হরতালের নামে সহিংসতা চলতে পারে না- গাড়িতে আগুন, ককটেল

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর সরকারি পদক্ষেপ সমর্থন করে, এমন একজনও খুঁজে পাওয়া যাবে না। তার পরও বিরোধী দল হরতাল ডেকে নির্বিচারে গাড়ি জ্বালিয়েছে। ককটেল ফাটিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। সরকারের গণবিরোধী কাজের প্রতিবাদ করা বিরোধী দলের দায়িত্ব।
কিন্তু এ জন্য মানুষের দুর্ভোগ বাড়ানোর বিরোধী দল যে পথ ধরেছে, তা দেশ বা দলের জন্য শুভ হতে পারে না।
দুই দিন আগেই বিএনপি বলেছিল, সরকার তাদের কর্মসূচিতে বাধা না দিলে হরতালের পথে যাবে না। সবাই জানে, হরতাল ডাকলে এখন আগুন, বোমাবাজি, এমনকি প্রাণহানি পর্যন্ত হতে পারে। বিরোধী দল জেনেশুনে এই হঠকারিতার পথে গিয়েছে।
উপরন্তু, হরতাল শুরুর অন্তত ১৪ ঘণ্টা আগে থেকেই গাড়ি পোড়ানো শুরু হয়ে যায়। গত শনিবার বিকেলে একটি ওষুধ কোম্পানির যে কাভার্ড ভ্যান জ্বালিয়ে দেওয়া হলো, তার সঙ্গে জ্বালানি তেলের কী সম্পর্ক? একমাত্র বিবেকহীন ব্যক্তিরাই মুমূর্ষু মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য অতিপ্রয়োজনীয় ওষুধের গাড়ি এভাবে জ্বালিয়ে দিতে পারে। হরতালের আগের রাতে ১০টি বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়। হরতালের দিনও তেজগাঁও, মিরপুর, পুরান ঢাকার জজ আদালতসহ বিভিন্ন এলাকায় গাড়ি পোড়ানো হয়েছে। হরতাল আহ্বানকারী বিরোধী দলের সমর্থন ছাড়া এই সব অপকর্ম চলতে পারে না। জনগণের স্বার্থে প্রতিবাদের কথা বলে জনগণের সম্পদ ধ্বংস করা কোন রাজনীতি?
সহিংসতার কারণে হরতালের আগের বিকেল থেকেই রাজধানীতে বাস ও গাড়ি চলাচল কমে যায়। অফিস ও দোকানপাটে কেনাকাটা শেষে মানুষ পরিবহন-সংকটে দিশেহারা হয়ে পড়ে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও অনেকে বাস পায় না। নারীদের অসহায়ত্ব ছিল অচিন্তনীয়। রোগীদের অবস্থা অবর্ণনীয়। ঘরে ঘরে পরিবারের সদস্যরা ছিল আতঙ্কে।
রাজনীতি মানুষের জন্য। তাই হরতালের মতো মারাত্মক সহিংস কর্মসূচিতে না যাওয়াই ভালো। হরতাল আহ্বানের অধিকার গণতন্ত্রে স্বীকৃত, এ কথা মেনে নিয়েও বলা যায়, একেবারে অপরিহার্য না হলে হরতাল কর্মসূচি পরিহার করা কর্তব্য।
এর পরও যদি হরতাল দিতে হয়, তাহলে দলের পক্ষ থেকে অনেক বিধিনিষেধ আরোপ করা উচিত। হরতালের সময় অগ্নিসংযোগ বা বোমাবাজি নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। হরতাল শুরুর নির্দিষ্ট সময়ের এক মিনিট আগেও যেন কোনো বাস বা গাড়ি চলাচলে বাধা দেওয়া না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। এগুলো না হলে কোনো রাজনৈতিক দল নিজেদের দায়িত্বশীল বলে দাবি করতে পারে না। যদি কোনো দল মনে করে, নির্দেশ দিলেও কর্মীরা হয়তো মানবে না, তাহলে তাদের হরতাল ডাকার অধিকারই নেই।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সমন্বয়ক গতকালের হরতালে সহিংসতার দায় সরকারি এজেন্ট ও সন্ত্রাসীদের ওপর চাপিয়ে গা বাঁচানোর যে চেষ্টা করেছেন, সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ ছাড়া তা যুক্তিগ্রাহ্য হতে পারে না। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান, সহিংসতা রোধের নিশ্চয়তা দিতে না পারলে হরতাল ডাকবেন না।

No comments

Powered by Blogger.