প্রাইমারী স্কুলে ৬ষ্ঠ শ্রেণী

উৎসবমুখর এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে আগামী প্রজন্মকে জ্ঞানমুখী করার লক্ষ্যে সরকারের সুচিন্তিত সদিচ্ছারও প্রতিফলন ঘটেছে
নতুন বছরের ১ জানুয়ারি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের স্কুল-শিক্ষার্থীদের কাছে রীতিমতো এক উৎসবের আমেজ নিয়ে উপস্থিত হয়েছিল।
রং-ঝলমলে চমৎকার সব নতুন বই; মন-ভোলানো, প্রাণ-মাতানো সুগন্ধে-ভুরভুর এক অসাধারণ আমেজ। এই আমেজ সেই দিন আনুষ্ঠানিকভাবে সারাদেশের অগণিত শিক্ষার্থীর মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৩১ ডিসেম্বর নতুন বছর শুরুর প্রাক্কালে মাধ্যমিক পর্যায়ের কিছু শিক্ষার্থীর হাতে এক সেট করে নতুন বই তুলে দিয়ে তিনি এই উৎসবের ভাবমূর্তিকে স্বতন্ত্র এক উচ্চতায় উন্নীত করেছেন।
১ জানুয়ারি সারাদেশের পৌনে চার কোটি শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যে ২৬ কোটি ১৮ লাখেরও বেশি বই তুলে দেয়ার মাধ্যমে সরকার দিনটিকে ‘পাঠ্যপুস্তক উৎসব’ হিসেবে পালন করেছে। এর মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ের বইয়ের সংখ্যা ১০ কোটি ৭৮ লাখ ৬২ হাজার ৭১৪; মাধ্যমিক স্তরে ১১ কোটি ৪৮ লাখ ২১ হাজার ৩৩১। অন্যদিকে এবতেদায়িসহ মাদ্রাসায় প্রদত্ত মোট বইয়ের সংখ্যা ৩ কোটি ৭৭ লাখ ৯৬ হাজার ৫৮০; আর কারিগরি পর্যায়ে প্রদত্ত বইয়ের সংখ্যা ১৩ লাখ ২৮ হাজার ৪৮১। বিগত ১৭ বছরের মধ্যে এবারই প্রথম শিক্ষার্থীরা নতুন শিক্ষাক্রমের আওতায় নতুন আঙ্গিকে প্রণীত বই পড়তে পারবে।
দেশব্যাপী বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণের এই যে মহোৎসব, একে শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে দেয়ার মামুলি আনুষ্ঠানিকতা হিসেবে বিবেচনা করা সমীচীন হবে না। উৎসবমুখর এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে আগামী প্রজন্মকে জ্ঞানমুখী করার লক্ষ্যে সরকারের সুচিন্তিত সদিচ্ছারও প্রতিফলন ঘটেছে, বলা যায়। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক বাস্তবতার কারণে এক সময় বহু শিশু-কিশোর বিদ্যালয়ে যেতে পারত না; যারা যেত, তারাও অনেকে লেখাপড়া অব্যাহত রাখতে না পেরে ড্রপ-আউট অর্থাৎ ঝরে পড়ত। কিন্তু সেই দিন আর নেই। সরকারের বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণের মহা-আয়োজন সকল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্যই এখন এক পরম আশীর্বাদের উপলক্ষ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই উদ্যোগের ফলে শিক্ষার্থী-শিক্ষক-অভিভাবকদের মধ্যে যে সচেতনতা ও আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে, তা অব্যাহত থাকলে অদূরভবিষ্যতে দেশের শিক্ষার হার ও মান অনেকগুণ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যায়।
নতুন বছরে বই উৎসবের পাশাপাশি আরেকটি আনন্দের খবর হলো, ১ জানুয়ারি থেকে দেশের প্রতিটি উপজেলায় একটি করে অর্থাৎ ৪৮৭টি প্রাইমারি স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণী চালু হয়েছেÑ দেশের শিক্ষাব্যবস্থার ইতিহাসে যা অনন্য, নজিরবিহীন। জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা চালু করার সরকারী পরিকল্পনার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবেই এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা সারাদেশের সকল প্রাইমারি স্কুলে চালু হলে দেশের বুনিয়াদি শিক্ষার মান যেমন উৎকর্ষম-িত হবে, তেমনি শিক্ষার হার বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটতে পারে। সরকার সেই সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য নিয়ে ক্রমশ এগিয়ে যাবেÑ সেটাই সবার প্রত্যাশা।

No comments

Powered by Blogger.