ঝিনাইদহে অপহৃত ঢাকার বিএনপি নেতার লাশ কুষ্টিয়ায় উদ্ধার

র‌্যাব পরিচয়ে ঝিনাইদহের শৈলকুপা থেকে অপহৃত বিএনপি নেতার লাশ কুষ্টিয়ার কুমারখালী থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ সময় তাঁর হাতে পুলিশ লিখা হ্যান্ডকাফ লাগানো ছিল। লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
নিহতের নাম রফিকুল ইসলাম মজুমদার (৪৬)। তিনি ঢাকার ৫৬ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও বঙ্গবাজার মার্কেট কমিটির সহ-সভাপতি।
শনিবার রাত ১১টার দিকে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার আদাবাড়িয়ায় একটি খালের পাশ থেকে হ্যান্ডকাফ লাগানো ও গলায় মাফলার দিয়ে ফাঁস দেয়া লাশ উদ্ধার করে কুমারখালী থানা পুলিশ। পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শৈলকুপার আনন্দনগর গ্রামের শ্বশুরবাড়ি থেকে রফিকুলকে র‌্যাব পরিচয়ে কালো পোশাকধারী ৬/৭ জন লোক সাদা রঙের একটি মাইক্রোবাসে করে তাঁকে তুলে নিয়ে যায়। এদিকে রবিবার সকালে কুমারখালী থানায় এসে রফিকুলের লাশ শনাক্ত করেন তাঁর স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকাসহ স্বজনেরা।
স্বজনেরা জানান, ঢাকার যাত্রাবাড়ী শনির আখড়ার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম মাজুমদার চাঁদপুরের জনৈক মনিরুজ্জামানের ছেলে। শুক্রবার রাতে তিনি সাভারের নিজ ফ্যাক্টরি থেকে ব্যবসায়িক কাজ শেষ করে শৈলকুপার আনন্দনগর গ্রামে তাঁর শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে আসেন। শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সাদা রঙের একটি মাইক্রোবাস এসে রফিকুলের শ্বশুরবাড়ির সামনে থামে। পরে ওই গাড়ি থেকে কালো পোশাক পরিহিত অস্ত্রধারী ৬/৭ জন লোক এসে নিজেদের র‌্যাব পরিচয় দিয়ে রফিকুলকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তাঁর কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। ওই রাতে কুমারখালী উপজেলার আদাবাড়িয়ায় একটি খালের পাশ থেকে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
রফিকুল ইসলামের শ্যালিকার স্বামী আবু সাঈদ দাবি করেন, মাইক্রোবাসে করে আসা প্রত্যেকের হাতে অস্ত্র ও পরনে কালো পোশাক এবং তাতে ‘র‌্যাব’ লেখা ছিল। মাইক্রোবাসের সামনেও র‌্যাব লেখা স্টিকার ছিল। স্ত্রী দাবি করেছেন, রফিকুলের কাছে ১৮ লাখ টাকা ছিল। ঝিনাইদহে বাড়ি কেনার জন্য তিনি সেই টাকা নিয়ে এসেছিলেন। কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী নেওয়াজ জানান, কুমারখালীর বাগুলাট ইউনিয়নের আদাবাড়িয়া খালের পাশে একটি লাশ পড়ে থাকার খবর পেয়ে রাত ১১টার দিকে লাশটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়। লাশের দুই হাতে হ্যান্ডকাফ পরা ও গলায় লাল রঙের মাফলার জড়ানো ছিল।
এ ব্যাপারে র‌্যাব-৬ ঝিনাইদহ ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার হামিদুল হক র‌্যাব কর্তৃক রফিকুলকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে জনকণ্ঠকে বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে ঝিনাইদহ র‌্যাবের কোন সম্পৃক্ততা নেই এবং শনিবার রাতে শৈলকুপার ওই এলাকায় তাদের কোন অভিযান পরিচালিত হয়নি। র‌্যাব পরিচয়ে অপহরণের এ খবর পেয়ে ওই রাতেই সেখানে একটি অনুসন্ধান টিম পাঠানো হয়। তিনি জানান, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। র‌্যাবের কয়েকটি টিম এ ব্যাপারে অনুসন্ধান কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
র‌্যাব-১২ কুষ্টিয়া ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার ক্যাপ্টেন মোসাদ্দেক ইবনে মুজিব জানান, লাশটি যদিও কুষ্টিয়ায় পাওয়া গেছে কিন্তু ঘটনাটি ঝিনাইদহ ক্যাম্প এলাকার। এদিকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে রবিবার সকালে রফিকুল মজুমদারে লাশ নিয়ে গেছে স্বজনেরা। এ ব্যাপরে কুমারখালী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জয়নুল আবেদীন বলেন, বাজারে ‘পুলিশ’ লেখা হাতকড়া পাওয়া যায়। ধারণা করা হচ্ছে, সন্ত্রাসীরা এ সুযোগটা কাজে লাগিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.