নতুন দিন নতুন স্বপ্ন by সাবিয়া ইয়াসমিন

লিখন, শাহীন, রাফিদ, ঝুমা ও সাথী পাঁচ বন্ধু। কলেজ জীবন থেকে বন্ধুত্বের হাত ধরে তাদের এক সঙ্গে পথচলা। আড্ডা, তর্ক আর খুনসুটি করে বেশ কাটত তাদের সময়। কিন্তু বিপত্তি হয় একদিন। হালকা রসিকতার জের ধরে শাহীন ও ঝুমা তর্কে লেগে যায়।
সামান্য বিষয়ে তর্ক থেকে শুরু হয়ে যায় ঝগড়া। এক সময় দু’জনার কথা বলা হয় বন্ধ। এমনকি মুখ দেখাদেখি পর্যন্তও বন্ধুরা অনেক চেষ্টা করেছে দু’জনার সম্পর্কটাকে সহজ করে দিতে। কিন্তু শাহীন ও ঝুমার মান অভিমানের কাছে তাদের সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়। এক পর্যায়ে বন্ধুরাও চেষ্টা করা ছেড়ে দেয়। নতুন বছরের শুরুতে নতুন করে পথ চলার ইচ্ছাই যেন আবারও কাছে টেনে আনে তাদের। রাগ ক্ষোভ আর মান ও অভিমান ভুলে বন্ধু ঐশীর ডাকে সাড়া দেয় রাফিদ। বছরের প্রথম দিনেই পুরনো কষ্ট ভুলে নতুন করে পথচলার শপথ নেয়। বন্ধুরা সকলেই এতেই খুশি হয়। ঐশী ও লিখনের মতো আপনিও সব কিছু শুরু করতে পারেন নতুন করে। ভাবতে পারেন নতুন কোন ভাবনা। জীবনটাকে নতুন করে গুছিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করতে পারেন। শুধু বন্ধুত্বের সম্পর্কেই নয় যে কোন ধরনের সম্পর্কের ক্ষেত্রেই ভুলত্রুটি হতে পারে। হতে পারে মান অভিমান। সামান্য ভুল বোঝাবুঝি থেকেই হয়ত সৃষ্টি হতে পারে মানসিক ও আত্মিক দূরত্ব। পুরনো দিনের ভুলত্রুটি আর অভিমানগুলোকে ঝেড়ে ফেলে নতুন করে শুরু করুন। ঘরে কিংবা বাইরে, বন্ধু কিংবা পরিবারে সূচনা করুন নতুন দিনের।
শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী সকলেই ভাবতে পারেন নতুন করে। শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ায় সাফল্যের জন্য নতুন করে পড়ালেখার ছক তৈরি করতে পারেন। বিগত দিনগুলোর সাফল্যের কথা মনে করে উজ্জীবিত হতে পারেন। আবার ব্যর্থতাকে মুছে ফেলার আত্মপ্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চিন্তা করতে পারেন। আবার অনেকেই হয়ত লেখাপড়া শেষ করে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তারাও নিজেকে প্রস্তুত করতে নতুন উদ্যমে চেষ্টা করতে পারেন। পছন্দের পেশা নির্বাচনে নিজেকে নতুন করে তৈরি করে নিতে পারেন। কর্মজীবী অনেকেই হয়ত সময়ের অভাবে অনেক কাজ করতে পারেন না বিগত দিনের ফেলে রাখা এসব কাজ করার চেষ্টা করতে পারেন। পরিবারের প্রতি দায়িত্ব পালনে হতে পারেন আরও একটু সচেষ্ট। এতে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আন্তরিকতা বাড়বে। বাড়বে হৃদ্য। বাবা মা ভাই বোনের সঙ্গে মানসিক দূরত্ব কমবে। পরিবারে আপনার গ্রহণযোগ্যতাও বাড়বে।
