পাবনায় শ্রেণীকক্ষে শিক্ষিকা খুন

পাবনার আতাইকুলায় প্রকাশ্য দিবালোকে স্কুল ক্যাম্পাসে একজন শিক্ষিকাকে খুনের ঘটনায় পুরো এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল রবিবার সকালে থানার ভায়নাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা আরিফা খাতুনকে (২৭) এক সন্ত্রাসী শ্রেণীকক্ষে ঢুকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে খুন করে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সাঁথিয়া উপজেলার আলমগীর হোসেনের স্ত্রী আরিফা খাতুন তিন বছর ধরে আতাইকুলা থানার ভুলবাড়িয়া ইউনিয়নের ভায়নাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি স্বামীর সঙ্গে সাঁথিয়া উপজেলা পরিষদের ক্যাম্পাসে একটি বাড়িতে থাকতেন। অন্যান্য দিনের মতো গতকাল সকালে তিনি সাঁথিয়া থেকে একটি ইঞ্জিনচালিত করিমনে চড়ে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্কুলে আসেন। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবক (৩০) শ্রেণীকক্ষে অতর্কিতে ঢুকে তাঁকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে খুন করে।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক শরিফুল ইসলাম বলেন, ''স্কুলের চারজন শিক্ষকের মধ্যে দুজন ছুটিতে থাকায় আমি ও আরিফা স্কুল চালাচ্ছিলাম। প্রতিদিন স্কুলে এসে আরিফা খাতুন স্বাভাবিক থাকলেও গতকাল আসার পর থেকেই তিনি অত্যন্ত বিমর্ষ ছিলেন। এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে আরিফা বলেন, 'আমার কিছু হয়নি, শরীরটা খারাপ, তাই মন ভালো নেই।' দুপুর ১২টার দিকে নিচের ক্লাসের ছুটি হয়ে যায়। সাড়ে ১২টার দিকে ক্লাস থ্রিসহ অন্যান্য ক্লাস শুরু হওয়ার কথা। ১২টা ১০ মিনিটের দিকে আরিফা একটি শ্রেণীকক্ষে টেবিলে মাথা নিচু করে বসে থাকার সময় ওই দুর্বৃত্ত ক্লাসে ঢুকে তাঁকে চাপাতি দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ফেলে রেখে যায়।''
প্রধান শিক্ষক শরিফুল জানান, আরিফার চিৎকার শুনে দৌড়ে ক্লাসে এসে মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়দের সহায়তায় তাঁকে সাঁথিয়া হাসপাতালে পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। হাসপাতালে যাওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়।
পাবনার পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর বলেন, 'প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে বিবাহপূর্ব প্রেমের কোনো ঘটনা এই হত্যাকাণ্ডের কারণ হতে পারে।' তিনি বলেন, ঘটনার পরপরই অনুসন্ধান করে জেনেছেন, গতকাল সকালে আরিফা এবং হত্যাকারী ওই যুবক এলাকার হারানের ছেলে রবিউলের করিমনে চড়ে স্কুলে আসে। স্কুলে আসার পর থেকে আরিফা চিন্তিত ছিলেন। আরিফা স্কুলে ঢোকার পর থেকে ওই যুবক এলাকায় উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘোরাফেরা করছিল। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ওই যুবককে স্কুল থেকে তড়িঘড়ি বের হয়ে রবিউলের করিমনে চড়ে দ্রুত চলে যেতে দেখেছে এলাকাবাসী। পুলিশ গতকালই করিমন চালককে গ্রেপ্তার করেছে।
আরিফার বাবার বাড়ি সিরাজগঞ্জের কাজীপুরে। ২০০৭ সালে জুলাই মাসে তিনি ওই
স্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। পুলিশ সুপার জানান, গত ডিসেম্বর মাসে আরিফার বিয়ে হয় স্কুলশিক্ষক আলমগীর হোসেনের সঙ্গে। তিন মাস আগে বিয়ে হলেও বিয়ের পর থেকে আরিফা তাঁর স্বামীকে প্রায়ই বলতেন, 'আমি বোধহয় বেশি দিন বাঁচব না।' এ কথা বলার কারণ জানতে চাইলে তিনি কখনো কোনো উত্তর দিতে পারেনি বলে তাঁর স্বামী আলমগীর হোসেন পুলিশকে জানিয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.