জ্যোতি আসল নাম প্রকাশ করলেন ‘ভারতকন্যা’র বাবা

 অবশেষে ‘ভারতকন্যা’র আসল নাম প্রকাশ করলেন বাবা বদ্রি সিং পা-ে। তাঁর মতে, প্রতীকী নামের বদলে মেয়ের আসল নামই সমাজের নির্যাতিত নারীদের সাহসী হয়ে ওঠার শক্তি যোগাবে।
৫৩ বছর বয়সী বদ্রি সিং পা-ন্ডে জানিয়েছেন, তাঁর কন্যার নাম জ্যোতি সিং পা-ন্ডে। যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যমে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বদ্রি সিং বলেন, “এতদিন ধরে আমার মেয়ে ‘ভারতকন্যা’, ‘দামিনী’, ‘আমানত’ কিংবা ‘ব্রেভহার্ট’ নামে পরিচিত ছিল। কিন্তু এ প্রতীকী নামগুলো তার সাহসকে অস্বীকার করার মতো।” রবিবার প্রকাশিত ঐ সাক্ষাতকারে জ্যোতির বাবা বলেন, ‘তাঁর এই সাহসী নামটি হাজার বছর ধরে পাশবিকতার শিকার অসংখ্য নারীর মনে সংগ্রাম করে বাঁচার উৎসাহ যোগাবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার মেয়ে কোন ভুল করেনি, নিজেকে বাঁচানোর জন্য শেষ পর্যন্ত সংগ্রাম করে মৃত্যুবরণ করেছে সে।’ জ্যোতির মতো কন্যার পিতা হতে পারা অত্যন্ত গর্বের উল্লেখ করে বদ্রি সিং বলেন, ‘যেসব নারী সমাজের অনাচারের শিকার হয়ে বাঁচার ইচ্ছে হারিয়ে ফেলেছে, কন্যার সাহস থেকে ওরা বাঁচার জন্য মানসিক শক্তি অর্জন করবে।’
উত্তর প্রদেশের বিলিয়া গ্রামে নিজ বাড়িতে এ সাক্ষাতকার দেন তিনি। আশা করেন, অভিযুক্তরা শীঘ্রই ফাঁসিতে ঝুলবে।
তবে, সেই রাতে বাসে ঠিক কী ঘটেছিল তা এখনও পরিষ্কার জানতে পারেননি বলে জানান বদ্রি সিং।
বাবার অনুমতিক্রমে ভারতকন্যার নাম প্রকাশ করলেও পরিবারের অনুরোধে এখনও মেয়েটির ছবি প্রকাশ করেনি সংবাদ মাধ্যম। এছাড়া বিশেষ সাক্ষাতকারের সময় জ্যোতির পরিবারের প্রায় সব সদস্যের সঙ্গে কথা বললেও মা আশার কোন বক্তব্য নেয়া যায়নি। মারাত্মক মানসিক আঘাতে ৪৬ বছর বয়সী জ্যোতির মা প্রায় বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন বলে জানা যায়।
এর আগে ভারতের লাখো জনতার সঙ্গে একাত্ম হয়ে বদ্রি সিং বলেছিলেন, ‘ধর্ষণবিরোধী আইনটি মেয়ের সম্মানার্থে তার নামেই প্রণয়ন করা হোক।’
উল্লেখ্য, গত ১৬ ডিসেম্বর রাতে ৬ পাষণ্ডের নির্মম নির্যাতনের শিকার হন জ্যোতি সিং পান্ডে ও তাঁর বন্ধু অবিন্দ পা-ে। দু’সপ্তাহের বাঁচা-মরার লড়াই শেষে ২৯ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে মারা যান জ্যোতি।
এ ঘটনায় ভারতজুড়ে তীব্র প্রতিবাদ বিক্ষোভ শুরু হয়।
ইতোমধ্যে অভিযুক্ত ৬ জনকে গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে। ৫ জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যা মামলা দায়ের করে বৃহস্পতিবার ১ হাজার পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।
বয়সে কিশোর হওয়ায় ধর্ষণ ও হত্যা মামলা থেকে বাদ পড়ে ষষ্ঠ ব্যক্তি। তবে তাকে কিশোর বিচার আইনের মুখোমুখি করা হয়েছে। শনিবার প্রাথমিক শুনানি শেষে অভিযুক্ত পাঁচজনকে সোমবার (৭ জানুয়ারি) আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এর আগে শুক্রবার রাতে সংবাদ মাধ্যমের কাছে প্রথম মুখ খোলেন জ্যোতির বন্ধু অবিন্দ। তিনি জ্যোতির মৃত্যুর জন্য পথচারী ও পুলিশের অবহেলা ও সময়ক্ষেপণকে দায়ী করেন।

No comments

Powered by Blogger.