গ্রেপ্তার পাঁচজনের রিমান্ড মঞ্জুর- পুরুষ দেখলেই আঁতকে উঠছে মেয়েটি

টাঙ্গাইলে ধর্ষণের শিকার সেই মেয়েটি পুরুষ দেখলেই আঁতকে ওঠে। কারও সঙ্গে কথা বলতে চাইছে না। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) চিকিৎসাধীন রয়েছে সে।
এদিকে ওই ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া পাঁচজনের রিমান্ড গতকাল বুধবার মঞ্জুর করেছেন টাঙ্গাইলের আদালত।
ওসিসির সমন্বয়কারী ও গাইনি চিকিৎসক বিলকিস বেগম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, মেয়েটির মানসিক অবস্থা গুরুতর। হাসপাতালের মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা তাকে চিকিৎসা দিচ্ছেন। মেয়েটি গুরুতর অসুস্থ, তবে চিকিৎসায় সে সেরে উঠবে। এ জন্য সময় লাগবে। তিনি বলেন, মেয়েটির চোখে-মুখে আতঙ্ক। পুরুষ দেখলেই আঁতকে ওঠে। কারও সঙ্গে সে কথা বলতে চায় না। খাবারও খায় না। ঘাটতি পূরণে তাকে স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া মানসিক অবস্থার কারণে তাকে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হচ্ছে। সকালে তার ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে।
মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়া মেয়েটিকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতাল থেকে গত সোমবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী শিরীন শারমিন চৌধুরী ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী চিকিৎসাধীন মেয়েটিকে দেখতে গতকাল ওসিসিতে যান। তাঁরা তার চিকিৎসার খোঁজখবর নেন।
পরে প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, মেয়েটির সুচিকিৎসা ও তার জন্য আইনি ব্যবস্থা নিতে সবকিছু করা হবে। দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করবে সরকার। তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, তাঁদের মাধ্যমে তিনি এই খবর জেনেছেন।
টাঙ্গাইল সদর উপজেলার একটি বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ওই ছাত্রীকে গত ৬ ডিসেম্বর তার এক বান্ধবী বিয়ের অনুষ্ঠানে নেওয়ার কথা বলে মধুপুরের আউশনারা ইউনিয়নের বোকারবাইদ গ্রামে এস এম নুরুজ্জামানের বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে মেয়েটিকে তিন দিন আটকে রেখে ধর্ষণ করা হয়। তারা পরে তাকে রেললাইনের পাশে ফেলে রেখে যায়। লোকলজ্জার ভয়ে মেয়েটির পরিবার প্রথমে ঘটনাটি চেপে যায়। প্রথম দফায় টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকদেরও বিষয়টি জানায়নি পরিবার। চিকিৎসা শেষে বাড়িতে নেওয়ার পর মেয়েটি অসুস্থ হয়ে পড়ে। দ্বিতীয় দফায় তাকে ওই হাসপাতালে নেওয়ার পর পরিবার চিকিৎসকদের প্রকৃত ঘটনা খুলে বলে।
পরে একটি মানবাধিকার সংস্থা ঘটনাটি টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে জানায়। এরপর ৩০ ডিসেম্বর রাতে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ এই ঘটনায় নুরুজ্জামান, হারুন অর রশিদ, মনিরুজ্জামান, শাজাহান এবং ধর্ষণে সহযোগিতার অভিযোগে মেয়েটির ওই বান্ধবীকে গ্রেপ্তার করে। ৩১ ডিসেম্বর মেয়েটির ভাই এই পাঁচজনের বিরুদ্ধে মধুপুর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন।
মধুপুর থানার পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তার হওয়া পাঁচজনকে সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানিয়ে গত মঙ্গলবার আদালতে পাঠানো হয়। কিন্তু সেদিন শুনানি হয়নি। টাঙ্গাইলের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম জান্নাতুল ফেরদৌস ইবনে হক গতকাল শুনানি শেষে ওই চার ব্যক্তির প্রত্যেকের তিন দিন করে এবং মেয়েটির বান্ধবীর এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মধুপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মনিরুজ্জামান জানান, আসামিদের আজ বৃহস্পতিবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য জেলহাজত থেকে থানায় আনা হবে।
মানববন্ধন ও সমাবেশ: মেয়েটিকে ধর্ষণের ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও বিচারের দাবিতে গতকাল বিকেলে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে মধুপুর জেলা বাস্তবায়ন কমিটি। একই দাবিতে মধুপুর শহীদ সঞ্চৃতি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মিছিল ও মানববন্ধন করে। মধুপুর বাসস্ট্যান্ডে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন শেষে সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মধুপুর জেলা বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক মাসুদ পারভেজ। সমাবেশে বক্তব্য দেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) মধুপুরের সমন্বয়কারী সালাহউদ্দিন আহমেদ, মধুপুর শহীদ সঞ্চৃতি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ বজলুর রশীদ খান, মধুপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র শরিফুল ইসলাম, গোলাম কিবরিয়া, তারেক হায়দার, আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।
দোষীদের শাস্তির দাবিতে আজ বেলা ১১টায় টাঙ্গাইল শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন যৌথভাবে সমাবেশ করবে।
মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা টাঙ্গাইল জেলা শাখা মেয়েটিকে আইনি সহায়তা দিচ্ছে। টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. আনিছুর রহমান মিঞা গতকাল মেয়েটির চিকিৎসার জন্য তার ভাইয়ের হাতে ২০ হাজার টাকার চেক তুলে দেন।
(মেয়েটির বান্ধবী অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় বাংলাদেশ শিশু আইন এবং প্রথম আলোর নীতিমালা অনুযায়ী তার নাম-পরিচয় প্রকাশ করা হলো না।)

No comments

Powered by Blogger.