চুক্তিতে ছিনতাইকারী গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল এসআই রফিক

এক মামলার মাধ্যমে এসআই রফিকের পরিচয় হয়েছিল ছিনতাইকারী একটি গ্রুপের সঙ্গে। এরপর তাদের সঙ্গে গড়ে ওঠে সখ্য। একপর্যায়ে তারা পরিকল্পনা করে মিলেমিশে ছিনতাই করার। ছিনতাইকারীরা ছিনতাই করবে, আর পোশাকধারী এসআই রফিক তাদের সহযোগিতা করবে। বিনিময়ে ছিনতাইকৃত টাকার বড় একটি অংশ পাবে সে। আর ছিনতাইকারীরাও নির্বিঘ্নে ছিনতাই করে যাবে। কিন্তু বিধিবাম। এসআই রফিকের দাবি মতে, প্রথম ছিনতাই অভিযানে গিয়েই ধরা পড়ে তারা। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে ১০ দিনের রিমান্ডে আসা কাফরুল থানার এসআই রফিক এসব কথা স্বীকার করেছে। গোয়েন্দা পুলিশ রফিকের সহযোগী চার ছিনতাইকারীকে খুঁজছে। একই সঙ্গে এসআই রফিকের সঙ্গে কাফরুল থানার আর কোন কর্মকর্তার যোগসাজশ রয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গোয়েন্দা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
গত শনিবার মতিঝিলে এক ব্যক্তির কাছ থেকে পাওনা ১৯ লাখ টাকা নিয়ে বায়তুল মোকাররম থেকে বাসে নারায়ণগঞ্জ যাচ্ছিলেন ঝুট ব্যবসায়ী নাজমুল। মাতুয়াইল যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একটি সাদা মাইক্রোবাস ব্যারিকেড দিয়ে ওই বাসটিকে দাঁড় করায়। পোশাকধারী এসআই রফিকের নেতৃত্বে আরও পাঁচজন খুনের মামলার আসামি বলে নাজমুলকে গাড়ি থেকে টেনে বের করার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে নাজমুলের হাতে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে গাড়ির রডের সঙ্গে আটকিয়ে টাকার ব্যাগটি নিয়ে নেয়। এসময় নাজমুল চিৎকার করলে বাসের যাত্রীসহ পথচারীরা গিয়ে ওই মাইক্রোবাসটিকে আটকায়। পরে টহল পুলিশ গিয়ে লুৎফরকে আটক করে। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে আটক করা হয় কাফরুল থানার এসআই রফিককে।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি পূর্ব) মাহাবুব আলম বলেন, ছিনতাইকারী চক্রের সঙ্গে যোগসাজশ করে একসঙ্গে কাজ করছিল এসআই রফিক। ঘটনার পর ছিনতাইকারীরা টাকার ব্যাগটি নিয়ে পালিয়ে গেছে। তাদের ধরার জন্য পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ছিনতাইকারী চক্রটি জানতে পারে নাজমুলের সঙ্গে টাকা রয়েছে। তারাই আগে থেকেই চুক্তি করে রাখা এসআই রফিককে খবর দেয়। এসআই রফিকসহ মতিঝিল থেকেই ব্যবসায়ী নাজমুলের পিছু নেয়। এক পর্যায়ে তারা মাতুয়াইল এলাকায় গিয়ে টাকা ছিনিয়ে নিয়ে চলে যায়। