পরিবেশ বিপর্যয়- বাউফলের ১২টি ইটভাটাই ড্রাম চিমনির, পুড়ছে কাঠ by মিজানুর রহমান

ফসলি জমি ও জনবসতিপূর্ণ এলাকায় করা যাবে না, রাখা যাবে না ড্রাম চিমনি, পোড়ানো যাবে না কাঠ—একটি ইটভাটা গড়তে এসব শর্ত পূরণ ও নিষেধাজ্ঞা মানা বাধ্যতামূলক। পটুয়াখালীর বাউফলে এসব শর্ত ও নিষেধাজ্ঞার কোনোটিই মানছেন না ইটভাটার মালিকেরা।
উপজেলায় ১২টি ইটভাটার সব কটিই ফসলি জমি ও বসতিপূর্ণ এলাকায় গড়ে উঠেছে। কংক্রিটের বদলে ড্রাম চিমনি ব্যবহার হচ্ছে। কয়লার বদলে বন উজাড় করে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। এর মধ্যে কয়েকটি ভাটা আবার বিদ্যালয়ের পাশে অবস্থিত।
একটি ভাটায় কাঠ চেরাইয়ের জন্য করাতকল বসানো হচ্ছে। ইট তৈরির মাটি আনা হচ্ছে পাশের তেঁতুলিয়া নদী থেকে। ‘মোল্লা ব্রিকস’ নামের এই ইটভাটা বাউফলের নাজিরপুর ইউনিয়নের ধানদী আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পূর্বপাশে অবস্থিত।
ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ (সংশোধন) আইন ২০০১-এর ৩ (খ)-এর উপধারায় বলা আছে, ‘লাইসেন্স ব্যতীত কোনো ব্যক্তি ইটের ভাটা স্থাপন করিতে পারিবেন না বা ইট প্রস্তুত বা ইট পোড়াইতে পারিবেন না।’ অথচ লাইসেন্স ছাড়া অনুমতি নেওয়া আছে, এমন দোহাই দিয়ে মোল্লা ব্রিকসে প্রতিদিন হাজার হাজার মণ কাঠ পোড়ানো হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলা সদর থেকে দেড় কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে ধানদী আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠসংলগ্ন সড়কের পাশে কাঠের বড় বড় স্তূপ। এর পূর্বপাশে কাঠ চেরাইয়ের জন্য বসানো হচ্ছে একটি করাতকল। এর ৫০ গজ পূর্বে প্রায় চার একর পাকা ধানখেতের মধ্যে মোল্লা ব্রিকসে অবৈধ ড্রাম চিমনির মাধ্যমে চলছে ইট পোড়ানোর কাজ। ইট তৈরির জন্য মাটি আনা হচ্ছে পাশের তেঁতুলিয়া নদীর তীর থেকে। ইটভাটাটির মালিক কুট্টি মোল্লা দাবি করেন, সব ধরনের অনুমতি নেওয়া আছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তিনি দেখাতে পারেননি।
উপজেলা বন বিভাগের কর্মকর্তা চান মিয়া জানান, কোনো ইটভাটার মালিককে বন বিভাগের পক্ষ থেকে কাঠ পোড়ানোর অনুমতি দেওয়া হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মোল্লা ব্রিকসের মতো বাউফল পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডে গাজী ব্রিকস, উপজেলার কালিশরী কলেজসংলগ্ন উত্তর পাশে সেভেন স্টার ব্রিকস, কালিশুরী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পূর্বপাশে শাহিন ব্রিকস, পশ্চিম কাছিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫০ গজ দূরে নাসিম ব্রিকস, শৌলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সংলগ্ন হিমা ব্রিকস, বগা লঞ্চঘাট এলাকার আলতাফ ব্রিকস, বাহেরচর বাজারের পাশে অরুনা এন্টারপ্রাইজ, লোহালিয়া ডিসি সড়কের হাতেম আলী মৃধা রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়সংলগ্ন একটি, ভূড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়সংলগ্ন ফসলি জমিতে একটিসহ কমপক্ষে ১২টি অনুমোদনহীন ইটভাটা গড়ে উঠেছে। যদিও ভাটামালিকদের দাবি, তাঁদের অনুমতি নেওয়া আছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইটভাটার এক মালিক জানান, কয়লা দিয়ে ইট পোড়াতে বেশি খরচ হয়। অধিকাংশ মালিক অল্প পুঁজি নিয়ে ব্যবসা করায় তাঁদের পক্ষে কয়লা দিয়ে ইট পোড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে তাঁরা কাঠ দিয়েই ইট পোড়াচ্ছেন।
পরিবেশ অধিদপ্তর, বরিশালের বিভাগীয় পরিচালক সুকুমার বিশ্বাস জানান, কোনোভাবেই ফসলি জমি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, জনবসতিপূর্ণ ও পৌর এলাকার মধ্যে ইটভাটা নির্মাণ করা যাবে না। আর ইটভাটায় কাঠ পোড়ানো ও ড্রাম চিমনি ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষেধ। শিগগির ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
ধানদী আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনজুর মোর্শেদ জানান, জনবসতিপূর্ণ এলাকা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাটবাজারসংলগ্ন ও ফসলি জমিতে গড়ে ওঠা এসব ইটভাটার ড্রাম চিমনির কালো ধোঁয়ার কারণে পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। ফসলি জমির ফলনও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বাউফল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ বি এম সাদিকুর রহমান জানান, শিগগির অনুমোদনহীন ইটভাটার মালিকদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

No comments

Powered by Blogger.