ সেকেন্ডের ভিডিওচিত্রে দেখা গেছে, কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ডের একটি দোকানঘরের বারান্দার খুঁটিতে সামিউলকে বেঁধে রাখা হয়েছে। খুঁটির সঙ্গে তার দুই হাত পেছন দিক করে বাঁধা। রোলার দিয়ে তার মাথা থেকে পা পর্যন্ত থেমে থেমে চলছিল আঘাত। বাঁধা অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আর্তনাদ করছিল সামিউল, ‘আমি মরি যাইয়ার! কেউ আমারে বাঁচাও রে বা! ’ এতেও বন্ধ হয়নি নির্যাতন। শেষে আকুতি, ‘আমারে পানি খাওয়াও! ’ তখন তাঁর চোখ-মুখ বেয়ে অঝোরে ঘাম ঝরছিল। তাঁকে বলা হলো ‘পানির বদলা ঘাম খা! ’
সামিউলকে পেটানোর সময় নির্যাতনকারীরাই ভিডিওচিত্র ধারণ করেন। ভিডিওচিত্রে তিন-চারজনের কণ্ঠস্বর শোনা গেলেও ভিডিওধারণকারী আরও দুজনের কথাবার্তা ও আগন্তুক একজনের উপস্থিতি ছিল।
শুরুতে ‘এই ক (বল) তুই চোর, তোর নাম ক...কারা আছিল...’ বলতে বলতে চুলের মুঠি ধরে সামিউলকে মারধর করা হয়।
নির্যাতনের একপর্যায়ে কয়েক মিনিটের জন্য তার হাতের বাঁধন খুলে হাঁটতে দেওয়া হয়। ‘হাড়গোড় তো দেখি সব ঠিক আছে, আরও মারো...’ বলে সামিউলের বাঁ হাত খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রেখে আরেক দফা পেটানো হয়।
মারধর করার সময় একদিকে সামিউলের আর্তচিৎকার, আর অন্যদিকে নির্যাতনকারীদের মুখে অট্টহাসিসহ নানা কটূক্তি শোনা যায়।যে ভিডিও ধারণ করার কাজটি করছিল, তাকে নির্দেশ করে নির্যাতনকারীরা জানতে চায় ঠিকমতো ভিডিও ধারণ হচ্ছে কি না। একজনকে তখন বলতে শোনা যায়, ‘ফেসবুকে ছাড়ি দে, এ তো খাঁটি চোর! সারা দুনিয়ার মানুষ দেখব...’। শেষ দিকে সলাপরামর্শও চলে। নির্যাতনকারী একজন সঙ্গীদের কাছে জানতে চায়, ‘কিতা করতাম? ’ অপর একজনকে তখন বলতে শোনা যায়, ‘মামায় যে কইছন, ওই কাম করি ছাড়ি দে! ’সামিউলের বাবা শেখ আজিজুর রহমান মাইক্রোবাসচালক। তাঁর দুই ছেলের মধ্যে সামিউল বড়। আজিজুর জানান, তিনি যেদিন ভাড়ায় মাইক্রোবাস চালাতে পারেন না, সেদিন সংসার খরচ চালাতে সবজি বিক্রি করতে বের হয় সামিউল।মা লুবনা আক্তার জানান, ঘটনার দিন (বুধবার) সামিউলের বাবা গাড়িতে ছিলেন (ভাড়ায়) বলে বাড়ি ফেরেননি। ভোরে টুকেরবাজার থেকে সবজি নিয়ে বিক্রির জন্য সামিউল বের হয়েছিল। সারা দিন ছেলের খোঁজ পাননি তাঁরা। রাতে থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার সময় এক কিশোরের লাশ পাওয়ার সূত্র ধরে সামিউলকে শনাক্ত করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.