ব্যাংক বাসাবাড়িতে চুরি ডাকাতি ঠেকাতে ওয়াচম্যান- ঢাকায় ডিজিটাল পুলিশ প্রটেকশন সিস্টেম by গাফফার খান চৌধুরী

ব্যাংক, বাসাবাড়ি কিংবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে চুরি-ডাকাতিসহ যেকোন ধরনের অপরাধ ঠেকাতে ঢাকায় প্রথমবারের মতো ডিজিটাল পুলিশ প্রটেকশন সিস্টেম চালু হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অত্যাধুনিক সিকিউরিটি সিস্টেমটি চালু করেছে।
মনুষ্যবিহীন আধুনিক সিসিটিভিটির নাম দেয়া হয়েছে ওয়াচম্যান। স্বল্প সময়ের মধ্যেই চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশেও চালু হচ্ছে ডিজিটাল পুলিশ প্রটেকশন সিস্টেম (ডিপিপিপি)। যেসব প্রতিষ্ঠানে সিস্টেমটি লাগানো আছে সেসব প্রতিষ্ঠানে যেকোন ধরনের অপরাধ সংঘটিত হওয়া মাত্র সে খবর স্বয়ংস্ক্রিয়ভাবে পৌঁছে যাবে প্রতিষ্ঠানের মালিক ও পুলিশ কন্ট্রোলরুমে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, প্রায়ই বিভিন্ন ব্যাংক, স্বর্ণের দোকানে, বাসাবাড়িতে বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে চুরি, ডাকাতিসহ নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়ে থাকে। সহজেই অপরাধীদের শনাক্ত করা যায় না। বিশেষ করে গত কয়েক বছরের মধ্যে কয়েকটি আলোচিত চুরি ও ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এরমধ্যে ছিল বহুল আলোচিত রাজধানীর ধানম-ি ব্র্যাক ব্যাংকের ছাদ ফুটো করে ডাকাতির ঘটনা। এছাড়া স্বর্ণের দোকানেই অন্তত ৪০টি আলোচিত ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ঘটে যাওয়া অধিকাংশ ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা এজন্য বিশেষ প্রযুক্তি নির্ভর এই সিস্টেম চালু করা হয়েছে। বাংলাদেশে ইজি গ্রুপ এ ধরনের সিসিটিভি আমদানি করছে। যা খুবই আধুনিক। মূলত এটি একটি বিশেষ ধরনের ডিভাইসযুক্ত সিসিটিভি। প্রতিটি সিসিটিভি ৫শ’ বর্গফুট জায়গা কভার করার ক্ষমতাসম্পন্ন। ঘরের কোন জায়গায় লাগানো হলে সিসিটিভি স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করে থাকে। দেশে ব্যবহৃত সিসিটিভিগুলো শুধু ছবি বা ভিডিও ধারণ করার ক্ষমতাসম্পন্ন। কিন্তু কোন দুর্ঘটনা সম্পর্কে স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রতিষ্ঠানের মালিক বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে বার্তা পাঠাতে পারে না।
হালের ওয়াচম্যান অপরিচিত কোন ব্যক্তি বা অন্য কোন কিছু ক্যামেরার রেঞ্জের মধ্যে আসা মাত্র সে সম্পর্কে প্রতিষ্ঠানের মালিককে এসএমএস, ভিডিও ফুটেজ, এমএমএস, পাঠাতে সক্ষম। প্রতিষ্ঠানে আগুন লাগামাত্র সে খবর পৌঁছে যাবে ফায়ার সার্ভিস কন্ট্রোলরুমে। আর ক্যামেরার মেমোরির বাইরে যেকোন ব্যক্তি সম্পর্কে মোবাইল ফোনে ম্যাসেজ পাঠাবে প্রতিষ্ঠানটির মালিক ও পুলিশ কন্ট্রোলরুমে। আর কেউ যদি প্রতিষ্ঠানের তালা, সাটার বা অন্যকোন ধ্বংসাত্মক কর্মকা- পরিচালনার উদ্দেশ্যে কোন কর্মকা- চালাতে থাকে তার ছবিসহ স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রতিষ্ঠানের মালিক ও সংশ্লিষ্টদের মোবাইল ফোনে ও পুলিশ কন্ট্রোলরুমে বার্তা পাঠাবে সিসিটিভিটি। এছাড়া ইজি গ্রুপের নিজস্ব কন্ট্রোলরুম রয়েছে। কন্ট্রোলরুম থেকে ২৪ ঘণ্টা সিসিটিভিগুলোকে মনিটরিং করা হয়। কন্ট্রোলরুমের পক্ষ থেকেও প্রতিষ্ঠানের মালিক বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বা পুলিশ বা ফায়ার সার্ভিসকেও জানানো হয়। মালিক দেশে বা বিদেশে যেখানেই থাকুন না কেন মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক থাকলে সিসিটিভি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বার্তা পাঠাতে সক্ষম।
সিস্টেমটিতে একটি ইমার্জেন্সি প্যানিক বাটন রয়েছে। অনেক সময়ই দুর্ঘটনাকবলিত জায়গায় অনেকেই আটকা পড়েন। এক্ষেত্রে ওই ব্যক্তি প্যানিক বাটনে চাপ দিলেই ওই ব্যক্তির ছবি, নাম ঠিকানা, ঘটনাস্থলসহ একটি বার্তা চলে যাবে পুলিশ কন্ট্রোলরুমে।