আমাদের অনেকেরই হয়ত অনেক বদঅভ্যাস রয়েছে। নতুন বছরে আমরা এ সকল বদঅভ্যাস দূর করার শপথ করতে পারি। এ জন্য পরিকল্পনা ও সদিচ্ছাই যথেষ্ট। একটু একটু করে নিজেকে বদলানোর চেষ্টা করতে পারি। নিজেকে বদলানোর পাশাপাশি অন্যদেরকেও এতে উদ্বুদ্ধ করা যায়। আমাদের ব্যক্তি জীবনের সু-অভ্যাসগুলো সমাজ জীবনেও অনুশীলন করার চেষ্টা করা উচিত। পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করতে এর কোন বিকল্প নেই। শুধু নিজের উন্নতি নয় সমাজের উন্নতির জন্য চেষ্টা করতে হবে। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে আমাদের চিন্তা-চেতনায় আনতে হবে পরিবর্তন। তাই পুরনো আঁকড়ে ধরে নয় বরং নতুন করে ভাবতে হবে।
কর্মক্ষেত্রের সাফল্য অর্জনের জন্য নতুন করে কর্মপরিকল্পনা করতে পারেন। কাজের উপযোগী পরিবেশ না থাকলে তা তৈরি করতে সচেষ্ট হতে পারেন। সহকর্মীদের সাহায্য করুন সাধ্যমতো। প্রতিযোগী না ভেবে সহযোগী ভাবুন। তাহলে তৈরি হবে কাজের পরিবেশ। সহকর্মী ও উর্ধতন শ্রেণীর সঙ্গে সহনশীল আচরণ করুন। এতে কাজে সাফল্য আসবে। ব্যর্থতা নয় সাফল্যের জয়গানে মুখরিত হবে জীবন।
যে দিন যায় তা ফিরে আসে না কখনো। ফিরিয়ে আনা যায় না কোনভাবেই। তাই আমাদের প্রতিটি দিন সার্থক করার চেষ্টা করা উচিত। প্রতিনিয়তই ব্যর্থতা আর হতাশায় জীবনকে নষ্ট না করে বরং সাফল্য লাভের চেষ্টায় আত্মনিয়োগ করা উচিত। সে ক্ষেত্রে শুধু নিজেকে নিয়ে নয় সকলকে নিযে এগিয়ে যেতে হবে। সুন্দর ও আগামী পথে এগিয়ে যেতে হলে প্রয়োজন সুন্দর ভাবনা। আর নতুন বছরে সকলেরই কাছে নতুন দিনের সূচনা করতে পারে। যার যার কর্মক্ষেত্রে সাফল্য লাভের ঐকান্তিক ইচ্ছা ও প্রচেষ্টা সূচনা করতে নতুন দিনের। বিগত দিনের ব্যর্থতার কারণ খুঁজে বের করুন। এর থেকে ভবিষ্যতে কী করণীয় তা সহজেই অনুধাবন করতে পারবেন। নতুন কর্র্মপদ্ধতি ও কৌশল বেছে নিয়ে এগিয়ে যান সে লক্ষ্যে ধরে। সুন্দর ও আগামীর পথকে বেছে নিতে সুন্দর স্বপ্ন দেখার চেষ্টা করতে হবে আমাদের সকলকে।
এসেছে নতুন বছর। নতুন সম্ভাবনা আর স্বপ্ন নিয়ে। পুরনো ব্যর্থতা আর গ্লানি মুছে নতুন করে ভাবনার এই তো সময়। নতুনের ডাকে সাড়া দিতে আমাদের সকলেরই নিজেকে নতুনরূপে তৈরি করে নিতে হবে। অতীতের কষ্ট আর না পাওয়াকে ভুলে সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। তাই আসুন আমরা মুছে ফেলি সব ব্যর্থতা। পুরনো জীর্ণতা ভুলে নতুনের সন্ধানে উদ্ভাসিত হই সকলেই। শুরু করি নতুন দিন।
ছবি : আরিফ আহমেদ
কৃতজ্ঞতায় : আজিজুল হাকিম ও জিনাত হাকিম

No comments

Powered by Blogger.