অমানবিক!- তাদের কর্মকান্ডে মানুষের উজ্জ্বল অর্জনগুলো কালিমালিপ্ত হয়ে যায়; সমগ্র সমাজ এদের ধিক্কারে সোচ্চার হয়

মানুষ মনুষ্যত্ববোধের অধিকারী বলেই মানুষ। ভাল-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়, সত্য-অসত্য এবং কল্যাণ-অকল্যাণের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণের ক্ষমতা আছে বলেই সে সৃষ্টিরসেরা হিসেবে গর্ব করে। কিন্তু সেই মানুষেরই মধ্যে আবার এমন মানুষও আছে, যার কাজকর্ম আর আচরণে পশুকেও হার মানায়। তাদের কর্মকা-ে মানুষের উজ্জ্বল অর্জনগুলো কালিমালিপ্ত হয়ে যায়; সমগ্র সমাজ এদের ধিক্কারে সোচ্চার হয়।
এমনি কর্মকা-ের একটি হলো নারী ও শিশু নির্যাতন। এই নির্যাতনের রয়েছে বহুমাত্রিক রূপ। ধর্ষণ, যৌতুকের জন্য নির্যাতন ও হত্যা, এ্যাসিড সন্ত্রাস, ফতোয়াবাজির মাধ্যমে শাস্তি, বাল্যবিবাহ, তুচ্ছ কারণে একঘরে করে রাখা, প্রহার করা, নির্যাতন-নিপীড়ন শিশু-কিশোরী, তরুণী-যুবতীসহ সমাজের নারীদের ওপর হর-হামেশাই চলছে। আর এজন্য সর্বক্ষেত্রে শুধু পুরুষরাই যে দায়ী, তা নয়; অনেক সময় একশ্রেণীর মহিলাও এসব অপরাধে সক্রিয়ভাবে শামিল হয়। প্রতিদিন পত্র-পত্রিকার পাতায় নারী-শিশু-কিশোরী-তরুণীর নির্যাতনের নানা ধরনের খবর প্রকাশিত হতে দেখা যায়। এমনি দুটি কালিমাচিহ্নিত খবর প্রকাশিত হয়েছে গত ৩ জানুয়ারি কয়েকটি দৈনিকে। প্রথম খবরটি থেকে জানা যায়, বাল্যবিবাহের পর স্বামীগৃহে যেতে রাজি না হওয়ায় মাদারীপুর শহরের কালীবাড়ি এলাকার কুলসুম নামের পঞ্চম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে শিকল দিয়ে বেঁধে কয়েকদিন নির্যাতন চালিয়েছে তার মা। অন্য খবরটি হলো, নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার নাউতারা ইউনিয়নের পশ্চিম শালহাটি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘটিত একটি গোলমালের ঘটনার জের ধরে চতুর্থ শ্রেণীর এক ছাত্রীকে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে নিষ্ঠুরভাবে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন। আঘাত এতটাই বেশি যে, আহত ছাত্রীকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে।
প্রথম খবরে বর্ণিত মা আর দ্বিতীয় খবরের শিক্ষক মহোদয়Ñ এদের কোন্ ভাষায় নিন্দা জানানো হবে? মাত্র পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে যে মেয়েটি, তাকে শিকলে বেঁধে নির্যাতন করছে তার মা। তার অপরাধÑসে বাল্য বিয়ে মেনে নেয়নি। ধন্যবাদ জানাই সেই কিশোরীকে, যে লেখাপড়া শিখে মানুষ হওয়ার আগে স্বামীগৃহে যেতে চায়নি; নির্যাতন সয়েছে, কিন্তু নিজের সঙ্কল্প থেকে সরে আসেনি। আমরা ধিক্কার জানাই সেই শিক্ষককে, যিনি জ্ঞানের মশালবাহী হয়ে নিষ্ঠুরতার পরিচয় দিয়েছেন।
দুটি ঘটনা যথাযথভাবে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এটা সবাই প্রত্যাশা করে। তা না হলে এ ধরনের অপরাধ ক্রমাগত বাড়তে থাকবে; তাতে স্থবির হয়ে পড়বে সামাজিক শৃঙ্খলা, সুস্থিতি ও মানবিক মূল্যবোধ।

No comments

Powered by Blogger.