মোবাইল প্রযুক্তিনির্ভর তারবিহীন এই নিরাপত্তা ব্যবস্থায় শুধুমাত্র একটি সুদৃশ্য কন্ট্রোলারের প্রয়োজন হয়। সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের জন্য কোন প্রকার রেকর্ডিং কনসোল, টিভি বা পর্যবেক্ষণকারীর প্রয়োজন হয় না। স্বয়ংক্রিয় সিকিউরিটি সিস্টেমটি নিজে থেকেই পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে তাৎক্ষণিক সর্তক বার্তা পাঠাতে সক্ষম। অনেক সময় বার্তা পাঠানোর পরও পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি যথা সময়ে পৌঁছতে না পারে বা দুষ্কৃতকারীরা যদি লুটপাট শেষে সিসিটিভিটি খুলেও নিয়ে যায় তাতেও কোন সমস্যা নেই। কারণ ততক্ষণে সিসিটিভিটির মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অপরাধ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য, ভিডিও চিত্র চলে যাবে সিসিটিভির মেমোরিতে থাকা মনোনীত ১০ জনের মোবাইল ফোনে এবং সংশ্লিষ্ট পুলিশ কন্ট্রোলরুমে। যা দেখে সহজেই অপরাধীদের শনাক্ত করা সম্ভব। ইতোমধ্যেই ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে এ সিস্টেম চালু করা হয়েছে। অল্প দিনের মধ্যেই চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশেও সিস্টেমটি চালু করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে ইজি গ্রুপের চীফ অপারেটিং অফিসার আব্দুল্লাহ আল আমিন জনকণ্ঠকে জানান, হালনাগাদ প্রায় দেড়শতাধিক নামীদামী প্রতিষ্ঠান এ সিস্টেমের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। ইস্টার্ন ব্যাংক, আপন জুয়েলার্স, ভেনাস জুয়েলার্স, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড, হাতিম পাইপ, রিজেন্ট এয়ারওয়েজসহ বহু নামীদামী প্রতিষ্ঠান সিস্টেমটির সঙ্গে যুক্ত। কোন সময় বিদ্যুত চলে গেলে সিসিটিভিটি ৬ ঘণ্টা স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলতে সক্ষম। সিসিটিভিটিতে ৩২ জিবি (গিগা বাইট) সাপোর্ট করে। ক্যামেরার ডিভাইসের মেমোরিতে প্রতিষ্ঠানের মালিক বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, পুলিশ কন্ট্রোলরুমসহ অন্যান্য বিষয়ে আগাম ডাটা দেয়া থাকে। ক্যামেরাটি এমনিতেই ৪ দিন পর্যন্ত টানা ভিডিও রেকর্ড করতে সক্ষম। ক্যামেরাটিতে রিচার্জেবেল একটি ব্যাটারি রয়েছে। সিসিটিভি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ১০টি মোবাইল নম্বরে ছবি ও এসএমএস পাঠাতে সক্ষম। সিসিটিভির মেমোরিতে যেসব মোবাইল নম্বর দেয়া থাকবে, সেসব মোবাইল ফোনে বিশ্বের যেকোন প্রান্তে বসে যে ঘরে সিসিটিভি বসানো আছে সেই ঘরের জীবন্ত শব্দ শোনা যাবে। ই-মেইলের মাধ্যমে যেকোন মুহূর্তের ছবিও দেখা সম্ভব।প্রাথমিকভাবে এর একেকটি ক্যামেরার দাম রাখা হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। আর মাসিক ৫ শ’ টাকা হারে চার্জ রয়েছে। প্রতিটি ক্যামেরায় আলাদা আলাদা গোপন কোড নম্বর আছে। ক্যামেরার মালিক ইচ্ছে করলে নিজের ইচ্ছেমতো গোপন কোড নম্বর ব্যবহার করতে পারবেন। এতে করে ইজি গ্রুপের নিজস্ব কেন্দ্রীয় কন্ট্রোলরুম থেকে ইচ্ছে করলেও সিসিটিভির সিস্টেম বা কার্যক্রমের ধরন পাল্টানো সম্ভব নয়। কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে সিসিটিভি বন্ধ করে দিয়ে অপরাধীদের সঙ্গে যোগসাজশ করে কোন অপরাধ করাও সম্ভব নয়। কারণ কোড নম্বর সিসিটিভির কার্যক্রম পরিবর্তন করামাত্র এ সংক্রান্ত একটি বার্তা পৌঁছে যাবে প্রতিষ্ঠানের মালিকসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে।
ইতোমধ্যেই বেসরকারী ইস্টার্ন ব্যাংক এই সিস্টেমটি চালু করেছে। ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আলী রেজা ইফতেখার জানিয়েছেন, ব্যাংকিং সেক্টরে এই আধুনিক সিকিউরিটি সিস্টেমটি অত্যন্ত কার্যকর হবে। সিস্টেমটি স্বয়ংক্রিয় হওয়ায় কোন ব্যক্তির ভুলের কারণে কোন দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা নেই। এমনকি কোন ভুল বার্তা পৌঁছারও কোন সম্ভাবনা নেই। এটি অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য। সিস্টেমটি ব্যবহার করে ব্যাংক ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান উপকৃত হবে।
সিস্টেমটি সম্পর্কে ভেনাস জুয়েলার্সের মালিক জি সি মালাকার জানিয়েছেন, এমন সিস্টেম চালুর ফলে তা জুয়েলারি দোকানে চুরি, ডাকাতিরোধে সহায়ক হবে। এটি অত্যন্ত কার্যকর একটি সিস্টেম।

No comments

Powered by Blogger.