কাল সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে ১৮ দল

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে কাল রোববার সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট।
গতকাল শুক্রবার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন বিএনপির সমন্বয়ক তরিকুল ইসলাম।
গত বৃহস্পতিবার রাতে সরকার জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায়। ওই রাতেই বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দলীয় নেতাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে রোববার হরতাল ডাকার সিদ্ধান্ত হয়। গতকাল সকালে বিএনপির কার্যালয়ে ১৮ দলীয় জোটের মহাসচিব পর্যায়ের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়।
১৮ দলের সভায় বলা হয়, এভাবে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ফলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা দুর্বিষহ হয়ে পড়বে। কৃষকদের পণ্য উৎপাদন খরচ ও পরিবহন ব্যয় বাড়বে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে জাতীয় উৎপাদন।
সংবাদ সম্মেলনে তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম স্থিতিশীল আছে। যতটুকু জেনেছি, বর্তমানে জ্বালানি তেলের যে মূল্য রয়েছে, তাতে সরকারের লাভ হচ্ছে। নতুন মূল্য নির্ধারণ করায় আরও লাভ হবে।’ তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘এই লাভের অর্থ সরকার কোথায় ব্যয় করবে?’
বিএনপির সমন্বয়ক বলেন, ‘আমরা হরতাল দিতে চাইনি। সাধারণ মানুষ, কৃষক ও সামষ্টিক অর্থনীতির স্বার্থে আমরা সরকারের অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরাচারী সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে হরতাল আহ্বান করেছি।’ হরতাল সফল করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
এই হরতলে সংঘাত হবে কি না—এ প্রশ্নের জবাবে তরিকুল বলেন, ‘আমরা কোনো সংঘাত চাই না। সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে সংঘাত করতে চাইলে আমরাও সংঘাত করব।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির রুহুল কবির রিজভী ও আবদুস সালাম, জামায়াতে ইসলামীর শফিকুল ইসলাম, ইসলামী ঐক্যজোটের আবদুল লতিফ নেজামী, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, খেলাফত মজলিসের আহমেদ আবদুল কাদের, বাংলাদেশ ন্যাপের গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
হরতাল দেবে বামপন্থীরাও: জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে ১৫ জানুয়ারি হরতাল দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা। অন্যান্য বামপন্থী ও প্রগতিশীল দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে এই কর্মসূচি পালনের লক্ষ্যে আলোচনা করে আনুষ্ঠানিকভাবে এ কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হবে বলে বাম মোর্চার দায়িত্বশীল একজন নেতা প্রথম আলোকে বলেছেন।
গতকাল শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে জ্বালানি তেলের বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহারের দাবিতে পদযাত্রাপূর্ব সমাবেশে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘বাম মোর্চা ইতিমধ্যেই জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির বিরুদ্ধে হরতালের নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। বিভিন্ন গণতান্ত্রিক শক্তির সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে দ্রুততম সময়ের ভেতরেই সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করা হবে।’
এদিকে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে গতকাল রাজধানীতে পৃথক বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)।
সিপিবি-বাসদের যৌথ সমাবেশে বলা হয়, আইএমএফের শর্ত পূরণ করতে সরকার তেলের মূল্য বৃদ্ধি করেছে। এর মধ্য দিয়ে মূল্যবৃদ্ধিতে অতিষ্ঠ নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করল সরকার।
সিপিবির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হায়দার আকবর খান রনোর সভাপতিত্বে সমাবেশে সিপিবির রুহিন হোসেন (প্রিন্স), বাসদ নেতা রাজেকুজ্জামান (রতন), জুলফিকার আলী প্রমুখ বক্তব্য দেন।
সমাবেশ থেকে তেলের মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে ৯ জানুয়ারি দেশব্যাপী ‘ধিক্কার দিবস’ এবং ঢাকায় বিইআরসি কার্যালয়ের সামনে ‘গণধরনা’ পালনের কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে সিপিবি-বাসদ।
তোপখানা রোডে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ওয়ার্কার্স পার্টির বিক্ষোভ সমাবেশে দলীয় সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশা এই মূল্য বৃদ্ধিকে গরিব-মধ্যবিত্ত মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার শামিল বলে মন্তব্য করেন।
এ ছাড়া পৃথক বিবৃতিতে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির নিন্দা জানিয়েছে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল ও গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি।

No comments

Powered by Blogger.