মন্ত্রীর নির্দেশেও উচ্ছেদ হচ্ছে না অবৈধ স্থাপনা

নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুরে মহাসড়কের পাশে সওজের জায়গায় গড়া অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদ করতে গত বৃহস্পতিবার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রশাসনকে ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়েছিলেন। তবে গতকাল রোববার পর্যন্ত প্রশাসন উচ্ছেদ অভিযান চালাতে পারেনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কাঁচপুর সেতুর পূর্ব প্রান্তে কাঁচপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দুই পাশ দখল করে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের জায়গায় আট শতাধিক দোকান নির্মাণ করা হয়। কয়েক সপ্তাহ ধরে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও শ্রমিক লীগের নেতা-কর্মীরা এসব স্থাপনা নির্মাণ করেন। এরপর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা সেখানে ব্যবসা শুরু করেন। এতে দুই মহাসড়কের অন্যতম ব্যস্ত এ স্থানে প্রতিদিন তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক পরিদর্শন শেষে সোনারগাঁয়ের মেঘনা ঘাটে সওজ ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কাঁচপুরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করার নির্দেশ দেন। তবে গতকাল দুপুর পর্যন্ত ৭২ ঘণ্টা অতিবাহিত হলেও উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়নি। নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, কাঁচপুরে উচ্ছেদ অভিযান না চালাতে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতারা প্রশাসনকে প্রচণ্ড চাপ দিচ্ছেন। এতে প্রশাসন বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে।
গত ৬ মে দুটি মহাসড়কের যানজট নিরসনে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সওজ ও জেলা প্রশাসন কাঁচপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকার ৮০০ অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদ করে। কিন্তু এক মাস পর আবারও সেখানে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ শুরু হয়।
গতকাল কাঁচপুরে গিয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নতুন করে গড়ে তোলা ৮০০ দোকানের প্রতিটি থেকে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের স্থানীয় নেতারা অগ্রিম হিসেবে ২৫ হাজার টাকা করে প্রায় ২ কোটি টাকা নিয়েছেন। আর এসব দোকানের প্রতিটি থেকে মাসে ১৫ হাজার টাকা করে ভাড়া তোলা হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মহাসড়কের পাশে সওজের জায়গায় গড়া অবৈধ দোকানপাট। সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশের তিন দিন পরও প্রশাসন সেগুলো উচ্ছেদ করতে পারেনি। গতকাল তোলা ছবি। ইনসেটে একইস্থানে ৬ মে উচ্ছেদ অভিযান চালানোর পর তোলা ছবি l প্রথম আলো
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৮ সাল থেকে গত ৬ মে পর্যন্ত সরকার ১০ বার কাঁচপুরে উচ্ছেদ অভিযান চালায়। প্রতিবার উচ্ছেদের পর নতুন করে স্থাপনা নির্মাণ করা হয়। এভাবে আওয়ামী লীগের নেতারা মাসিক ভাড়া বাদে শুধু অগ্রিম বাবদ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ২০ কোটি টাকা নিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বলেন, উচ্ছেদ অভিযান হলে নেতারা খুশি। কারণ, নতুন করে দোকান নির্মাণ করার সময় নেতারা শর্ত দেন, সরকার উচ্ছেদ করলেও অগ্রিম টাকা ফেরত দেওয়া হবে না। ৬ মে উচ্ছেদ অভিযানের পর যাঁরা নতুন করে দোকান নির্মাণ করে ব্যবসা করছেন, তাঁদের কাছ থেকে আবার অগ্রিম টাকা নেওয়া হয়েছে। জাতীয় শ্রমিক লীগের কাঁচপুর শিল্পাঞ্চল শাখার সভাপতি আবদুল মান্নান, স্থানীয় প্রভাবশালী আবুল খায়ের, যুবলীগ কর্মী বাবু ওমর, আওয়ামী লীগের সমর্থক জামাল খান ও আমান খানের নেতৃত্বে ২০ জন অবৈধ দোকান নির্মাণ করে এভাবে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে তাঁরা জানান।
আবদুল মান্নান, আবুল খায়ের ও বাবু ওমর বলেন, ‘ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে দোকানপাট নির্মাণ করেছেন। আমরা অবৈধ লেনদেনের সঙ্গে জড়িত নই।’
নারায়ণগঞ্জ সড়ক বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী জাকিরুল আলম বলেন, জেলা প্রশাসন থেকে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ না দেওয়ায় উচ্ছেদ অভিযান চালানো যাচ্ছে না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু নাছের ভূঁঞা বলেন, ‘বারবার উচ্ছেদের পর কাঁচপুরে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করে মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি করা হচ্ছে। মন্ত্রীর নির্দেশের পর আমরা আবার উচ্ছেদ অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

No comments

Powered by Blogger.