ঘন ঘন হরতালে চাপে অর্থনীতি, প্রত্যাহার চাইছেন ব্যবসায়ীরা by এম শাহজাহান

 ঘন ঘন হরতালের কারণে ফের অর্থনীতি চাপের মুখে পড়তে যাচ্ছে। নতুন বছরে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে হরতাল। আর তাই আগামীকাল রবিবারের হরতাল প্রত্যাহার চাইছে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়।
উদ্যোক্তারা মনে করছেন, হরতালের কারণে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ মুখ থুবড়ে পড়বে, বাড়বে মূল্যস্ফীতি এবং কর্মসংস্থান কমে আসবে। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী রফতানিমুখী পোশাক শিল্প ইমেজ সঙ্কটে পড়বে। ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা করছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে দেশ ভয়াবহ অর্থনৈতিক সঙ্কটের কবলে পড়তে যাচ্ছে। এদিকে, রাজনৈতিক দলগুলোকে হরতাল না করার আহ্বান জানাবে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিবিসিসিআই। একই সঙ্গে হরতালের বিকল্প কর্মসূচী নির্ধারণ করার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রস্তাব দেয়ার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। এর আগে সংগঠনটি দেশের সব এ্যাসোসিয়েশন ও চেম্বার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবে। এ প্রসঙ্গে এফবিসিসিআইয়ের নবনির্বাচিত সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহ্মেদ জনকণ্ঠকে বলেন, এফবিসিসিআই কখনও হরতালের নামে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম সমর্থন করে না। এর আগেও সংগঠনটির পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোকে অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু তারপরও হরতালের মতো ধ্বংসাত্মক কর্মসূচী দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, অর্থনীতি বাঁচলে দেশ বাঁচবে। তাই দেশের স্বার্থে হরতাল না করে এর বিকল্প কর্মসূচী দেয়া উচিত। এভাবে ঘন ঘন হরতাল দেয়া হলে এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে তা হবে দেশের সকল এ্যাসোসিয়েশন ও চেম্বার নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। দ্রুত ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে এ বিষয়ে বৈঠক করা হবে।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। পোশাক রফতানিতে এক নম্বর হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। কিন্তু সেই পোশাক শিল্প নিয়ে প্রতিনিয়ত ষড়যন্ত্র হচ্ছে। তাজরিনের অগ্নিকা- এবং শতাধিক শ্রমিকের মৃত্যুতে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয়েছে। এ অবস্থায় আবারও রবিবার হরতাল ডাকা হয়েছে। তিনি বলেন, সর্বোচ্চ এপেক্স বডি হিসেবে এফবিসিসিআই শীঘ্রই চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তাদের অবস্থান তুলে ধরবে।
এদিকে, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি একে আজাদ ইতোপূর্বে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার স্বার্থে আইন করে হরতাল বন্ধ করারও আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সংসদে সবার প্রতিনিধিত্বে চিরতরে হরতাল বন্ধে আইন পাস করা হোক। কিন্তু তার এ বক্তব্য ওই সময়ে ভালভাবে গ্রহণ করেনি রাজনৈতিকদলগুলো।
যদিও ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, যখন বাংলাদেশ একটি স্থিতিশীল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখছে, তখন এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে দরকার একটি স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ, যা জাতীয় আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এ অবস্থায় সরকার ও বিরোধী দলের আবেদন তারা যেন সংঘাতমূলক রাজনীতি পরিহার করে এবং আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান করেন। আর এটাই দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাবে।
এদিকে, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর কারণে আগামীকাল রবিবার সারাদেশে বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিকদলগুলো সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দিয়েছে। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, অকটেন ও পেট্রোলের দাম বাড়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর এর তেমন নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। তবে ডিজেলের দাম বাড়ার কারণে অর্থনীতি চাপের মুখে পড়বে। এর ফলে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাবে। তাই ডিজেলের দাম যাতে না বাড়ে সেদিকে সরকারের বেশি নজর দেয়া প্রয়োজন। তবে এই ইস্যুতে হরতাল করার অর্থ হলো দেশের অর্থনীতিকে আরেক দফা চাপের মুখে ফেলে দেয়া। তাই ব্যবসায়ী সম্প্রদায় এই হরতালের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এ প্রসঙ্গে দেশের একাধিক শীর্ষ পর্যায়ের ব্যবসায়ী নেতা জনকণ্ঠকে বলেছেন, অর্থনীতির স্বার্থে হরতাল-অবরোধ পরিহার করা প্রয়োজন।
তাঁরা বলছেন, যাদের মধ্যে ন্যূনতম দেশপ্রেম আছে তাঁরা এ ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচী দিতে পারে না। রাজনৈতিক দলগুলো দেশের জন্য নয়, নিজেদের স্বার্থে ধ্বংসাত্মক কর্মসূচী দিচ্ছে। আর এতে মারা পড়ছে সাধারণ মানুষ।
নারায়ণগঞ্জে কাজী আকরাম ॥ স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ থেকে জানান, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি কাজী আকরামউদ্দিন আহাম্মেদ বলেছেন, হরতাল দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দেয়। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি ধরে রাখতে হলে হরতালের মতো আত্মঘাতী কর্মসূচী পরিহার করতে হবে। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোকে আন্দোলনের কর্মসূচী হিসেবে হরতালের বিকল্প অন্যকিছু ভাবতে হবে।
বৃহস্পতিবার রাতে নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের গ্রীনলনে নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স ও নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত ৭টি জাতীয়ভিত্তিক ব্যবসায়ী সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সভাপতি কাজী আকরামউদ্দিন আহাম্মেদের নেতৃত্বাধীন নব-নির্বাচিত পরিচালনা পর্ষদকে এই সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহাম্মেদ, সিনিয়রসহ সভাপতি মনোয়ারা হাকিম আলী, সহ সভাপতি হেলালউদ্দিন, পরিচালক ও বাংলাদেশ ক্লথ মার্চেন্টস এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি প্রবীর কুমার সাহা, বজলুর রহমানসহ পরিচালকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.