দুর্নীতি ও রাজনৈতিক অস্থিরতা: পথের বাধা সরিয়ে নিন

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত যে মাঝেমধ্যে অকপটে সত্য কথা বলেন, তার প্রমাণ মিলল গত বৃহস্পতিবার সপ্তম পঞ্চবার্ষিক খসড়া দলিলের ওপর আলোচনায়ও। তিনি স্বীকার করেছেন যে দুর্নীতি না থাকলে দেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ২ থেকে ৩ শতাংশ বাড়ত। রাজনৈতিক অস্থিরতায় জিডিপির ১ শতাংশ ক্ষতি হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী।
সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আগামী পাঁচ বছরে ৩১ লাখ ৯০ হাজার ৩০০ কোটি টাকা খরচের কথা বলা হয়েছে। একই সময়ে ১ কোটি ৭৫ লাখ লোকের কর্মসংস্থানের লক্ষ্য নির্ধারণ যত উচ্চাভিলাষই হোক না কেন, সদিচ্ছা থাকলে সেটি অর্জন করা অসম্ভব নয়।
অর্থমন্ত্রী দেশের উন্নয়ন হলে রাজনৈতিক অস্থিরতা কমবে বলে যে মন্তব্য করেছেন, তার সঙ্গেও দ্বিমত করার সুযোগ নেই। প্রশ্ন হলো সেই অস্থিরতা কমানোর ক্ষেত্রে সরকারের কোনো দায়িত্ব নেই? এ জন্য হরতাল-অবরোধের মতো ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি আহ্বানকারী দল যেমন দায়ী, তেমনি দায়ী সেই কর্মসূচির কারণ সৃষ্টিকারীরাও। এক হাতে তালি বাজে না।
সভায় বিশ্বব্যাংক, ডিএফআইডি ও ইউএনএফপিএ প্রতিনিধিরা যথাক্রমে ক্রয় খাতে দুর্নীতি বন্ধে ই–প্রকিউরমেন্ট পদ্ধতি চালু, অর্থব্যয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি আনা এবং আমলাদের ওপর রাজনৈতিক প্রভাব না খাটানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। অর্থমন্ত্রী নিজেও দুর্নীতি কমাতে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের কথা বলেছেন। এখন প্রশ্ন হলো, কাজির গরু কি কেবল কেতাবেই থাকবে, না সেটিকে গোশালায় নিয়ে আসার কাজটিও নিশ্চিত করা হবে?
অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য বিশ্লেষণ করলে যে সত্য বেরিয়ে আসে তা হলো, হরতাল-অবরোধসহ রাজনৈতিক অস্থিরতায় অর্থনীতির যে ক্ষতি হয়, তার দ্বিগুণ থেকে তিন গুণ ক্ষতি হয় পদ্ধতিগত দুর্নীতিতে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও দেশীয় সংস্থার জরিপে তথ্য–উপাত্ত দিয়ে এসব দুর্নীতির কথা বলা হলেও সরকার সত্য অস্বীকারের নীতিই অনুসরণ করে চলেছে। আশা করি, অর্থমন্ত্রীর এই স্বীকারোক্তির পর সরকার উট পাখির মতো বালুতে মুখ লুকিয়ে ঝড় থামানোর চেষ্টা থেকে বিরত থাকবে। অন্ধ হলেই তো প্রলয় বন্ধ থাকে না।

No comments

Powered by Blogger.