ভারতে থাকা বঙ্গবন্ধুর দুই খুনী ও হুজি জঙ্গী ফেরত চাওয়া হচ্ছে

শংকর কুমার দে ভারতে অবস্থানরত বঙ্গবন্ধুর সাজাপ্রাপ্ত দু্ই খুনী, ২১ আগস্টের আসামি দুই সহোদর হুজির জঙ্গী, শীর্ষ সন্ত্রাসীদের ফেরত চাওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে বাংলাদেশ।
পৰানত্মরে বাংলাদেশের কাছে কারাগারে আটক উলফার সাধারণ সম্পাদক অনুপ চেটিয়া, মুম্বাইয়ের মাফিয়া ডন দাউদ ইব্রাহিমের দৰিণহসত্ম পরিচিত সন্ত্রাসী, লস্কর-ই-তৈয়বার সদস্যদের ফেরত চাইবে ভারত। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সন্ত্রাসবাদ দমনে সোমবার নয়াদিলস্নীতে এতদসংক্রানত্ম চুক্তি হওয়ার পর এক দেশ অপর দেশে আটক অপরাধী, সন্ত্রাসী, জঙ্গী, খুনীদের ফেরত চাওয়ার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং-এর মধ্যে সোমবার দিলস্নীর হায়দরাবাদ হাউসে অনুষ্ঠিত দ্বিপাৰিক বৈঠক শেষে তিনটি চুক্তি স্বাৰরিত হয়েছে। সাজাপ্রাপ্ত বন্দী বিনিময় চুক্তি, অপরাধ দমনে আইনী সহায়তা বিনিময় চুক্তি এবং আনত্মর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ, সংঘটিত অপরাধ ও অবৈধ মাদকদ্রব্য প্রতিরোধসংক্রানত্ম চুক্তি স্বাৰর হয়েছে। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের জানানো হয়েছে, কোন দেশের ভূখ-ই আর সন্ত্রাসবাদে ব্যবহৃত হতে দেয়া হবে না। বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে সন্ত্রাসবাদ দমনে তিনটি চুক্তি হওয়ায় দুই দেশের মধ্যে বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী দেশের সীমানা পেরিয়ে এক দেশের সন্ত্রাসী অন্য দেশে এসে আত্মগোপন করে অপরাধী কার্যক্রম চালাতে পারবে না।
বিএনপি-জামায়াত সরকারের সময়ে ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীকে ধরিয়ে দেয়ার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করার পর বেশিরভাগ শীর্ষ সন্ত্রাসী গোপনপথে সীমানত্ম পেরিয়ে ভারতে চলে যায়। অপরপৰে ভারত থেকে উলফার সদস্য, মুম্বাইয়ের মাফিয়া ডন দাউদ ইব্রাহিমের সন্ত্রাসী গ্রম্নপ, লস্কর-ই-তৈয়বার সদস্যরা পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। আত্মগোপনরত অবস্থায় এক দেশ থেকে অন্য দেশে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালাতে থাকে। বাংলাদেশ ও ভারতের ভূখ-ে অসংখ্য গ্রেনেড-বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে হামলা ও নাশকতা, অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার করে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ চালানো হয়।
বঙ্গবন্ধুর সাজাপ্রাপ্ত দুই খুনী ক্যাপ্টেন (অব) মাজেদ ও রিসালদার মোসলেমউদ্দিন পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার আসামি হরকত-উল-জিহাদের (হুজি) দুই সহোদর মোরসালিন ও মুত্তাকীন দিলস্নীর তিহার জেলে বন্দী আছে। পুরস্কার ঘোষিত শীর্ষ সন্ত্রাসী তানভিরম্নল ইসলাম জয়, সুব্রত বাইন, ডাকাত শহীদসহ অনেক সন্ত্রাসী আত্মগোপন করা অবস্থায় কলকাতা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে সে দেশের কারাগারে আটক আছে। কলকাতায় আটক আছে আওয়ামী লীগের এমপি টঙ্গীর আহ্সানউলস্নাহ মাস্টারের খুনীরাও। কলকাতায় আত্মগোপনরত শীর্ষ সন্ত্রাসীরা তাদের ক্যাডারদের মাধ্যমে ঢাকায় চাঁদাবাজি, খুন, সন্ত্রাসসহ আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চুক্তি হওয়ার পর সন্ত্রাসবাদী কর্মকা- বন্ধ হয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অপরদিকে বিএনপি-জামায়াত সরকারের সময়ে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার (ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব অসম) সদস্যরা রীতিমতো ঘাঁটি গেড়ে বসেছিল বাংলাদেশে। ব্যবসাবাণিজ্য, লেখাপড়া, বিয়ে, ঘরসংসার থেকে শুরম্ন করে সবকিছুই করেছে তারা। লস্কর-ই-তৈয়বার ভারত শাখার জঙ্গী ও মুম্বাইয়ের মাফিয়া ডন দাউদ ইব্রাহিমের ক্যাডাররা বাংলাদেশে এসে আত্মগোপন করেছে। বর্তমান সরকার ৰমতায় আসার পর উলফা, লস্কর-ই-তৈয়বা ও দাউদ ইব্রাহিমের সন্ত্রাসী-জঙ্গীরা ধরা পড়েছে। বিএনপি-জামায়াত সরকারের সময়ে সন্ত্রাসবাদ আশ্রয়-প্রশ্রয় পাওয়ায় দুই প্রতিবেশী বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ভেতরে ভেতরে সম্পর্কের বরফ জমতে থাকে। ভারত ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের কারাগারে আটক উলফার প্রথম সারির নেতা অনুপ চেটিয়াকে একাধিকবার ফেরত দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছে।
এলজিআরডি মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম গত শুক্রবার জাতীয় প্রেসকাবে এক আলোচনাসভায় বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে পাকিসত্মানের সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশারফ দ্বিতীয়বারের মতো ঢাকায় এসে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক থাকা উলফার প্রথম সারির নেতা অনুপ চেটিয়ার সঙ্গে ৫ তারকা একটি হোটেলে বৈঠক করেছেন। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে উলফা নেতা অনুপ চেটিয়াকে হোটেল শেরাটনে নিয়ে আসার পর তাদের মধ্যে প্রায় দেড় ঘণ্টা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় বলে তিনি আলোচনাসভায় উলেস্নখ করেন।
বর্তমান সরকার ৰমতায় আসার পর উলফার েেচয়ারম্যান অরবিন্দ রাজখোয়াসহ প্রায় এক ডজন প্রথম সারির উলফা নেতা পরিবার-পরিজন নিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগে বাধ্য করা হয়। ভারতের বিএসএফের হাতে উলফার নেতারা সপরিবারে আত্মসমর্পণে বাধ্য হওয়ায় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপনের শুভসূচনা হতে থাকে। তারপরই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিলস্নী সফররত অবস্থায় দুই দেশের মধ্যে সন্ত্রাসবাদ দমনের চুক্তি এক বিরাট সাফল্য বয়ে আনার বার্তা দিয়েছে।
পুলিশের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বঙ্গবন্ধুর দুই খুনী, দুই সহোদর হুজি জঙ্গী ও শীর্ষ সন্ত্রাসীদের ব্যাপারে ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের পৰ থেকে ইন্টারপোলের রেড কর্নার নোটিস দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চুক্তি হওয়ার পর এখন এসব সন্ত্রাসীকে ফেরত পাওয়ার কার্যক্রম শুরম্ন করব। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিলস্নী সফর শেষে ঢাকায় ফিরে আসার পর ভারতে অবস্থানরত সন্ত্রাসী, জঙ্গী ও বঙ্গবন্ধুর খুনীদের ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

No comments

Powered by Blogger.