হাতিরঝিল প্রধানমন্ত্রীর নববর্ষের উপহার-পদ্মা সেতুর নকশা করতে বলা হলো সেনাবাহিনীকে

রাজধানীর পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে গৃহীত সমন্বিত হাতিরঝিল প্রকল্প উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'নতুন বছরে ঢাকাবাসীর জন্য উপহার হলো এই হাতিরঝিল। আমরা মানুষের জন্য উন্নত সমাজব্যবস্থা রেখে যেতে চাই।
এই প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে ঢাকাবাসী স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার জায়গা পেল।'
গতকাল বুধবার দৃষ্টিনন্দন প্রকল্পটি উদ্বোধনের আগে প্রধানমন্ত্রী গুলশান এলাকায় ঝিলের উত্তর ও দক্ষিণ পাশের কিছু জায়গা ঘুরে দেখেন। এরপর সকাল ১১টার দিকে তিনি হাতিরঝিলের উদ্বোধনের নামফলক উন্মোচন করেন। উন্মোচনের পরপরই ঝিলের পানিতে একঝাঁক রাজহাঁস ছেড়ে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে শুরু হয় বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'হাতিরঝিল প্রকল্প নিয়ে এমন অনেক সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে, যাতে মানুষের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছিল। সমালোচনার কারণে এ প্রকল্পের কাজগুলো ঠিকমতো হয় কি না, সেদিকে নজর দিয়েছি।' তিনি আরো বলেন, 'সমালোচনা করুন, তবে এমনভাবে বলবেন না, যাতে মানুষের মনে হতাশার সৃষ্টি হয়।'
শেখ হাসিনা বলেন, 'জনগণের ক্ষমতায়ন, শান্তির মডেল ও অটিজমের প্রস্তাব জাতিসংঘে পাস হয়েছে। আজ আমরা এই প্রকল্পও সুন্দরভাবে করতে পারলাম। আমরা নিজেরা কাজটি করে বিশ্বের কাছে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি। ১৯৯৬ সালে হাতিরঝিল বন্ধ করে বসতি স্থাপন ও স্কুল-কলেজ নির্মাণের প্রস্তাব পেয়েছিলাম। ওই প্রস্তাবে আমি রাজি হইনি। এখন প্রকল্পটি করার ফলে নগরবাসীর উৎসব অনুষ্ঠানের আরেকটি জায়গা তৈরি হলো।'
প্রধানমন্ত্রী জনগণকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে বলেন, 'শীত-বৃষ্টি-গরমের মতো বিভিন্ন ধরনের আবহাওয়ার মধ্য দিয়ে আমাদের যেতে হয়। আবহাওয়ার প্রভাবও আমাদের মধ্যে রয়েছে। কিন্তু যেকোনো কাজ করতে হলে ধৈর্য ধরতে হয়।'
এ প্রকল্পের কারণে ক্ষতিগ্রস্তদের ফ্ল্যাট এবং যাঁদের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে, তাঁদের প্লট দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আব্দুল মান্নান খানকে নির্দেশ দেন।
অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, 'আগে একটি কালভার্ট তৈরি করতে হলেও বিদেশ থেকে প্রকৌশলী আনতে হতো। এখন আর তা করতে হবে না। হাতিরঝিল আমাদের দেশের সেনাবাহিনীই করেছে। এটা বিশ্বে একটি মডেল হয়ে থাকল।' এ সময় তিনি সেনাবাহিনীর উদ্দেশে বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আপনারা পদ্মা সেতুর নকশা শুরু করুন।'
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান খান, আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি, সেনাপ্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভুইয়া, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিব খন্দকার শওকাত হোসেন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী নুরুল হুদা, হাতিরঝিলের প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবু সাঈদ মো. মাসুদ।
একনজরে প্রকল্প : ৩০২ একর জমির ওপর বিস্তৃত এক হাজার ৯৭১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ প্রকল্প কারওয়ান বাজারের সোনারগাঁও হোটেল থেকে বেগুনবাড়ী, মগবাজার, গুলশান হয়ে রামপুরা পর্যন্ত বিস্তৃত। এর চারপাশে তৈরি করা হয়েছে যানবাহন চলাচলের জন্য এঙ্প্রেস রোড। এ ছাড়া আরো রয়েছে সার্ভিস রোড। দুই পাশের যোগাযোগ সহজ করার জন্য তৈরি করা হয়েছে চারটি ব্রিজ। পথচারীদের চলাচলের জন্য করা হয়েছে প্রায় ৯ কিলোমিটার ফুটপাত। এ ছাড়া লেকসাইডে করা হয়েছে প্রায় ১০ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে মগবাজার, মধুবাগ, উলন, রামপুরা, মেরুল বাড্ডা, প্রগতি সরণি, গুলশান, তেজগাঁও এলাকার যানজট অনেকটা নিরসন হবে। এখন খুব সহজেই রামপুরা থেকে কারওয়ান বাজার পৌঁছানো সম্ভব।
রাজউক, সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোর, ঢাকা ওয়াসা ও এলজিইডির যৌথ উদ্যোগে বাস্তবায়িত হাতিরঝিল প্রকল্প উদ্বোধনের পর গতকাল সারা দিন হাজার হাজার মানুষ সেখানে ঘুরতে যায়। বাহারি আলোকসজ্জা দেখতে রাতেও ভিড় জমে মানুষের। প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, এখনো প্রকল্পের পুরো কাজ শেষ হয়নি। গুলশান-মেরুল বাড্ডা লিংক রোডে একটি ব্রিজ এবং প্রগতি সরণিতে দুটি ইউলুপের কাজ চলছে। এ ছাড়া আরো কিছু কাজ বাকি। ২০১৩ সালের মধ্যে পুরো কাজ শেষ হবে।

No comments

Powered by Blogger.