নিরুত্তাপ হরতালে গাড়িতে আগুন ও ককটেল বিস্ফোরণ

সরকারের পঞ্চম বছরে বিরোধী দলের প্রথম হরতালটি গতকাল রোববার নিরুত্তাপভাবে পালিত হয়েছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা এই হরতালের ডাক দেয় বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট।
রাজধানীতে কয়েকটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ছাড়া মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবেই হরতাল পালিত হয়েছে। রাজধানীতে যানবাহন চলাচল কম ছিল। অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ ছিল। দূরপাল্লার কোনো যানবাহন চলাচল করেনি। তবে রেল চলাচল স্বাভাবিক ছিল। হরতালের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ভোর থেকেই কড়া নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
হরতাল চলাকালে রাজধানীর মিরপুরে একটি বাস, বাবুবাজারে একটি মাইক্রোবাস ও শাঁখারীবাজারে একটি প্রাইভেট কারে আগুন দেওয়া হয়। বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর করা হয় আরও কয়েকটি গাড়ি।
ঢাকা মহানগর পুলিশের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় মোট ১১টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ২৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
অবশ্য, হরতাল শেষে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের সমন্বয়ক তরিকুল ইসলাম জানান, গতকাল রাজধানীসহ সারা দেশে বিএনপির তিন শতাধিক নেতা-কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ ও র্যা ব। হরতালের সমর্থনে মিছিল বের করলে পুলিশের হামলায় দলের সাড়ে তিন শ নেতা-কর্মী আহত হন। এ ছাড়া জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামীর ৫৭ জনকে আটক করা হয়। বিভিন্ন স্থানে পুলিশের হামলায় দলটির ৩৮ জন নেতা-কর্মী আহত হন বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়।
সকাল ছয়টার দিকে তেজগাঁও কলেজের সামনে ছাত্রদলের কর্মীরা মিছিল বের করলে পুলিশের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। এ সময় কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এখানে পুলিশ দুজনকে আটক করে। পান্থপথ এলাকায় সকাল সাড়ে সাতটায় পুলিশের সঙ্গে হরতাল-সমর্থকদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। গুলশান লিংক রোডে হরতালের সমর্থনে ঝটিকা মিছিল বের হলে পুলিশ ধাওয়া দিয়ে তা ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী: সকাল সাতটায় যাত্রাবাড়ীতে হরতালের সমর্থনে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল পুলিশের ধাওয়ায় ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। সাড়ে সাতটার দিকে কুতুবখালীতে হরতালের সমর্থনে জামায়াত-শিবির একটি মিছিল বের করে। তারা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ওপর পুরোনো টায়ারে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে পুলিশ রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। সকাল সাড়ে ১০টায় ধোলাইপাড়ে যুবদলের একটি মিছিল পুলিশ পণ্ড করে দেয়।
মিরপুর: সকাল ছয়টার দিকে স্বেচ্ছাসেবক দলের একটি মিছিল থেকে মিরপুরের প্রশিকা ভবনের সামনে একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দ্রুত আগুন নিভিয়ে ফেলেন। একই সময়ে কাছাকাছি এলাকায় ছাত্রদল মিছিল বের করে। সেখানে পাঁচটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
সাড়ে ছয়টার দিকে মিরপুর ১ নম্বরের ঈদগাহ মাঠের সামনে দুটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।
ভোর সাড়ে পাঁচটায় কল্যাণপুর নতুন বাজারে ছাত্রশিবিরের মিছিল বের হয়। তারা দুটি গাড়ি ভাঙচুর করে।
পৌনে সাতটার দিকে মিরপুর গোলচত্বর ও অরিজিন্যাল ১০ নম্বরে ছাত্রদলের মিছিল থেকে দুটি যাত্রীবাহী বাস ভাঙচুর করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: সকাল পৌনে নয়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনের পাশে দুটি এবং কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি এলাকায় তিনটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। এ সময় সন্দেহভাজন হিসেবে জুলহাস উদ্দিন (২৪) নামের এক যুবককে শিক্ষার্থীরা ধরে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করেন।
বেলা সোয়া তিনটার দিকে মুহসীন হলের সামনে আরেকটি ককটেল বিস্ফোরিত হলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ক্যাম্পাসে মোটরবাইক দিয়ে টহল দেন। দুপুরে মধুর ক্যান্টিন থেকে হরতালবিরোধী মিছিল বের করে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে সমাবেশ করে ছাত্রলীগ।
পুরান ঢাকা: সকালে হরতালবিরোধী মিছিল করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। দুপুরের দিকে ঢাকা জেলা দায়রা জজ এলাকায় বিএনপি-সমর্থিত আইনজীবীরা মিছিল বের করলে পুলিশ লাঠিপেটা করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় পুলিশ কয়েকটি কাঁদানে গ্যাসের শেল ও ফাঁকা গুলি ছুড়লে আইনজীবীরা জজকোর্ট প্রাঙ্গণে গিয়ে আশ্রয় নেন।
আইনজীবীরা অভিযোগ করেন, পুলিশ বিনা কারণে মিছিলে হামলা চালায়। এতে তিনজন আইনজীবী আহত হন। পুলিশের সঙ্গে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা হামলায় অংশ নেন বলে অভিযোগ করেন তাঁরা।
এর আগে সকাল ১০টার দিকে শাঁখারীবাজার এলাকায় একটি প্রাইভেট কারে আগুন ধরিয়ে দেন পিকেটাররা। এ ঘটনায় পুলিশ ইকবাল হাসান ও মো. রফিক নামের দুজনকে আটক করে। ইকবাল ওই গাড়ির মালিক এবং রফিক চালক বলে জানা গেছে।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক দাবি করেন, নিজের গাড়ি হলেও পরিকল্পনা করে আগুন দেওয়া হয়েছে সন্দেহে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
দুপুর সাড়ে ১২টায় বাবুবাজারে হরতাল-সমর্থকদের ঝটিকা মিছিল থেকে একটি মাইক্রোবাসে আগুন দেওয়া হয়। এ সময় কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ এবং একটি কভার্ড ভ্যান ভাঙচুর করা হয়। সেখান থেকে চারজনকে আটক করে পুলিশ।
মামলা দেওয়ার জন্য গাড়িতে আগুন: আগের অন্যান্য হরতালের মতো গতকালও নয়াপল্টনে বিএনপির কার্যালয়ের বাইরে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কার্যালয়ের ভেতরে বিএনপির নেতা আমান উল্লাহ, বরকত উল্লা, রুহুল কবির রিজভী, ফজলুল হক, জয়নুল আবদিন ফারুক, আবদুস সালাম প্রমুখ অবরুদ্ধ ছিলেন। সকাল ১০টার পর বিএনপির সমন্বয়ক তরিকুল ইসলাম পুলিশ বেষ্টনী ডিঙিয়ে দলীয় কার্যালয়ে প্রবেশ করেন।
এ সময় তরিকুল সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, আগের রাতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে গাড়িতে আগুন লাগানো হয়েছে। সরকারের এজেন্টরা এসব ঘটিয়েছে, যাতে দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিতে পারে। সে জন্যই এসব ঘটনার দায় বিরোধী দলের ওপর চাপানো হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘জনগণের স্বার্থে আমরা হরতাল দিয়েছি। তাই এই হরতালের আগে আমাদের কর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে কোথাও যানবাহন চলাচলে বাধা দেওয়া না হয়।’

No comments

Powered by Blogger.