মার্চের মধ্যেই তাজরিনের ৫৩ শ্রমিকের পরিচয় শনাক্ত করা যাবে- স্বজনদের ডিএনএ টেস্ট কার্যক্রম শুরু

আশুলিয়ার তাজরিন পোশাক শিল্প কারখানায় অগ্নিকা-ে নিহত বেওয়ারিশ ৫৩ শ্রমিকের পরিচয় আগামী মার্চ মাসের মধ্যেই শনাক্ত করা সম্ভব হবে। বেওয়ারিশ শ্রমিকদের স্বজনদের ডিএনএ টেস্ট কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।
এই কার্যক্রম শেষ হলেই বেওয়ারিশ শ্রমিকদের পরিচয় জানা যাবে। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
তাজরিন পোশাক শিল্প কারখানায় অগ্নিকা-ে ৫৩ বেওয়ারিশ শ্রমিককে গত ৪ জানুয়ারি জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়। তবে দাফনের আগে কোন স্বজন দাবি নিয়ে এলে যাতে পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়, সেজন্য প্রত্যেকের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে রাখা হয়। দাফনের পর প্রত্যেকের কবরের ফলকেও একটি শনাক্তকারী নম্বরও উল্লেখ করা হয়।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, তাজরিনের ঘটনায় মন্ত্রণালয় থেকে গঠিত তদন্ত কমিটির নিকট বেওয়ারিশ শ্রমিকদের স্বজনদের মধ্যে ইতোমধ্যে ৪৫ জন নাম দাখিল করেছেন। দাখিল করা স্বজনদের নিকট থেকে রক্ত সংগ্রহ শুরু হয়েছে। রক্ত সংগ্রহের পর বেওয়ারিশ শ্রমিকদের ডিএনও’র সঙ্গে মেলানো হবে। আগামী মার্চ মাসের মধ্যে এই কাজটি সম্পন্ন হবে বলে আশা করছে মন্ত্রণালয়। আর বেওয়ারিশ শ্রমিকদের স্বজনদের মধ্যে এখনও যারা আবেদন করেননি, মার্চের মধ্যে তারাও আবেদন করবেন বলে আশা করছে মন্ত্রণালয়। ফলে মার্চের মধ্যেই সকল বেওয়ারিশ শ্রমিকের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ফয়জুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, তাজরিন ফ্যাশন্সে নিহত শ্রমিকদের মধ্যে ৫৩ জন ছিলেন বেওয়ারিশ। ইতোমধ্যে ৪৫ স্বজন কমিটির কাছে আবেদন দাখিল করেছেন। এসব স্বজনদের রক্ত সংগ্রহ শুরু হয়েছে। এদের রক্ত নেয়ার পরে বেওয়ারিশ লাশের ডিএনএর সঙ্গে মেলানোর পরে পরিচয় শনাক্ত করা যাবে। আগামী মার্চ মাসের মধ্যে এই কার্যক্রম সম্পন্ন হবে বলে তিনি জানান।
সূত্রমতে, তাজরিন পোশাক কারখানায় অগ্নিকা-ের পরে ২৬ নবেম্বর শ্রম ও কর্র্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে নিহত-আহত ও নিখোঁজ শ্রমিকদের প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারণ করার লক্ষ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির প্রধান করা হয় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ফয়জুর রহমানকে। কমিটিতে শ্রম পরিচালক আবু সাইদ খুরশিদ আলম, কলকারখানা পরিদর্শক কমিটির প্রধান হাবিবুল ইসলাম ও ফায়ার ব্রিগেড সার্ভিস ও বিজিএমইএ-এর প্রতিনিধি রয়েছেন। কমিটি গঠনের তিনদিনের মধ্যে একটি প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়। তবে চূড়ান্ত প্রতিবেদন এখনও জমা দেয়া হয়নি।
কমিটি প্রাথমিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, নিহত শ্রমিকের সংখ্যা মোট ১১১ জন। এদের মধ্যে ৫৮ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। অপরদিকে ৫৩ জনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। তবে কমিটি চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার লক্ষ্যে গত ৩ ডিসেম্বর শ্রম ভবনের সম্মেলন কক্ষে একটি অফিস খোলে। এই অফিসে অগ্নিকা-ে মৃত, আহত ও নিখোঁজ শ্রমিকদের তথ্য সংগ্রহের জন্য সহযোগিতা চায় তদন্ত কমিটি। এ বিষয়ে তথ্য প্রমাণাদিসহ তথ্য সরবরাহের জন্য ৩ থেকে ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত শ্রম ভবন, ৪, রাজউক এ্যাভিনিউয়ের তৃতীয় তলায় সম্মেলন কক্ষে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হয়। তবে নির্ধারিত সময়ের পরেও অনেকে আবেদন দাখিল করেন। এই কমিটির কাছে এখন পর্যন্ত ৪৫ জন স্বজন আবেদন দাখিল করেছেন, যাঁরা তাঁদের স্বজনদের লাশ খুঁজে পাননি।
সূত্রমতে, তাজরিনে অগ্নিকা-ের ঘটনায় নিহত শ্রমিকের সংখ্যা নিয়ে ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়। নিহত শ্রমিকের সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের তথ্য প্রকাশিত হয়। কোন কোন গণমাধ্যমে নিহত শ্রমিকের সংখ্যা ১১১ থেকে শুরু করে ১২৬ জন পর্যন্ত বলা হয়। তবে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি ১১১ জনকে মৃত বলে শনাক্ত করে।
উল্লেখ্য, গত ২৪ নবেম্বর সন্ধ্যায় আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরের মনোসন্তোষপুর এলাকার তাজরিন গার্মেন্টসে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ছাড়াও গত ২৫ নবেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাইন উদ্দিনকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দাখিল করেছে। এছাড়া আশুলিয়া ট্র্যাজেডি নিয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, পুলিশ প্রশাসন ও স্থানীয় প্রশাসনের আরও তিনটি কমিটি গঠন করা হয়। অপরদিকে পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমই থেকে আরও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তবে সকল কমিটিই ইতোমধ্যে প্রতিবেদন পেশ করেছে।

No comments

Powered by Blogger.