তথ্য সরবরাহে সরকারী অফিস এগিয়ে, অমান্য এনজিওগুলোর- উপেক্ষিত হচ্ছে বাধ্যতামূলক তথ্য অধিকার আইন- সমুদ্র হক

তথ্য সরবরাহে সরকারী অফিসগুলোতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যদিও এই সংখ্যা এখনও কম, তারপরও গত চার বছরে এই বিষয়ে সরকারের অগ্রগতি অনেকটা এগিয়েছে।
তবে বেসরকারী সংস্থাগুলোর (এনজিও) সিংহভাগই সাধারণকে তথ্য প্রদানে সরকারের এই বাধ্যতামূলক আইন উপেক্ষা করছে। তারা দায়িত্বপ্রাপ্ত কোন কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়নি। সংসদে পাস করা সাধারণের তথ্য-অধিকার আইনের আওতায় তথ্য প্রদানে তারা গড়িমসি করে এবং কোন তথ্যই দেয় না। মাঠপর্যায়ের বিস্তর অনুসন্ধানে এই চিত্র মিলেছে। উল্লেখ্য, এখন শুধু সরকারী অফিসই নয়, বেসরকারী সব সংস্থাকে (এনজিও) তথ্য-অধিকার আইনের আওতায় এনে জবাবদিহিতা বাধ্যতামূলক করে সরকারী ও বেসরকারী প্রতিটি অফিসে তথ্য প্রদানের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিয়োগের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
গেল নবেম্বর (২০১২) মাস পর্যন্ত সাধারণকে তথ্য প্রদানের জন্য সরকারী বিভিন্ন সেক্টরে ৪০ হাজারেরও বেশি দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সীমিত এই সাধ্য নিয়েই দেশজুড়ে তথ্য প্রদানের গতি-ধারা সৃষ্টি হয়েছে। যা ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত বিস্তৃত। এর পাশাপাশি তথ্য প্রদানের জন্য এনজিওগুলোর তেমন উদ্যোগ নেই এবং ‘ডিসক্লোজার পলিসিও’ নেই। একই সময়ে দেশের মাত্র সাড়ে ৬শ’ এনজিও দায়সারাভাবে তথ্য প্রদানের কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছে। যে সংখ্যা মোট এনজিওর মাত্র দুই শতাংশ। তথ্য প্রদানে সবচেয়ে বেশি অসহযোগিতা করছে তারা (এনজিও)। তথ্য-অধিকার আইনে সব সরকারী ও বেসরকারী অফিস, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান সাধারণকে তথ্য দিতে বাধ্য। এই আইনের ১০ ধারায় বলা আছে, তথ্য প্রদান ইউনিটের জন্য একজন করে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে হবে। এনজিও ব্যুরোর নিবন্ধনের এফডি-৬ ফরমেটে তথ্য প্রদান ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিয়োগ বাধ্যতামূলক হিসেবে উল্লেখ আছে। এক সূত্র জানায়, তথ্য প্রদানে গাফিলতি করলে এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা না রাখলে এনজিওগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যাবে। বগুড়ায় ম্যানেজমেন্ট এ্যান্ড রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট ইনিসিয়েটিভ (এমআরডিআই) আয়োজিত তথ্য-অধিকার আইনবিষয়ক এক সেমিনারে বলা হয়, বাংলাদেশে রাইট টু ইনফরমেশন (আরটিআই) বাস্তবায়নের পর গ্লোবাল র‌্যাঙ্কিংয়ে ১২তম অবস্থানে রয়েছে। এমআরডিআইয়ের নির্বাহী পরিচালক হাসিবুর রহমান মুকুর জানান, কেউ বলেন তথ্য প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত। এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। সংবিধানের ৫৬(৬) অনুচ্ছেদের অধীনে প্রণীত কোন মন্ত্রণালয় হলোÑ জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়সমূহ। অর্থাৎ সর্বোচ্চ পর্য়ায় থেকে মাঠপর্যায় (ইউনিয়ন পরিষদ) পর্যন্ত তথ্য-অধিকার কার্যক্রম বিস্তৃত। দেখা যায়, সরকারী-বেসরকারী কর্মকর্তাগণ বিষয়টি নিয়ে খুব একটা এগোতে চান না। এদিকে সাধারণের তথ্য জানার অধিকার (রাইট টু ইনফরমেশন সংক্ষেপে আরটিআই) আইনে তথ্য প্রদানে যে কর্মকর্তা তথ্য প্রদান করবেন তার সুরক্ষা নিশ্চিত করে দেশে ‘হুইসেল বোয়ার প্রোটেকশন’ এ্যাক্ট বাস্তবায়িত হয়েছে। সংবাদকর্মীসহ দেশের যে কোন নাগরিক তথ্য জানতে চেয়ে (শুধু কয়েকটি বিষয় ছাড়া) নির্ধারিত ফরমে আবেদন করার পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠান সে তথ্য দিতে বাধ্য। তথ্য প্রদান না করলে বা গড়িমসি করলে শাস্তির বিধান আছে। এক সংসদ সদস্য জানান, তথ্য-অধিকার আইনের মূল লক্ষ্য হলো, গণতান্ত্রিক ধারায় সাংবিধানিকভাবেই জনগণের ক্ষমতায়ন। আইনটি জবাবদিহিতার ধারায় দুর্নীতি প্রতিরোধ করে উন্নয়নমূলক সব কর্মকা-ে দ্রুত গতি এসে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করবে। তিনি তাঁর নির্বাচনী আসনে জবাবদিহিতার ধারা তৈরি করে সুফল পেয়েছেন। এই ধারায় উন্নয়ন কর্মকা-েও গতি এসেছে। বগুড়া সরকারী আযিযুল হক কলেজের অধ্যাপক হায়দার আলী বললেন, আইনটি মূলত জবাবদিহিতার আয়না। যা গণতন্ত্রের পথকে মসৃণ করে। জবাবদিহিতার ধারা তৈরিতে মহাজোট সরকারের নির্বাচনী রাজনৈতিক অঙ্গীকার (মেনুফেস্টো) পূরণে নবম সংসদের প্রথম অধিবেশনেই (২৯ এপ্রিল ২০০৯) ‘তথ্য-অধিকার আইন’ পাস হয় এবং ৫ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি সম্মতি দেন। এই আইনের জন্য বাংলাদেশ বিশ্বে সমাদৃত হয়। উল্লেখ্য, গত সাধারণ নির্বাচনে একমাত্র মহাজোটের তথ্য-অধিকার আইন পাসের অঙ্গীকার ছিল। সংবিধানের অন্যতম শক্তিশালী এই আইনে দেশের যে কোন নাগরিক তথ্য চাইলে তথ্য না দেয়া বা ‘না’ বলার কোন সুযোগ নেই।

No comments

Powered by Blogger.