পাঠকের মন্তব্য- এই মূল্যবৃদ্ধি জনজীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে

অনলাইনে প্রথম আলো (prothom-alo.com) পড়া হয় ১৯০টি দেশ থেকে। পাঠকেরা প্রতিদিন রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ, খেলাসহ বিভিন্ন বিষয়ে তাঁদের মতামত দেন। তাঁদের এ মতামত চিন্তার খোরাক জোগায় অন্যদের।
গত কয়েক দিনে বিভিন্ন বিষয়ে পাঠকদের কিছু মন্তব্য ঈষৎ সংক্ষেপিত আকারে ছাপা হলো।

খুনিদের বাঁচানোর চেষ্টা চলছে
পুরান ঢাকায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের হামলায় নিহত বিশ্বজিৎ দাসের বাবা গত শুক্রবার সংবাদ সম্মেলন করে এই অভিযোগ করেছেন। এ সম্পর্কে পাঠক এস আর তৌফিক লিখেছেন: বিশ্বজিতের লাশ পোড়ানো হবে বলেই সেই ফাঁকফোকর বুঝে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে, যাতে খুনিদের বাঁচানো যায়।
তানভির আহমেদ: হত্যাকারীদের বাঁচাতে বিশ্বজিৎ দাসের লাশের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন দুর্বল করে তৈরি করা হয়েছে। প্রকৃত তথ্য বের করতে বিশ্বজিতের লাশের ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক মাকসুদুর রহমান ও সুরতহাল প্রস্তুতকারী সূত্রাপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জাহিদুল হককে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেওয়ার দাবি করছি আমরা।
মাসুম শেখ: বিশ্বজিৎ প্রাণ দিয়ে প্রমাণ করেছেন জাতি হিসেবে আমরা কতটা হিংস্র। আমাদের রাষ্ট্রে সর্বোচ্চ ক্ষমতায় থেকেও যে আমরা স্বার্থের জন্য অন্ধ হয়ে যেতে পারি, বিশ্বজিতের ঘটনা তা প্রমাণ করে দিয়েছে। বিশ্বের দরবারে একটা ঘটনাই একটি জাতির পরিচয় তুলে ধরতে পারে। প্রকাশ্য দিবালোকে শত শত মানুষের সামনে বিশ্বজিৎকে হত্যা করা হলেও তার খুনিদের রাষ্ট্র চিনতে পারে না। সংবাদপত্রে ছবিসহ পরিচয় প্রকাশ করা হলো, তার পরও রাষ্ট্র নির্লিপ্ত! খুনিদের বাঁচানোর জন্য চলে আরেক আয়োজন, যার জন্য তৈরি করা হয় দুর্বল ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন। এ দেশে ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ বিকাশরা আইন অনুযায়ী মুক্তি পায়! আর মির্জা ফখরুল উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়েও আরেক মামলায় গ্রেপ্তার থাকেন। এসব ঘটনা সবই এক সূত্রে বাঁধা, কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। রাষ্ট্র এখন দানবের ভূমিকায়, আর জনগণ মজলুম।
কামাল: আইনের শাসনের অভাবে আমরা অনেক আতঙ্কে আছি। সুষ্ঠু ও নিরাপদে বাঁচার আশা কি সোনার বাংলায় দুরাশাই রয়ে যাবে। আজব আমরা, টাকাপয়সা আর দলবাজির জন্য সব জলাঞ্জলি দিয়েছি। এ রকম একটা জনপদে মানুষ সুযোগ পেলেই দেশ ছেড়ে পালাবে, টাকা পাচার করবে, ছেলেপুলে বিদেশে পাঠিয়ে নিশ্চিন্ত হতে চাইবে—এটাই স্বাভাবিক। আমরা কি আমাদের জন্মভূমিকে আমাদের জন্য ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নিরাপদ করতে কিছুই করতে পারি না?

