স্বামীর কাছে না যাওয়ায় শিকলে বেঁধে নির্যাতন

মাদারীপুর শহরের কালীবাড়ী এলাকায় কুলসুম আক্তার নামের ৫ম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে বিয়ে দেয়ার পরে স্বামীর কাছে না যাওয়ায় ঘরের ভেতরে বেঁধে রেখে তিন দিন ধরে নির্যাতন চালিয়েছে মা, মামা, বড় ভাই ও বোন।
বিষয়টি জানাজানি হলে সোমবার স্থানীয় সাংবাদিক ও মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শহরের কালীবাড়ী এলাকায় গিয়ে মেয়েটিকে উদ্ধারের চেষ্টা চালায়। এ সময় কুলসুমের ভাই বাধা দিলে বিষয়টি পুলিশসহ জেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়। পরে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ঝুমুর বালা পুলিশসহ ঘটনাস্থলে এসে কুলসুমকে উদ্ধার ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বড় বোন ফাতেমা, মামা আলী আজগর, ঝুমুরের কথিত স্বামী রেজাউল করিমকে আটক ও প্রত্যেককে ১ মাসের কারাদণ্ড ও ১ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ১৫ দিনের কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন। অভিযুক্ত কুলসুমের মা ফিরোজা বেগম ও বড় ভাই সোহাগ পলাতক। কুলসুম মাদারীপুর শহরের কালীবাড়ী এলাকার রহমান খানের মেয়ে এবং শহরের উকিলপাড়া রিজিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর ছাত্রী।
নির্যাতিতা কুলসুম আক্তার জানায়, গত ২২শে ডিসেম্বর মায়ের কথামতো বড় ভাই সোহাগ কালকিনির গোপালপুরের আজিজ শিকদারের ছেলে মাদারীপুরের পাবলিক লাইব্রেরি এলাকার একটি মোটরসাইকেল দোকানের মেকানিক রেজাউল করিমের সঙ্গে তার বিয়ে দেন। সে বিয়েতে রাজি না হওয়ায় এবং কথিত স্বামীর সঙ্গে সঙ্গ না দেয়ায় তিন দিন আগে তার মা ফিরোজা বেগম, মামা আলী আজগর, বড় ভাই সোহাগ ও বোন ফাতেমা তার পায়ে শিকল পরিয়ে ঘরের খুঁটির সঙ্গে তালা লাগিয়ে রাখে। গত মঙ্গলবার কুলসুমের কথিত স্বামী তার সঙ্গে শারীরিক মিলনের চেষ্টা করলে কুলসুমের চিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে এলে রেজাউল অপকর্মে ব্যর্থ হয়। এ ঘটনায় কুলসুমের ভাই ও বোন তাকে বেদম মারপিট করে আহত করে। ভাই-বোনের এলাপাতাড়ি মারপিটে কুলসুমের মাথা ফেটে যায় এবং হাত কেটে গেলে তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়ে বাসায় এনে আবারও শিকল দিয়ে আটকে রাখা হয়। এ ব্যাপারে কুলসুমের বড় বোন ফাতেমা বেগম জানায়, তার ছোট বোন প্রাইমারিতে পড়াশোনা করলেও এর আগে সে একাধিকবার অন্য ছেলের সঙ্গে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে পুলিশের সহায়তায় ধরে আনা হয়েছে। তার বার বার পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় বিরক্ত হয়েই মা ও ভাই তাকে ওই ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ঝুমুর বালা বলেন, মেযেটিকে যেভাবে নির্যাতন করা হয়েছে সেটা অমানবিক। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ৩ জনকে শাস্তি দেয়া হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.