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, টাকার ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়ার পরপরই ছিনতাইকারীরা যার যার মতো চলে যায়। এসআই রফিকের বিষয়ে তথ্য পাওয়ার পর কাফরুল এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে এসআই রফিক ও গাড়িচালক লুৎফর টাকা ছিনতাইয়ের ওই ঘটনার পুরো বর্ণনা দিয়েছে। তারা ছিনতাইকারী চক্রের আরও চার সদস্যের নাম বলেছে। গোয়েন্দা পুলিশ তাদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চালাচ্ছে। ইতিমধ্যে রাজধানী ঢাকা ও ঢাকার বাইরের একাধিক স্থানে অভিযান চালানো হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, তদন্তে প্রযুক্তির সহায়তা নেয়া হচ্ছে। অভিযুক্তরা মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে নিজেদের আড়াল করার চেষ্টা করলেও পার পাবে না। ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত বাকিদেরও খোঁজা হচ্ছে। এ ঘটনার সঙ্গে অন্য কোন পুলিশ সদস্য জড়িত থাকলেও তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, মতিঝিলকেন্দ্রিক ভুয়া ডিবি পুলিশের এরকম বেশ কয়েকটি গ্রুপ রয়েছে। একাধিক গ্রুপকে এর আগে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। কিন্তু এই ছিনতাইকারী গ্রুপের সঙ্গে আসল পুলিশও জড়িয়ে ছিল তা তাদের জানা ছিল না। এসআই রফিক এর আগেও আর কোন ছিনতাইয়ে জড়িত ছিল কিনা তা জানার চেষ্টা চলছে। তবে চতুর এসআই গোয়েন্দা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা করছে।
এদিকে ছিনতাইয়ের শিকার নাজমুল জানান, মতিঝিল থেকে ইদ্রিস নামে চাচার কাছ থেকে তিনি পাওনা ১৯ লাখ টাকা নিয়েছিলেন। ওই চাচাও ঝুট ব্যবসা করেন। তিনি ব্যাংক থেকে টাকাগুলো তুলে তাকে দেন। তিনি ওই টাকা নিয়ে নারায়ণগঞ্জের বাড়িতে যাচ্ছিলেন। মাতুয়াইল এলাকায় হঠাৎ একটি মাইক্রোবাস তাদের বাসটিকে থামায়। এসময় পুলিশের পোশাক পরিহিত একজন ও বাকিরা সাদা পোশাকে নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে তাকে টেনে হিঁচড়ে নামানোর চেষ্টা করে। তারা তাকে খুনের মামলার আসামি বলে। তার সঙ্গে এক চাচাও ছিল। কিন্তু পুলিশের ভয়ে বাসের কেউ কোন প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছিলেন না। একপর্যায়ে এসআই রফিকসহ অন্যরা টাকা নিয়ে বাস থেকে নেমে যায়। এসময় তার হাতে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে রাখে। ছিনতাইকারীরা নেমে গেলে তার চাচা বাসযাত্রীদের হাতেপায়ে ধরে টাকা নিয়ে যাওয়ার কথা বলে। বাসটি একটু আগাতেই মাইক্রোবাসটিকে পেয়ে যায়। মাইক্রোবাসটি তখন জ্যামে আটকা ছিল। পরে বাস থেকে ১০-১২ জন নেমে মাইক্রোবাসের চালক লুৎফরকে ধরে ফেলে। মাইক্রোবাসের ভেতরে একটি কালো ব্যাগ পাওয়া যায়। ওই ব্যাগের ভেতরে এসআই রফিকের আইডি কার্ডসহ আরও কাগজপত্র ছিল। ওই সময় টহল পুলিশ উপস্থিত হয়।
নাজমুল বলেন, এসআই রফিককে ধরে ডিবিতে নেয়ার পর সে তিন দিন সময় চায়। এরমধ্যে সে পুরো টাকা ফেরত দিতে চায়। কিন্তু ঘটনার তিন দিন পার হলেও তার টাকাও উদ্ধার করতে পারেনি ডিবি। এমনকি ছিনতাইকারী চক্রের অন্য সদস্যদেরও ধরতে পারেনি। নাজমুলের অভিযোগ, ডিবি উল্টো তার ইদ্রিস চাচাকে সন্দেহ করছে। তাকে ডেকে হয়রানির চেষ্টা করছে।

No comments

Powered by Blogger.