জ্বালানি তেলের দাম আবারও বাড়ল
জ্বালানি তেলের দাম এক ধাক্কায় অনেকটা বাড়িয়ে দেওয়া হলো গত বৃহস্পতিবার রাতে। এ সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে ইসলাম লিখেছেন: আবারও জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। এই মূল্যবৃদ্ধি দ্রব্যমূল্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং মানুষের কষ্টও বেড়ে যাবে। সরকার জনস্বার্থের কথা চিন্তা না করেই কি এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে? এই সরকার যখন দায়িত্ব গ্রহণ করে, তখন ডিজেল ও কেরোসিন ৪৬, পেট্রল ৭৪ ও অকটেনের দাম ছিল প্রতি লিটার ৭৭ টাকা করে। তারা ক্ষমতায় আসার পর প্রথম মাসেই (১২ জানুয়ারি, ২০০৯) ডিজেল ও কেরোসিনের দাম দুই টাকা কমানো হয়। ২০০৯ ও ২০১০ সালে তেলের দাম না বাড়লেও ২০১১ সালে চার দফা দাম বাড়ে। ওই বছরে ৬ মে লিটারপ্রতি ডিজেল, কেরোসিন, পেট্রল, অকটেন ও ফার্নেস অয়েলের দাম দুই টাকা করে বাড়ানো হয়। একই বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর প্রধান চার জ্বালানি তেল লিটারে পাঁচ টাকা এবং ফার্নেস অয়েল আট টাকা বাড়ে। ১০ নভেম্বর প্রধান পাঁচ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম পাঁচ টাকা করে বাড়ানো হয়। সর্বশেষ, ২০১১ সালের ৩০ ডিসেম্বর, এসব তেলের দাম একই হারে বাড়ানো হয়। আর এখন নতুন করে পেট্রল ও অকটেনের দাম লিটারে পাঁচ টাকা এবং ডিজেল ও কেরোসিনে লিটারে সাত টাকা করে দাম বাড়ানো হয়েছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট হরতাল দেবে বলে আগেই ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু হরতাল দিলে কি, আর না দিলেই বা কি! সরকার কি তেলের দাম কমাবে? আর বিরোধী দল এত ভালো ইস্যু কাজে লাগিয়ে জনসমর্থন বাড়ানোর চেষ্টা করবেই। কিন্তু আমজনতার কী হবে?
আহসান: সরকার যেভাবে আইএমএফের মাত্র ১০০ কোটি ডলার ঋণ পাওয়ার জন্য সাধারণ মানুষ ও কৃষকের ঘরে আগুন দিল, এটা মানবিক পর্যায়ে আর থাকল না। এখন আর আমাদের অর্থনীতি দুর্বল নয়, আমাদের রিজার্ভের মেরুদণ্ড শক্ত আছে। প্রতি মাসে আমরা প্রবাসীরা বিপুল পরিমাণ ডলার দেশে পাঠাই। তার তুলনায় ১০০ কোটি ডলার কিছুই না। এমনিতেই কৃষক তাঁর ফসলের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। এমতাবস্থায় ডিজেল-কেরোসিনের দাম বাড়ানো মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো হলো। সরকারকে শুধু ডিজেল-কেরোসিনের জন্য ভর্তুকি দিতে হয়, যা ব্যবহার করে গ্রামের সাধারণ মানুষ আর ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। তেলের দাম বাড়ানোর প্রভাব এখন সারা দেশের সব সেবামূলক খাত বা পণ্যের দামের গতিশীলতাকে ত্বরান্বিত করবে। তবে আশার কথা, এর সুফল আগামী নির্বাচনে দেখতে পারবে সরকার!
আলামিন: এই সরকারের আমলে এ নিয়ে পাঁচবার জ্বালানি তেলের দাম বাড়ল! জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে সরকার জনগণের জীবনকে গজবে পরিণত করেছে। একটা দেশে নির্বাহী আদেশে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে পারে না, যদি গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় থাকে। সে ক্ষেত্রে সংসদে আলোচনা হলে দেশের নাগরিকেরা জানতে পারত।

