বাফুফের ভাবনায় জাতীয় দল

একটা দেশের ফুটবলের প্রতিচ্ছবি জাতীয় দল। বাংলাদেশে তো জাতীয় দলের পারফরম্যান্সই হয়ে ওঠে ফেডারেশনের সাফল্য-ব্যর্থতার মানদণ্ড। জাতীয় দল ভালো না করলে সব রসাতলে যাচ্ছে—মোটা দাগে ধারণাটা এমনই।
সাম্প্রতিক সময়ে কাজী সালাউদ্দিনও এটা বলছেন। বাফুফে সভাপতির চেয়ারে প্রথম মেয়াদে ঢাকার ফুটবল নিয়মিত রাখতেই বেশি কাজ করেছেন। তবে গত এপ্রিলে দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হওয়ার পর তাঁর নানামুখী উদ্যোগের অগ্রাধিকার তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে জাতীয় দল।
২০২২ কাতার বিশ্বকাপে খেলার আপাত-অসম্ভব লক্ষ্য সামনে নিয়ে এখন এটি নিয়েই ছুটতে হবে। জাতীয় দলের নতুন দুই ডাচ কোচের আজই ঢাকায় আগমন হবে ওই পথের দিকেই প্রথম পা ফেলা। দুই কোচের সঙ্গে সম্ভাব্য প্রাথমিক চুক্তিটা হবে ৭-৮ কোটি টাকার।
সালাউদ্দিন সেদিন রসিকতা করে বলছিলেন, ‘আমি লন্ডনে দুই কোচের সঙ্গে চূড়ান্ত আলোচনা করার পর আমার ছেলে আমাকে জিজ্ঞাসা করেছে, দামি কোচ নিচ্ছ, টাকা আছে তো? আমি বললাম, টাকা তো নেই। সে শুনে বলল, এই জন্যই তো তোমার মাথার চুল পেকে গেছে (হাসি)।’
বাফুফের হাতে টাকা আসলেই নেই। কোত্থেকে এত টাকা আসবে, কীভাবে কী হবে, কেউ জানে না। মানুষটা সালাউদ্দিন বলেই সাহস করছেন। ‘টাকা ভূতে জোগাবে’ বলে জাতীয় দল নিয়ে এত বড় কর্মপরিকল্পনা নিয়েছেন।
এ বছর জাতীয় দলের সামনে এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্ট রয়েছে দুটি। মার্চের গোড়ায় নেপালে এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপ। সেপ্টেম্বরে নেপালেই সাফ ফুটবল। কয়েকটি প্রীতি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাওয়া যাবে সামনে। শিগগিরই ঢাকায় প্রীতি ম্যাচ খেলতে আসতে পারে নেপাল, থাইল্যান্ড, ভারত ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
তবে সালাউদ্দিনের স্বপ্নটা আরও বড়, ‘এ বছরই একটা জাতীয় দল নিয়ে একটা আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট করতে চাই। নইলে ক্লাব টুর্নামেন্ট। বঙ্গবন্ধু কাপ, প্রেসিডেন্টস কাপ যে নামেই হোক সাফের পর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, আগেও হতে পারে। সবই করব একটা শক্তিশালী জাতীয় দল গড়তে।’
প্রসঙ্গত, গত বছর নেপাল, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার বিপক্ষে জাতীয় দলকে তিনটি প্রীতি ম্যাচ খেলার সুযোগ করে দেওয়া ছিল বিরাট এক সাফল্য। অথচ গত বছরটা আন্তর্জাতিক ম্যাচবিহীনই কেটে যাচ্ছিল বাংলাদেশের। ফিফা-এফসির ম্যাচ ছিল না। তিনটি প্রীতি ম্যাচ খেলায় রক্ষা।
বাংলাদেশে ঘরোয়া ফুটবল দর্শক পায় না, অথচ জাতীয় দলের খবর সবাই রাখে। তাই সবার মনোযোগ পেতে জাতীয় দলের ভালো পারফরম্যান্স খুব দরকার। সেজন্য বাফুফে সভাপতি অবশ্যই পরিকল্পনা সাজাবেন। তবে মাঠে খেলতে হবে ফুটবলারদের। সেই ফুটবলারদের সঙ্গেও সালাউদ্দিন শিগগিরই বসছেন বলে জানিয়েছেন।
বাফুফের আগের জাতীয় দল ব্যবস্থাপনা কমিটি কিছু প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়েছিল। যেমন খেলোয়াড়দের জন্য বিমা, বোনাস চালু করা। একটা জিমনেসিয়াম করার কথাও হয়েছিল, যদিও তা হয়নি। ‘টাকার অভাবে’ বিমা বন্ধ হয়ে যায়। বোনাসের ব্যাপারটাও ঢেকে যায় আড়ালে। এসব শুধু ফিরিয়ে আনাই নয়, সালাউদ্দিন খেলোয়াড়দের আনতে চান বেতনকাঠামোর মধ্যে, ‘স্পনসর আনার চেষ্টা করছি। বড় স্পনসর পেলে প্রয়োজনে মাসে দুই লাখ টাকা করে ১৫ জন খেলোয়াড়কে বেতন দেব। তাহলে খেলোয়াড়দের কাছ থেকে ভালো কিছু দাবি করতে পারব। এসব দিকে খুব গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি আমি।’
আগের মতো গতানুগতিক জাতীয় দল কমিটি নয়, এবার কার্যকর একটি জাতীয় দল কমিটি গড়া হচ্ছে। এটির চেয়ারম্যান কাজী নাবিল আহমেদ যথেষ্ট উদ্যমী। পুনর্গঠিত কমিটির চার সদস্যের দুজনের নাম ঠিক হয়েছে গতকালই—আনোয়ারুল হক হেলাল ও তাবিথ আউয়াল।
জাতীয় দলের জন্য ভালো কিছু করার অঙ্গীকার থেকেই এই পরিবর্তন। আগে কখনোই এমন উদ্যোগ ছিল না।

No comments

Powered by Blogger.