মনের জানালা

মেহতাব খানম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মেহতাব খানম। তিনি আপনার মানসিক বিভিন্ন সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান দেবেন। অল্প কথায় আপনার সমস্যা তুলে ধরুন। আপনার সঠিক পরিচয় না দিতে চাইলে অন্য কোনো নাম ব্যবহার করুন।
—বি. স.

সমস্যা
কোচিংয়ে পড়ার সময় থেকে আকাশির (ছদ্মনাম) সঙ্গে আমার নিয়মিত কথা হয়। আগে কারও সঙ্গে আমি দীর্ঘ সময় মুঠোফোনে কথা বলতে পারতাম না। বেশি কথা বললে আমার মাথাব্যথা হতো। এখন ওর জন্য এটাও শুরু করে দিয়েছি। যতই কথা বলছি, ওর প্রতি আমার দুর্বলতা বেড়ে চলেছে। ইচ্ছা করলেও কথা বলা ছেড়ে দিতে পারছি না। ওকে না পেলে পুরো পৃথিবীটা আমাকে দিয়ে দেওয়া হলেও মনে হয় আমি সুখী হতে পারব না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
টাঙ্গাইল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট
পরামর্শ
তুমি একধরনের আসক্তিতে ভুগছ। তুমি তো মেয়েটিকে খুব ভালোভাবে চিনতে পারোনি, শুধু যন্ত্রের মাধ্যমে ওর সঙ্গে পরিচয়। এই ধরনের আলাপচারিতায় আমরা সব সময় সততার পরিচয় দিই না। অন্যকে আকৃষ্ট করার জন্য নিজেকে অত্যন্ত ইতিবাচকভাবে উপস্থাপনের একটি প্রয়াস থাকে। ফলে পরস্পরকে খুব ভালোভাবে জানার বা বোঝার উপায় থাকে না। এভাবে দীর্ঘ সময় কথা বলাটা কারও জন্যই ইতিবাচক ফলাফল বয়ে আনবে না। তুমি যে এ ব্যাপারে সচেতন হয়েছ, সেটি প্রশংসনীয়। তবে অবশ্যই মেয়েটির সঙ্গে আলোচনা করে তোমাকে যোগাযোগটা কমিয়ে পড়ালেখায় মনঃসংযোগ করতে হবে। তুমি তোমার সময়কে ফলপ্রসূ কাজে ব্যয় করে নিজের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হও।

সমস্যা
আমি ঢাকার একটি স্কুলের আবাসিক ছাত্র। নিজেকে মোটামুটি মেধাবী বলে চালিয়ে দেওয়া যায়। আমি এখানে তৃতীয় শ্রেণী থেকে আছি। বর্তমানে নবম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত। আমার সমস্যা হলো, যখনই আমি হোস্টেল থেকে বাসায় যাই, আমি আমার মা-বাবার সঙ্গে খুব খারাপ আচরণ শুরু করি। অনেক বেয়াদবি করি। নিজে যে খারাপ ব্যবহার করছি, তা বুঝেও করি। কিন্তু আমি কখনো এমনটা করতে চাই না। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেও কোনো লাভ হয় না। ২০১০ সালে আমার বাবার ব্রেন স্ট্রোক করে। সুস্থ হওয়ার পরও তাঁর মানসিক দিক অন্য রকম হয়ে যায়। কিছু হলেই তিনি খুব বাজে ভাষায় চিৎকার, চেঁচামেচি করতে থাকেন। তাহলে কি আমি আমার বাবার কাছ থেকে এটি শিখেছি?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
উত্তরা, ঢাকা।
পরামর্শ
কাউন্সেলিং বা সাইকোথেরাপির একটি উদ্দেশ্য মানুষকে তাদের নেতিবাচক আবেগগুলোর তীব্রতা কমিয়ে রাখতে সহায়তা দেওয়া। এই আবেগের উৎস আমাদের চিন্তাধারা এবং তার পেছনের বিশ্বাস, মূল্যবোধ ও মনোভাব। তোমার যখন বয়ঃসন্ধি শুরু হয়েছে, তখন বাবার স্ট্রোক হওয়ায় হয়তো তোমরা সবাই একধরনের মানসিক চাপের মধ্যে পড়ে গেছ। আর বয়ঃসন্ধিতে যেহেতু এমনিতেই আবেগের আধিক্য থাকে, তাই তুমি চাপগুলো নিতে পারোনি।
একই সঙ্গে বাবার দুর্ব্যবহার তোমার মধ্যে আরও চাপ তৈরি করেছে। তবে তুমি বাবার কাছ থেকে রাগ করতে শেখোনি। বাড়িতে গেলেই যেহেতু একটি নেতিবাচক আবেগীয় আবহাওয়ার মধ্যে থাকতে হচ্ছে, তাই হয়তো অনেক বেশি ক্ষোভ বেরিয়ে আসছে। অবশ্য তুমি ছোটবেলায়ও যদি বাবাকে একটি রাগী মানুষ হিসেবে দেখে থাক, তাহলে সেটি অনুকরণের সম্ভাবনা রয়েছে। নিজেকে এই কারণে অপরাধী করে না তুললে ভালো হয়। রাগ করার পর অবশ্যই মা-বাবা দুজনের কাছেই দুঃখ প্রকাশ করবে। এ ছাড়া রিলাক্সেশন এক্সারসাইজ, প্রাণায়াম ও নিয়মিত শরীরচর্চা তোমার মানসিক চাপ কমাতে খুব সাহায্য করবে।

No comments

Powered by Blogger.