পৌষের প্রকৃতি, গ্রামীণ জীবনচিত্র বাহারি পিঠাপুলির পসরা- বটমূলে পৌষমেলা উদ্বোধন by মোরসালিন মিজান

বিচিত্র শহুরে জীবন। এখানে রংমাখা মুখ। ধার করা সংস্কৃতি। এর পরও কিছু মানুষ নিজেকে হারিয়ে খুঁজেন। আগামী প্রজন্মকে শেকড়ের সন্ধান দেয়ার চেষ্টা করেন। সে চেষ্টারই অংশ, বলা চলে পৌষমেলা। কংক্রিটের ঢাকায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে চলে আসছে এই আয়োজন। পৌষমেলা উদ্যাপন পরিষদের ব্যানারে পুরো কাজটি করছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় সংস্কৃতিকর্মীরা।
বিগত দিনের ধারাবাহিকতায় শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে এবারের মেলা। খুব ভোরে রমনা বটমূলে মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আলোচনা করেন ঝুনা চৌধুরী, হাসান আরিফ প্রমুখ। মেলার ঘোষণা পাঠ করেন বিশ্বজিৎ রায়। তিন দিনব্যাপী আয়োজনের প্রথম দিনটি ছিল যথারীতি উৎসবমুখর। গ্রামীণ ঐতিহ্যের পিঠাপুলি ছিল। ছিল গান, নাচ, কবিতা। সব মিলিয়ে চমৎকার আয়োজন। শুরু হয় গ্রামীণ ঐতিহ্যের বিচিত্র অনুষঙ্গ আইল্লা জ্বালিয়ে। অনুষ্ঠান মঞ্চের দুই পাশে দুটি আইল্লা জ্বালানো হয়। মিষ্টি এই আগুনে হাত পা সেকে নিতে ভুল করেননি অনেকে। শীতের সকালে প্রায় সব গ্রামেই এ দৃশ্য দেখা যায়। তবে শহরে বিরল। এ কারণে দারুণ কৌতূহল নিয়ে দৃশ্যটি দেখে আগামী প্রজন্মের সদস্যরা।
এরই মধ্যে সরব হয় অনুষ্ঠানমঞ্চ। ওস্তাদ মোমতাজ আলী খান সঙ্গীত একাডেমীর শিল্পীরা গান ধরেনÑ পৌষে বাও পাহাড়ী/ মাঠে নতুন তরকারি/শাক-সবজির সবুজ রঙে মন ভরিয়ে যায়...। হ্যাঁ, এই গানে পৌষের প্রকৃতি। গ্রামীণ জীবনের চিত্র। পরের গানে শহুরে মানুষদের গ্রামে ফেরার আহ্বান জানান স্বভূমি লেখক শিল্পীকেন্দ্রের শিল্পীরা। সুরে সুরে তাঁরা বলেনÑ ফিরে চল ফিরে চল মাটির টানে...। একক পরিবেশনার মধ্য দিয়ে এদিন পৌষ বন্দনা করেন শিল্পী মিনা বড়ুয়া, খায়রুল আনাম শাকিল, আবুবকর সিদ্দিক, ফাহিম হোসেন চৌধুরী, সুতপা রায়, খগেন্দ্রনাথ সরকার প্রমুখ। প্রায় সকলেরই কণ্ঠে ছিল পৌষ বন্দনা। কবিতার ভষায় শীতের কথা বলেছেন জনপ্রিয় আবৃত্তি শিল্পীরা। রবীন্দ্রনাথ থেকে আবৃত্তি করেন ডালিয়া আহমেদ। পৌষ ফাগুনের পালা পরিবেশন করে মুক্তধারা আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্র। তবে নাচ না হলে যে আনন্দের অনেকটাই অপূর্ণ থেকে যায়! আর তাই একাধিক নাচ ছিল প্রথম পর্বের অনুষ্ঠানে। তামান্না রহমানের পরিচালনায় নৃত্য পরিবেশন করে নৃত্যমের শিল্পীরা। দলীয় এই পরিবেশনা দারুণ উপভোগ করেন দর্শক। নৃত্যশ্রীর শিল্পীদের নাচটিও ছিল উপভোগ্য। এভাবে প্রায় দুপুর পর্যন্ত চলে। বিকেলে শুরু হয় দ্বিতীয় পর্ব। চলে রাত অবধি।
এদিকে মেলামঞ্চের দুই পাশে বসানো হয়েছে ৩৫টির মতো পিঠার স্টল। কিছু কিছু স্টলে বাহারি পিঠা। কেউ বাসা থেকে বানিয়ে এনেছেন। কেউ আবার স্টলের ভেতর তৈরি করছিলেন গরম গরম পিঠা। মেলায় আসা মানুষ পছন্দের পিঠাটি হাতে নিয়ে টপাটপ মুখে পুরছিলেন। টাকাও গুনতে হচ্ছিল। তবে আনন্দটার মূল্য অনেক। তবে এবারও পিঠার নাম পরিচয় জানার তেমন কোন সুযোগ রাখা হয়নি। অনেকে স্টলের কর্মীদের জিজ্ঞেস করে জানছেন পোয়া পিঠা, মাল পোয়া, পাকন পিঠা, চিতই, দুধ চিতইয়ের নাম। কাজটি সহজ করার অনুরোধ জানিয়েছেন মেলায় আগতরা। পৌষমেলা আগামীকাল রবিবার পর্যন্ত চলবে।

No comments

Powered by Blogger.