আফ্রিকায় আলো ছড়াচ্ছেন মোস্তাক
তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে আফ্রিকার কয়েকটি দেশের চিত্র পাল্টে দিয়েছেন বাংলাদেশের সন্তান মোস্তাক আহমেদ। তাঁর সেই সাফল্যের কাহিনি পাঠকদের শুনিয়েছেন ইফতেখার মাহমুদ। মোস্তাকের এই সাফল্যের ব্যাপারে পাঠকেরা ছিলেন উচ্ছ্বসিত। পান্থ লিখেছেন: বাংলাদেশের তরুণসমাজকে তথ্যপ্রযুক্তির মন্ত্রে দীক্ষিত করে তুলতে হবে। তাদের বোঝাতে হবে, তাদের হাতে পিস্তল, চাপাতি, ছুরি, তরবারি শোভা পায় না। জীবনে আর্থিক সাফল্যসহ অন্যান্য সফলতা চাইলে তথ্যপ্রযুক্তির ছায়াতলে আসতে হবে। এ জন্য রাজনৈতিক দলের আজ্ঞাবহ হয়ে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, মারামারি, খুন, হল দখল—এসব করার দরকার নেই। যেকোনো বিষয়ে পড়ুয়া ছাত্রই প্রথম বর্ষ কেন, এসএসসি পাস করার পর থেকেই নিজের উদ্যম কাজে লাগিয়ে আউটসোর্সিং কাজের মাধ্যমে আয় করতে পারে। মোস্তাক এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এ রকম বহু তরুণ আজ নিজেকে এ পেশায় নিয়োজিত করছে এবং সাফল্য পাচ্ছে।
হূদয় ইসলাম: আমি মোস্তাক ভাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই। প্রথম আলোকে ধন্যবাদ জানাই খবরটি ছাপার জন্য। আমি জানতামই না এত বড় ব্যক্তি আমাদের দেশে আছেন। প্রথম আলোর কাছে আমার চাওয়া, বাংলাদেশ যাতে অর্থনীতিতে অনেক এগিয়ে যায়, সে জন্য যেন তারা কাজ করে; যারা অর্থনীতির উন্নয়নে কাজ করছে, তাদের পাশে দাঁড়ায়।
আজহারুল ইসলাম: এই আলোটা আমাদের দেশে কাজে লাগালে দেশ অনেক দূর এগিয়ে যেত নিঃসন্দেহে। কিন্তু আমাদের দেশের রাজনীতিবিদদের সেদিকে কোনো দৃষ্টি নেই। তাঁরা দুর্নীতি করে নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত। আমাদের দেশে মেধাবীদের মূল্যায়ন হয় না বলে তাঁরা দেশের বাইরে চলে যান।

আগামী নির্বাচনেও রিটার্নিং কর্মকর্তা হচ্ছেন ডিসিরা
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজস্ব কর্মকর্তাদের পরিবর্তে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা পদে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। প্রথম আলোয় এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর শফিকুর রহমান লিখেছেন: লক্ষণটা ভালো নয়। অতীত থেকে কেউ শিক্ষা নিতে চায় না। বিএনপি তো এভাবে সব জায়গায় তাদের দলীয় লোক বসিয়ে ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিল। কিন্তু সেই একগুঁয়েমির কী পরিণতি হয়েছিল, তা সবাই জানে। বর্তমান নিবাচন কমিশন কি ক্ষমতাসীন দলের অনুগত হয়ে যাচ্ছে? আমাদের দেশের আমলা ও রাজনীতিবিদেরা মনে হয় প্রতিজ্ঞা করে বসে থাকেন, যেকোনোভাবে সমস্যা তৈরি করবেনই তাঁরা। দলীয় অনুগত ডিসি ও ইউএনওর মাধ্যমে নির্বাচনের চেষ্টা মানে আবার জ্বালাও-পোড়ায়, হরতাল ও আন্দোলন। একমাত্র সংবাদমাধ্যমের শক্ত ভূমিকার মাধ্যমেই অবস্থার পরিবর্তন আশা করা যায়।
মহিউদ্দিন মাসউদ: সময়ের চাহিদা ও পরিবর্তন মনে রেখে কাজ এগিয়ে নিলে ইতিবাচক গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হবে, নয়তো সংকট অনিবার্য। বর্তমানে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সুযোগ আর নেই। সুতরাং সময় থাকতে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া সংশ্লিষ্ট মহলের জন্য এবং দেশের জন্য মঙ্গল।

(পাঠকের মতামত বিস্তারিত পড়তে ও আপনার মতামত জানাতে ভিজিট করুন prothom-alo.com)

No comments

Powered by Blogger.