রাঙ্গুনিয়ায় তিন হাজার শিশু ইটভাটার শ্রমিক by ইব্রাহিম খলিল

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ইটভাটাগুলোতে বহু শিশু কাজ করছে। বই হাতে বিদ্যালয়ে থাকার কথা যাদের, সেই শিশুরা পেটের দায়ে বড়দের মতো ভাটায় শ্রম দিচ্ছে। তার পরও তারা পাচ্ছে না পর্যাপ্ত মজুরি। রাঙ্গুনিয়ায় এমন শিশুশ্রমিকের সংখ্যা তিন হাজারেরও বেশি। এদের সবাই বহিরাগত।
রাঙ্গুনিয়া ইটভাটা মালিক সমিতির কার্যালয় সূত্র জানায়, উপজেলার ইসলামপুর, উত্তর রাজানগর ও লালানগর এলাকায় ১১৭টি ইটভাটা রয়েছে। এ ছাড়া হোচনাবাদ, কোদালা, সরফভাটা, বেতাগী ও পোমরা ইউনিয়নে আরও ২৯টি ইটভাটায় তিন হাজারেরও বেশি শিশুশ্রমিক কাজ করছে।
ইসলামপুর ইউনিয়নের কয়েকটি ইটভাটা ঘুরে দেখা যায়, মগাইছড়ি এলাকার শাহ সোনালি ব্রিকস (এসএসবি) ভাটায় ইট তৈরির কাজ করছেন চার শতাধিক শ্রমিক। এঁদের মধ্যে ৪০-৪৫ জন শিশু রয়েছে। ওই ইটভাটায় কাজ করার সময় শিশুশ্রমিক মো. রফিক (১৩) জানায়, বয়স্কদের সঙ্গে একই সময়ে মাটি কেটে ইটভাটায় নেওয়া, পানি দিয়ে মাটি নরম করা, গর্তের মধ্যে মাটি কর্দমাক্ত করা, বালুমিশ্রিত কাদা মাটি দিয়ে ইট তৈরি করা, রোদে শুকিয়ে ও আগুনে পুড়িয়ে ইট তৈরির কাজ করে তারা। অথচ বয়স্ক শ্রমিকদের তুলনায় তারা পারিশ্রমিক পায় অর্ধেক।
রফিক আরও জানায়, বছরে ১০ মাস কাজ করার চুক্তিতে ২৪-২৫ হাজার টাকায় কাজ করছে সে। কিন্তু বয়স্ক শ্রমিকেরা পান ৫০-৫২ হাজার টাকা। আর একবার চুক্তি হলে কাজ ছেড়ে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এক প্রশ্নের জবাবে রফিক বলে, ‘বাবার কামাইয়ে সংসার চলে না। তাই লেখাপড়া করার জন্য ইস্কুলে যাওয়ার পরিবর্তে মা-বাবা টাকা নিয়ে ইটভাটার কাজে পাঠান। কাজ করার সময় অসুখ হলে চিকিৎসা পাই না। অসুখ নিয়ে ইট তৈরির কাজ করতে হয়। খাওয়ার সময় সবজি ও ভাত ছাড়া কিছুই জোটে না।’
শাহ সোনালি ব্রিকসের মালিক সাহাব মিয়া বলেন, ‘ইটভাটার শ্রমিকেরা রাঙ্গুনিয়া উপজেলার নয়। সব শ্রমিক আসে রাজশাহী, খুলনা, রংপুর, বরিশাল, নোয়াখালী, হাতিয়া ও উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকা থেকে। যারা মাঝির (একধরনের দালাল) আওতায় কাজ করে। ফলে শিশুশ্রমিকেরা বেতন কী রকম পায় তা আমার জানা নেই।’
উত্তর রাজানগর ইউনিয়নের বগাবিলি এলাকার খাজা ব্রিকসের শ্রমিকদের মাঝি মীর পাঠান বলেন, ‘ইটভাটার মালিকদের সঙ্গে চুক্তিভিত্তিতে শ্রমিকদের নিজ এলাকা থেকে কাজ করতে আনি। এর মধ্যে অতিদরিদ্র পরিবারের শিশুদেরও কম বেতনে কাজ করতে আনা হয়।’ তিনি জানান, প্রতি হাজার ইট তৈরির চুক্তিতে মালিকের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়। কিন্তু শ্রমিকদের বেতন দেওয়া হয় পুরো মৌসুমভিত্তিতে। এ ক্ষেত্রে শ্রমিকদের কম বেতনে যত বেশি কাজ করানো যায় ততই তাঁর লাভ। এটাই তাঁর ব্যবসা। এক প্রশ্নের জবাবে মীর পাঠান বলেন, যেসব শিশুশ্রমিককে কাজে আনা হয়েছে, তারা বিদ্যালয়ে যায় না। তাই তাদের ইটভাটার কাজে আনা হয়। যারা যায়, তাদের আনা হয় না। শিশুশ্রম আইনত নিষিদ্ধ জেনেও তাদের পরিবারের স্বার্থে কাজে আনা হয়। বয়স্কদের সঙ্গে তারা কাজ করলেও কম পারে। তাই তাদের বেতন কম।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভীর আজম সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইটভাটায় শিশুশ্রমিকদের কাজের ব্যাপারে আমার কিছুই জানা নেই।’ ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ভাটাগুলোতে অভিযান চালানোর আশ্বাস দেন ইউএনও।

No comments

Powered by Blogger.