'সমকামী মানে ধর্মবিরোধী নয়, সমাজবিরোধীও নয়' by পারভেজ আলম

পারভেজ আলম
সমকামী মানে ধর্মবিরোধী নয়, সমাজবিরোধীও নয়। যদি তাই হইতো তাহলে সমকামীরা সকলেই নাস্তিক হইতো। যদি তাই হইতো, তাইলে তারা বিবাহের স্বীকৃতির জন্যে আন্দোলন করতো না, ধর্মীয় নিয়মে বিবাহ করতো না। খ্রিস্টান নিয়মে সমকামীদের বিবাহ পড়ানো চালু হয়েছে অনেকদিন যাবৎ। ইসলামী নিয়মেও এখন কিছু ইমাম সমকামীদের বিবাহ অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেন। কেনো করেন? কারণ মানুষ সমকামী হইলেই তার স্পিরিচুয়াল নিড তো নাই হইয়া যায় না। একজন সমকামীর কাছে তার যৌনতা একজন বিসমকামীর যৌনতার মতোই সত্য, স্বাভাবিক, বাস্তব। ঐ যৌনতার জন্যে তার কাছে তার ইশ্বর, পয়গম্বর, বেহেশত মিথ্যা কেনো হবে? অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা হয় না। আবার কিছু সমকামী নাস্তিক বটে, যেমন কিছু বিসমকামীও নাস্তিক।
ধর্মীয় মিশনারিদের কাজ হচ্ছে যেকোন সুযোগেই নিজের ধর্মমত প্রচার অথবা পরধর্মের নিন্দা চর্চা করা। সুতরাং, সমকামীদের অধিকারের প্রসঙ্গ সামনে রেখে যারা নাস্তিকতার প্রচার করেন তারা মূলত মিশনারি নাস্তিক, ইশ্বরে বিশ্বাস না করলেও ধর্মবোধ তাদের মধ্যে প্রবল। সমকামীদের বিয়ের অধিকার সামনে রেখে স্পেসিফিকলি মুসলমানদের খোচানোটাও সমকামীদের অধিকারের সাথে স্ংহতি প্রকাশের সাথে জড়িত নয়, ইসলামোফোবিয়ার সাথে জড়িত। সমকামীদের মাথায় কাঠাল ভেঙে ইসলামবিদ্বেষ আর কি। পরের মাথায় কাঠাল ভেঙে খাওয়ায় ধর্মীয় মিশনারিদের জুরি নাই, ইতিহাস তাই বলে।
'ইসলামিক স্টেট' নামের মধ্যে যে ধর্মতন্ত্রের গন্ধ পাওয়া যায়, 'এথিস্ট রিপাবলিক' নামের মধ্যেও সেই একি ধর্মতন্ত্রের গন্ধ পাওয়া যায়। হতে পারে প্রথম পক্ষ খুন খারাবি করে, আর দ্বিতীয় পক্ষ শুধু অনলাইনে ফটোশপ করে ধর্মবিদ্বেষ ছড়ায়। কিন্তু তাতে কি প্রমান হয়? প্রমান হয় যে ইসলামিস্টরা তাদের আদর্শের প্রশ্নে ভয়াবহরকম সিরিয়াস, এরজন্যে তারা হাজারে হাজারে খুন করতে পিছপা হবে না। অন্যদিকে ধার্মিক নাস্তিকরা মূলত তাদের দিকে কলসির কানা ছুড়ে দিচ্ছে। বলি, মৌলবাদী ইসলামিস্টরা কি শ্রী চৈতন্য, যে কলসির কানা গায়ে লাগার পর প্রেম দিতে ছুটে আসবে? তারা তো চাপাতি নিয়েই আসবে। তার বিরুদ্ধে কলসির কানা ছুড়ে কোন ধরণের যুদ্ধ করতে চান? কিছু ইয়ং ছেলেপেলেকে দায়দায়িত্বহীন, সারবস্তুহীন হম্বিতম্বি শেখানো ছাড়া আর বিপদের মুখে ফেলে দেয়া ছাড়া এই যুদ্ধের সাফল্য কি?
নাস্তিকতার সাথে আত্মপ্রেমের একটা সম্পর্ক আছে। ইশ্বরের অনস্তিত্ব সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়ার পর মানুষ আপন অস্তিত্বের প্রেমে হাবুডুবু খায়। এটা দোষের কিছু নয়। কিন্তু দুনিয়া ব্যক্তি মানুষের নয়, দুনিয়া মানুষের। তাই বিসমপ্রেমের মতো সমপ্রেমের অধিকারের আন্দোলন হয়। সমাজ স্বীকৃত প্রেমের অধিকারের মানবিক আন্দোলনের সময়ও যদি কেউ আত্মপ্রেমে হাবুডুবু খায়, তবে তার নাস্তিক হওয়ায় কোন ঘাটতি না থাকলেও মানুষ হওয়ার প্রেক্টিসে সে এখনো পিছিয়ে আছে। নিশ্চয় নাস্তিক হওয়াই একমাত্র কর্ম হতে পারে না। যদি না মানুষই হইতে পারলাম।

No comments

Powered by Blogger.