হরতালে বাধা দিলে আরও কঠোর কর্মসূচী ॥ মোশাররফ

 ১৮ দলীয় জোটের রবিবারের হরতালে আগের মতো বাধা দিলে আরও কঠোর কর্মসূচী দেয়া হবে বলে সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
তিনি বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে হরতালের পক্ষে পিকেটিং করতে চাই। কিন্তু এতে বাধা দিলে পরিণতি হবে ভয়াবহ। শুক্রবার সন্ধ্যায় নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মুক্তি ও যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভীর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে প্রতিবাদী জাসাস আয়োজিত সাংস্কৃতিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। জাতীয় প্রেসক্লাবে অপর এক কর্মসূচীতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায় করতে উপযুক্ত সময়ে উপযুক্ত আন্দোলন কর্মসূচী দেয়া হবে।
ড. মোশাররফ বলেন, দলীয় লোকদের লুটপাটের সহযোগিতার জন্য জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। তিনি বলেন, শুক্রবার বন্ধের দিন হরতাল হবে না, এজন্য বৃহস্পতিবার গভীর রাতে জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে সরকার। কিন্তু আমরা আগেই বলেছিলাম জ্বালানি তেলের দাম বাড়ালে হরতাল পালন করব। তিনি বলেন, কুইকরেন্টালের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয়স্বজন লুটপাট করছেন। তাদের সস্তায় তেল দিতে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হয়েছে, আর এজন্যই তেলের দাম বাড়াতে হয়েছে।
জাসাস সভাপতি আবদুল মালেকের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মশিউর রহমান, জাসাসের সাধারণ সম্পাদক মনির খান ও ঢাকা মহানগর জাসাস নেতা জাহাঙ্গীর শিকদার।
শুক্রবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে সেন্টার ফর ডেমোক্র্যাসি পিস স্টাডিজ আয়োজিত ‘মানবাধিকার কি বিপন্ন হবে’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায় করার জন্য উপযুক্ত সময়ে উপযুক্ত আন্দোলন কর্মসূচী দেয়া হবে । তিনি বলেন, সদিচ্ছা থাকলে বিরোধী দলের সঙ্গে সরকার সমঝোতায় আসতে পারতেন। কিন্তু এ সরকার সমঝোতা চায় না, সংঘাত সৃষ্টি করে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়।
ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, এ সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘনের রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। তারা নির্বাচনের আগে যে সব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তার একটিও বহাল রাখতে পারেনি। তারা মুখে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও আইনের শাসনের কথা বলে। কিন্তু মনেপ্রাণে তা বিশ্বাস করে না। ২০১৩ সালে এ সরকারের পতন ঘটবে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, যত কৌশলই গ্রহণ করুন না কেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় থেকে এবং সংসদ কার্যকর রেখে কোন নির্বাচন করতে পারবে না। সে রকম কোন নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না এবং তা হতেও দেয়া হবে না।
মওদুদ বলেন, ব্যর্থতার জন্যই এ সরকারের পতন হবে। ২০০১ সালে সংগঠিত সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনায় বিএনপির ২৩ নেতাকে জড়িয়ে মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা কৌশল জানি, সরকারের কৌশল বুঝেই আমরা কৌশল নেব। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ আবার পুরনো পথেই যাচ্ছে। রক্ষী বাহিনীর অত্যাচারের কথা নতুন প্রজন্ম জানে না। এই আওয়ামী লীগই দেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম দিয়েছে।
শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিএনপি নেতা রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর মুক্তির দাবিতে নাটোর জেলা স্টুডেন্ট ফোরাম আয়োজিত মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, এ সরকার গরিব মারার সরকার। গরিব মারার জন্যই তারা বার বার তেলের দাম বাড়াচ্ছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সম্পদ লুটপাটের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে আবারও তেলের দাম বৃদ্ধি করেছে।
নজরুল ইসলাম বলেন, নিজেরা দুর্নীতি করে দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে আজ জনগণের পকেট মারতে ডিজেল, অকটেন ও কেরোসিনের দাম বৃদ্ধি করে সরকার প্রমাণ করেছে তারা জনগণের সরকার নয়, অসভ্য সরকার।
দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মির্জা ফখরুলের মুক্তির দাবিতে বাংলাদেশ উন্মুক্ত গণতান্ত্রিক পরিষদ নামক একটি সংগঠন আয়োজিত প্রতীকী অবস্থানে কর্মসূচীতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আ স ম হান্নান শাহ বলেন, ১৮ দলের দাবি মেনে না নিলে ক্ষমতাসীন সরকারের প্রধানমন্ত্রীর ইয়াহিয়া, আইয়ুব খান ও এরশাদের মতো পরিণতি ভোগ করতে হবে। এ সময় তিনি অভিযোগ করেন বর্তমান সরকারই যুদ্ধাপরাধের বিচার চায় না। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী আমার কাছে একটি লিস্ট পাঠিয়েছেন, সে লিস্টে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত যারা পাক আর্মিকে সহায়তা করেছে তাদের নাম রয়েছে। ওই লিস্টে আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আশিকুর রহমানসহ অনেকের নাম রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে হান্নান শাহ বলেন, খালেদা জিয়াকে আপনি বলেছেন সাপের ঝাঁপি মাথায় নিয়ে তিনি খেলছেন। কিন্তু না, ১৯৯৫ থেকে ’৯৬ সাল পর্যন্ত জামায়াতকে মাথায় নিয়ে আপনিই ঘুরেছেন। আপনিই গোলাম আযমের মগবাজারের বাড়িতে গিয়েছিলেন। তসবি-জায়নামাজও দেয়া হলো আপনাকে। এখন জামায়াত আপনাদের সঙ্গে নেই বলেই এসব কথা বলছেন। তিনি বলেন, আওয়ামী দ্বৈতনীতি বলে শেষ করা যাবে না। আওয়ামী লীগ সরকারের কেলেঙ্কারি দুই-তিনটি মহাবাক্য লিখলেও শেষ করা যাবে না।
প্রতীকী অবস্থান কর্মসূচীতে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ও জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের চীফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক।
দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয়তাবাদী প্রজন্ম-৭১ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, প্রতিহিংসার রাজনীতি ত্যাগ করুন। যদি দেশের মানুষের নিরাপত্তা চান তাহলে বিএনপির সব নেতার মুক্তি ও খালেদা জিয়াসহ সবার নামে দেয়া মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি ঢালি আমিনুল ইসলামের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, নির্বাহী কমিটির সদস্য খালেদা ইয়াসমিন ও লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান।

No comments

Powered by Blogger.