‘তোমাদের টিম দ. আফ্রিকাকেও হারিয়ে দিল’ by মুনির হাসান

‘কনগ্র্যাচুলেশন, মুনির’।
অবাক হয়ে পেছনে তাকালাম। আমাদের কোনো খাতাই এখনো দেখা হয়নি। এর মধ্য অভিনন্দনের ব্যাপার আসছে কীভাবে?
হাসি মুখে আয়ারল্যান্ডের উপ-দলনেতা গর্ডন লাসলি বললেন, ‘তোমাদের ক্রিকেট টিম। দক্ষিণ আফ্রিকাকেও হারিয়ে দিল।’
গতকাল রোববার ঢাকার মিরপুরে তিন ম্যাচের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৭ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এর আগে জুন মাসে ভারতের সঙ্গে ২-১ সিরিজ জয় করেছে মাশরাফিরা। পাকিস্তানকে ৩-০তে ধবল ধোলাই করেছে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপের পর থেকেই ভালো ক্রিকেট খেলছে সাকিব-মুশফিকরা। মাশরাফি বিন মুর্তজাদের এমন সাফল্য আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের (আইএমও) ময়দানেও আমাদের গর্বিত করেছে। গর্ডন লাসলি প্রথম দেখাতে ক্রিকেটের প্রসঙ্গ এনে বাংলাদেশ দলের প্রশংসা করেছেন। গর্ডনের সঙ্গে ভারতের দুজন পর্যবেক্ষকও যোগ দিলেন। কথা একটাই। গত কিছুদিনে আমাদের ক্রিকেট টিম যথেষ্ট উন্নতি করেছে। খাতা নিয়ে সমন্বয় কক্ষে ঢোকার সময় গর্ডন বলল, ‘ক্রিকেটের মতো এখানেও তোমাদের সাফল্য আসুক।’
আজ সোমবার সকাল থেকে আমি আর দলনেতা মাহবুবের খুবই ব্যস্ত সময় কেটেছে। আমরা পাঁচটি সমস্যার সমন্বয়ের কাজ শেষ করেছি। গতকালের পর আজকেও একদফা মতৈক্যে পৌঁছাতে না পারায় ৪ নম্বর সমস্যা আমরা কালকের জন্য মুলতবি রেখেছি। পাঁচ নম্বর বাদে বাকি পাঁচটির মধ্যে একমাত্র ৬ নম্বর তা সবচেয়ে কঠিন সমস্যাটিতে আমাদের প্রতিযোগীরা কোনো নম্বর পায়নি। তবে, বাকি সবগুলো থেকেই তারা কিছু না কিছু পেয়েছে। ফলে একটি সমস্যার প্রাপ্ত নম্বর ছাড়াই আমরা গতবারের মোট নম্বরকে ছাপিয়ে গেছি। এই পর্যন্ত আমাদের প্রতিযোগীদের প্রাপ্ত মোট নম্বর পঁচাশি, গতবারের চেয়ে এক বেশি। আমাদের বিশ্বাস, আমরা আরও ১০-১২ নম্বর পেতে পারি। শুধু তাই নয়, এই প্রথমবার আমাদের প্রতিযোগীদের সবাই একটি সমস্যার সম্পূর্ণ সমাধান করে পূর্ণ নম্বর পেয়েছে। ৪ নম্বর সমস্যাটি সবাই সমাধান করায় ওইটাতে আমরা পেয়েছি ৪২। ফলে কাউকেই খালি হাতে ফিরতে হবে না।
আজ সোমবার বিকেল পর্যন্ত যে আলোচনা এবং নম্বরের গতি প্রকৃতি তাতে কত নম্বরের জন্য কোনো মেডেল হবে তা আঁচ করা যাচ্ছে না। এশিয়া দেশগুলোর দলনেতাদের মতে এবারে কম নম্বরেই মেডেল পাওয়া যেতে পারে। তাদের যুক্তি হলো ২ এবং নম্বর সমস্যা গতবারের চেয়ে কঠিন। কাজে গতবারের চেয়ে কম নম্বরে ব্রোঞ্জ পাওয়া যেতে পারে। উল্লেখ্য গতবার ১৬ নম্বরেই ব্রোঞ্জ পদক হয়েছে। তবে, বেশির ভাগ দলনেতা এখনো মন্তব্য করতে রাজি হচ্ছে না। কারণ সব দেশের ৪ নম্বর সমস্যার সমন্বয় হলে পরে আন্দাজ করাটা সহজ হবে।
আমরা যখন উত্তরপত্র আর মেডেলের হিসাব নিকাশ নিয়ে ব্যস্ত তখন প্রতিযোগীরা গিয়েছে হাতির ক্যাম্প দেখতে। হাতির প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে মাহুতদের সঙ্গে হাতিদের বিরাট সখ্য গড়ে উঠে। গোল পোস্টে বল মারা, বাস্কেট বল খেলা ছাড়াও হাতিরা ছবি আঁকাও শেখে এখানে।
বিকেলে আমি আর মাহবুব গিয়েছিলাম আশপাশে ঘুরে দেখতে। আগে বলেছি একটা ময়লা নদীর পাড়ে এই শহর হলেও দোকানপাটের অভাব নেই। বছরের মাঝখানে মূল্যছাড়ের উৎসব চলছে সর্বত্র। কোন কোন দোকানে দেখলাম ৮০ শতাংশ মূল্যহ্রাসের কাগজ লিখে রেখেছে।
অফিস সময় ছাড়া রাস্তাঘাটে তেমন ভিড় দেখা যায় না। লাল রঙ্গের হিউম্যান হলার হল এখানকার প্রধান পাবলিক ট্রান্সপোর্ট। আর আছে আমাদের সিএনজিচালিত অটোরিকশার মত “টুকটুক”। পর্যটন শহর হওয়ায়, শহর নিরাপদ। গত রাতেও আমি আর মাহবুব ছাত্রদের সঙ্গে তাদের সমাধান বিষয়ক আলাপ আলোচনা করে গভীর রাতে নিজেদের রুমে ফিরেছি।
কাল মঙ্গলবার সকালে মূল্যায়ন পর্ব শেষে আমাদের বেড়াতে যাওয়ার কথা রয়েছে। আর প্রতিযোগীরা বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা শেষ করবে। কাল রাতে বিচারকদের চূড়ান্ত সভায় মেডেলের হিসাব নিকাশ চূড়ান্ত হবে। আর আমাদের শেষ করতে হবে খাতা দেখার কাজ।
৪ জুলাই থেকে থাইল্যান্ডের চিয়াংমাই শহরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ৫৬ তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড। ১১৪টি দেশের প্রতিযোগীর সঙ্গে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশের ছয়জন প্রতিযোগী। ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় ও প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি দেশজুড়ে গণিত উৎসবের মাধ্যমে এই ছয়জনকে নির্বাচিত করেছে।

No comments

Powered by Blogger.