স্বজনদের অভিযোগ-হত্যাকারীদের বাঁচানোর চেষ্টা চলছে

বিশ্বজিতের হত্যাকারীদের বাঁচাতেই চিকিৎসককে দিয়ে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন দুর্বল করে তৈরি করানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তাঁর বাবা অনন্ত চন্দ্র দাস। গতকাল শুক্রবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।
এ সময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, 'বিশ্বজিতের শরীরে অসংখ্য ছুরিকাঘাত ও কোপের দাগ ছিল। কিন্তু চিকিৎসক ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে একটি কোপের চিহ্ন পাওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন বলে শুনেছি। ময়নাতদন্ত দুর্বল হলে খুনি সাজা কম পাবে। এ কারণেই এমন করা হয়েছে।'
বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে বিশ্বজিৎ দাসের বাবা ছাড়াও মা কল্পনা রানী দাস ও ভাই উত্তম দাস উপস্থিত ছিলেন। লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব অ্যাডভোকেট গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক। সংবাদ সম্মেলনে নিহত বিশ্বজিতের স্বজন ও সংগঠনের নেতারা প্রকৃত খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিসহ চারটি দাবি উপস্থাপন করেন। দাবিগুলো হলো- ১. অবিলম্বে মিডিয়া ফুটেজ দেখে সব আসামিকে গ্রেপ্তার করে দ্রুত বিচার আইনে বিচার করে খুনিদের ফাঁসি নিশ্চিত করতে হবে। ২. বিশ্বজিৎ খুনের দায় কর্তব্যরত পুলিশ ও ডাক্তারকেও কর্তব্য পালন না করার জন্য শাস্তি পেতে হবে। ৩. তাদের গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে এনে প্রকৃত ময়নাতদন্ত ও সুরতহাল রিপোর্ট উন্মোচন করতে হবে। ৪. বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ডের দায় সরকারের, তাই বিশ্বজিতের পরিবারকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
বিশ্বজিতের বাবা অনন্ত চন্দ্র দাস বলেন, 'আমরা চাই, প্রকৃত খুনির শাস্তি হোক। তবে নির্দোষ কেউ যেন শাস্তি না পায়।' বিশ্বজিতের মা কল্পনা রানী দাস বলেন, 'আমার মতো আর কোনো মায়ের বুক যেন এভাবে খালি না হয়। আমরা এখন শুধু ন্যায়বিচার দেখতে চাই।' বিশ্বজিতের বড় ভাই উত্তম কুমার দাস ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে নতুন করে প্রতিবেদন দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, 'এ সবই প্রহসন। প্রতিবেদন দেওয়া চিকিৎসক ও সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুতকারী সূত্রাপুর থানার এসআইয়ের গ্রেপ্তার চাই আমরা।'
সরকারের কাছে বিশ্বজিতের পরিবারকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানিয়ে গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক বলেন, 'আমরা এ দেশের সংখ্যালঘু হিন্দু বলেই কি এত অবহেলা, এত তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য? একটি সম্ভাবনাপূর্ণ জীবন ছুরি মেরে, রড দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে তার দায়দায়িত্ব অন্যের ওপর চাপানোর চেষ্টা কোনো মানুষ করতে পারে বলে আমরা বিশ্বাস করি না।'
প্রসঙ্গত, গত ৯ ডিসেম্বর ১৮ দলীয় জোটের অবরোধ চলাকালে পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্কের কাছে ছাত্রলীগের কিছু কর্মী পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে দর্জি দোকানি বিশ্বজিৎ দাসকে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

No comments

Powered by Blogger.