বাংলাদেশ-মিয়ানমার ঐকমত্য

সমুদ্রসীমা নির্ধারণের ব্যাপারে বাংলাদেশ-মিয়ানমার ঐকমত্য হয়েছে। গত শনিবার চট্টগ্রামে হোটেল আগ্রাবাদে দুদিনব্যাপী দ্বিপৰীয় বৈঠক থেকে উভয়পৰ এ কথা জানিয়েছে।
প্রথম বৈঠকে ঐকমত্য ও শুভ সূচনার আলোকে আগামী এপ্রিলে মিয়ানমারে দুপৰ আবার বৈঠকে বসবে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতা বলেছেন, মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমার বিরোধ বিষয়ে জাতিসংঘে বাংলাদেশের সালিশী অভিযোগ প্রক্রিয়া আপন নিয়মে চলবে। পাশাপাশি দ্বিপৰীয় আলোচনাও চলবে। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, সমদূরত্ব ও ন্যায্যভিত্তিক_ এই দুই পদ্ধতির সমন্বয় কীভাবে করা হবে তা নিয়ে পরবতর্ী দ্বিপৰীয় বৈঠকে আলোচনা হবে। সমুদ্রসীমা নির্ধারণের মধ্যে এই দুটি নিকট প্রতিবেশীর মধ্যে ঐকমত্য নিঃসন্দেহে দুটি দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে গুরম্নত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশ সবসময় চেয়েছে, শানত্মিপূর্ণভাবে মিয়ানমারসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সব বিরোধের নিষ্পত্তি করতে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশের সমুদ্রসীমায় বিভিন্ন অজুহাতে মিয়ানমারের অনুপ্রবেশের ঘটনাকে সরকার জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে মনে করে। ইতোপূর্বে কয়েক বছর ধরে মিয়ানমার বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার কিছু অংশ নিজেদের বলে দাবি করে আসছে। বঙ্গোপসাগরে খনিজ ও প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর অধিকার প্রতিষ্ঠার বিষয়টি ছাড়াও এর সঙ্গে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন জড়িত।
এই অবস্থায় মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সংঘাত কোনদিনই কাম্য নয়। বাংলাদেশ সর্বদা বিশ্বাস করে এসেছে, সব সময় শানত্মিপূর্ণ আলোচনা ও কূটনীতির মাধ্যমে যে কোন আঞ্চলিক বা আনত্মর্জাতিক সমস্যার সমাধান সম্ভব। জাতীয় নিরাপত্তা সুসংহত করা এবং বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা এই পথেই সম্ভব। গত ২০০৮ সালের অক্টোবর-নবেম্বর মাসে মিয়ানমার বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় নৌবাহিনীর জাহাজ পাঠায় এবং তেল-গ্যাস উত্তোলন সংক্রানত্ম জরিপ পরিচালনা করে। সে বছরেই তারা বাংলাদেশের বৈধ সমুদ্রসীমার একটি বড় এলাকা নিজেদের বলে দাবি উত্থাপন করে।
সমুদ্রসীমা নির্ধারণের বিষয়ে বাংলাদেশ-মিয়ানমার ঐকমত্য দুদেশের মধ্যে সহযোগিতা ও সম্পর্কোন্নয়নের ৰেত্রে সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রাখবে। দুটি দেশই উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে পরিচিত এবং দুটি দেশেরই অভিন্ন নানা সমস্যা রয়েছে। দারিদ্র্য, অশিৰা, স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে নিজেদের মুক্তির লৰ্যে তারা একে অপরকে সহযোগিতা করতে পারে।
মিয়ানমারের রয়েছে অব্যবহৃত বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদ। অপরদিকে বাংলাদেশের আছে জনসম্পদ। সুতরাং দুটি দেশই উন্নয়নের জন্য একে অপরের সম্পূরক হতে পারে। সড়ক ও রেলযোগাযোগ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের জনগণ সমানভাবে উপকৃত হবে। বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সরকারের উচিত, দুটি দেশের জনগণের মধ্যে যাতায়াত বৃদ্ধির লৰ্যে ভিসা ব্যবস্থা শিথিল করা। তবে সবার আগে দরকার রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান। সমুদ্রসীমা নির্ধারণের বিষয়ে দুটি দেশের মধ্যকার ঐকমত্য এ অঞ্চলে শানত্মি প্রতিষ্ঠায় নিঃসন্দেহে গুরম্নত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

No comments

Powered by Blogger.