ভাল ছড়াকার হতে চাই- by রফিকুল হক

বাংলা শিশু সাহিত্য ও ছড়া সাহিত্যে তার উপস্থিতি চার যুগেরও বেশি সময় ধরে তিনি রফিকুল হক। যিনি দাদুভাই নামে বেশি পরিচিত। শব্দ, ছন্দ, বিষয়বস্তু আঙ্গিকের বৈচিত্র্যে এবং শিশুমনকে বোঝার আন্তরিক উপলব্ধির সংমিশ্রণে তার প্রতিটি লেখাই হয়ে ওঠে আলাদা এবং বৈচিত্র্যময়।
আসছে ৮ জানুয়ারি এই বরেণ্য ছড়াকারের ৭৭তম জন্মদিন। বাংলা শিশু সাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের জন্য পেয়েছেন বাংলা একাডেমী ২০০৯-এর পুরস্কারসহ দেশ-বিদেশে অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা। তার রচিত বইয়ের ভেতর ‘পান্তাভাতে ঘি, বর্গী এলো দেশে, নেবুর পাতা করমচা, ঢামেরিক, আমপাতা জোড়া জোড়া এবং নাটক বই বই হইচই বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তোমাদের জন্য দাদুভাইয়ের এই সাক্ষাতকারটি গ্রন্থনা করেছেন
Ñআহমেদ জাকির

ষ আপনার প্রায় প্রতিটি ছড়ার ভেতর লুকিয়ে থাকে শিশুদের আনন্দ ও সমকালীন ভাবনা, এটা কি করে সম্ভব?

ঁ ছড়া মূলত শিশুদের জন্যই লেখা। আমার ছড়া শিশুরা খুব সহজে বুঝতে পারে, আনন্দ পায়। আর সমকালীন চিত্র আমার লেখার মধ্যে চলে আসার বিশেষ কোন কারণ নেই, এটা সমাজ বাস্তবতা থেকে স্বাভাবিকভাবেই লেখার মধ্যে চলে আসে।

ষ সাহিত্যের আরও অনেক বিষয় থাকতেও ছড়াকেই কেন বেছে নিলেন?

ঁ যথার্থ প্রশ্ন। আমি ছড়া সাহিত্যপ্রবণ। মূলত ছড়ার প্রতি আমার ভালবাসা এবং ছড়ার সরলতাই আমাকে ছড়ার প্রতি আকৃষ্ট রেখেছে।

ষ আপনার প্রতিটি ছড়াই নিজস্ব বৈচিত্র্য নিয়ে পৃথক। এ বিষয়ে কিছু বলুন।

ঁ আমার মনে হয়, প্রতিটি লেখকেরই একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য থাকা উচিত, অনেকেরই আছে। আমি শুরু থেকেই চেষ্টা করি আমার লেখাতে যেন চঞ্চলতা, আকুলতা, রাগ, আনন্দ সব কিছু আলাদাভাবে ধরা পড়ে। এ বিষয়ে সব লেখককেই দৃষ্টি রাখা উচিত।

ষ একজন তরুণ ছড়াকার ছড়া সাহিত্যে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলে তার কি পড়া উচিত এবং কি করা উচিত নয় বলে আপনি মনে করেন?

ঁ প্রথমে তাকে আমার শুভেচ্ছা। আর ছড়ায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে পাঠের বিকল্প নেই। প্রচুর পড়তে হবে। আর খুঁজতে হবে ছড়া সাহিত্যের শেকড়। আমাদের দেশে একটা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। ‘লোকছড়া ফাউন্ডেশন’। যাদের কাজ লোকজ ছড়া নিয়ে গবেষণা, লোকজ ছড়া সংগ্রহ এবং সংরক্ষণ করা। কিছুদিন আগে সেখানে যাওয়ার সৌভাগ্য আমার হয়েছে, আমার খুবই ভাল লেগেছে এবং মনে হয়েছে এমন প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন আমাদের দেশে আরও প্রয়োজন। এই লোকজ ছড়াকে অনুসরণ করে এর সাথে আধুনিক ছন্দ-মাত্রা, বিষয়-বৈচিত্র্যের সমন্বয় ঘটিয়েই সত্যিকারের ভাল কিছু করা সম্ভব।

ষ একজন সাংবাদিক ও চাঁদের হাটের মতো বিখ্যাত সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা এবং সর্বোপরি একজন পাঠক প্রিয় ছড়াকার। এই তিন পরিচয়ের মধ্যে কোন পরিচয়ে পরিচিত হতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন?

ঁ আমি মূলত শিশুদের প্রকৃত বন্ধু এবং সেই সাথে আমি একজন ভাল ছড়াকার হতে চাই! এই পরিচয় নিতেই আমি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।
আমার স্বপ্ন খান মোহম্মদ মঈনুদ্দিনের মতো- “ঐ দেখা যায় তাল গাছ”, সুকুমার রায়ের মতো “বাবুরাম সাপুরে” বা অজ্ঞাত ছড়াকারের লেখা “খোকা ঘুমোলো পাড়া জুড়োলো” এমন একটা ছড়াও যদি লিখে যেতে পারি, যে ছড়া বাংলার মানুষের মুখে চিরকাল বেঁচে থাকবে; তবে নিজেকে ধন্য মনে করব।

ষ আপনার বই সংখ্যা এত কম কেন?

ঁ আমি এর আগেও একটা সাক্ষাতকারে এ কথা বলেছি, যে বই প্রকাশের ক্ষেত্রে আমার বরাবরই ধীরগতি। প্রচুর লিখেছি বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন কাগজে, কিন্তু বইয়ের ব্যাপারে আমি আগ্রহী ছিলাম না। আমার প্রকাশিত বই ‘বর্গী এলো দেশে’ ছাপা হয় আমার লেখালোখি শুরুর প্রায় ৩৩ বছর পর। আমার বন্ধু শিল্পী হাসেম খানের উৎসাহ ও ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটনের সহযোগিতায় ছাপা হয় সেই বই। ২০১৩-এর একুশে বই মেলাতে ২ থেকে ৩টা বই বের হতে পারে।

ষ আমাদের জাতীয় দৈনিক পত্রিকার শিশুদের পাতাগুলো কেমন হওয়া উচিত বলে মনে করেন?

ঁ একটা সময় ছিল যখন পত্রিকার শিশুপাতাগুলো শিশু উপযোগী মানসম্পন্ন লেখায় সাজানো থাকত, তবে এখন তার সংখ্যা খুবই কম, এ ব্যাপারে ওই পাতার সম্পাদকদের আরও যতœবান হওয়া উচিত। একটা ছেলে যেন অনেক দূর থেকে ওই পাতাটি পড়ে মনে করতে পারে যে ওই পাতায় তারও অংশগ্রহণ আছে।

ষ আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ও জন্মদিনের শুভেচ্ছা।

ঁ তোমাকেও ধন্যবাদ। সবার জন্য শুভকামনা।

No comments

Powered by Blogger.