নাগরিকের নাট্যোৎসব ছায়ানটে দ্বিজেন্দ্রলাল খ. by এনামুল হক মুকুল

এ সপ্তাহের ঢাকার দু’টি মঞ্চই ছিল ভিন্ন রকম। এর মধ্যে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় ডিএল রায়ের সার্ধশত জন্মবর্ষ উপলক্ষে ছায়ানটের স্মরণানুষ্ঠানে লক্ষ করা যায় ভিন্নতা।
ধনধান্য পুষ্পভরা আমাদের এই বসুন্ধরা ও বঙ্গ আমার জননী আমাদের মাঝে এমন অসংখ্য কালজয়ী গান দিয়ে বাংলা সংগীত ভা-ারকে সমৃদ্ধ করে গেছেন দ্বিজেন্দ্রলাল রায়। আর এ সংগীত স্রষ্টা শুধু গান নয়, রচনা করেছেন কবিতা ও নাটক। পঞ্চ কবির অন্যতম এই কবির সার্ধশত জন্মবর্ষ উপলক্ষে তাঁকে স্মরণের আয়োজন করে ছায়ানট। শুক্রবার সন্ধ্যায় দ্বিজেন্দ্রগীতির সুর মাধুর্যে মুখরিত হয়ে ওঠে ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন মিলনায়তন। আর গানের সঙ্গে ছিল তাঁকে নিবেদিত কথামালা। আয়োজনের শুরুতেই ছিল ছায়ানটের শিল্পীদের সম্মিলিত পরিবেশনা। অনেক কণ্ঠ মিলে যায় এক সুরে। গীত হয়ে সেই বিখ্যাত দ্বিজেন্দ্রগীতি বঙ্গ আমার জননী আমার/ধাত্রী আমার, আমার দেশ/কেন গো মা তোর লক্ষ নয়ন- শোনা যায় এসব গান। কথায় ডিএল রায়কে স্মরণ করেন কণ্ঠশিল্পী নীলোৎপল সাধ্য। কথা শেষে আবারও ধ্বনিত হয় গানের সুর। সুললিত কণ্ঠে অনিন্দিতা চৌধুরী গেয়ে যান এ কি মধুর ছন্দ। একক কণ্ঠে গান শোনান নন্দিতা দত্ত, আজিজুর রহমান তুহিন, ঝুমা খন্দকার, সিফায়েত উল্লাহ মুকুল, শম্মা রায়, ইফফাত আরা দেওয়ান। জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি টানা হয়। অপরদিকে জাতীয় নাট্যশালায় সংগীত গুরু কলিম শরাফী স্মরণে শুরু হয়েছে সপ্তাহব্যাপী নাট্যোৎসব। আজীবন সুরের সাধনায় মগ্ন ছিলেন কিংবদন্তি রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী কলিম শরাফী। তবে শুধু গান নয়, সংস্কৃতির নানা শাখায় ছিল তাঁর বিচরণ। সংস্কৃতির মাধ্যমে দিনবদলের স্বপ্ন দেখা মানুষটি থিয়েটারের প্রতিও ছিলেন দারুণ অনুরাগী। দেশভাগের পর সম্পৃক্ত হয়েছিলেন ভারতীয় গণনাট্যের সংঘের সঙ্গে। ১৯৪৪ সালে অভিনয় করেছিলেন নবান্ন নাটকে। স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে ১৯৯৭ সালে তখনকার নাগরিক নাট্যাঙ্গন এবং এখনকার নাগরিক নাট্যাঙ্গন অনসাম্বলের সভাপতিত্ব গ্রহণ করেন। এরপর অমৃত্যু এই দায়িত্ব পালন করেছেন। আর নাগরিক নাট্যাঙ্গন অনসাম্বলের আয়োজনে শুরু হয়েছে কলিম শরাফী স্মরণে ছয় দিনের নাট্যোৎসব। ভরা থাক স্মৃতি সুধায়- রবীন্দ্রনাথের এই বাণীকে ধারণ করে আয়োজন করা হয়েছে উৎসব। উৎসবে দেশের তিনটি নাট্যদলের সঙ্গে অংশ নিচ্ছে কলকাতার নাট্যদল বহুরূপী। পৌষের সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমীর জাতীয় নাট্যশালায় উৎসবের উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতার আয়োজন করা হয়। এতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বরণ্যে চিত্রশিল্পী হাশেম খান, নাট্যজন আতউর রহমান, শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী ও গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল ঝুনা চৌধুরী। সুর সাধককে নিয়ে নাট্যোৎসবের শুরুটাও ছিল সুরাশ্রিত। উদ্বোধনী সন্ধ্যায় মঞ্চস্থ হয় নাগরিক নাট্যাঙ্গন অনসাম্বলের প্রযোজনায় ‘যুগলবন্দি’ পর্যায়ক্রমে এই মঞ্চে মঞ্চায়িত হয় ছয়টি নাটক। দ্বিতীয় দিন ছিল দর্শকদের উপচেপড়া ভিড়। এ দিন কলকাতার বহুরূপী নাট্যদল মঞ্চস্থ করে তীর্থঙ্কর রচিত ও কুমার রায় নির্দেশিত নাটক ‘দীপদ-’ উৎসবের অন্য নাটকগুলো হলো কলকাতার বহুরূপী নাট্যদলের ছাঁচ ভাঙ্গা স্মৃতি থিয়েটারের মেরাজ ফকিরের মা, নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের রক্ত করবী ও নাগরিক নাট্যাঙ্গন অনসাম্বলের নাটক ‘বিবিসাব’ অপরদিকে দিল্লীর মা-ি হাউসের আমানি মিলনায়তনে কয়েক শ’ দর্শক-শ্রোতা তন্ময় হয়ে উপভোগ কররেন দেড় ঘণ্টাব্যাপী রবীন্দ্র নাটক ‘মুক্তধারা’ অজস্র করতালি দিয়ে উৎসাহ জানালেন তারা। নাটকটির রচনা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। পর্যালোচনা করলে দেখা যায় এক রাজ্যের দুটি জনপদ। একটি শিবতরাই, অন্যটি উত্তরকুট। শিবতরাইয়ের মানুষ সরল-সাদাসিধা। তাদের আছে প্রাণের প্রাচুর্য। কণ্ঠে গান আছে, নেই খাজনা দেয়ার মতো সামর্থ্য। আছে রেশম শিল্পের জন্য আইন কানুন। কিন্তু বিপণন করার মতো বাজার নেই। আর উত্তরকুট জনপদ সে এক জটিল জীবনবৃন্ত। সেখানে নাগরিক জীবন শোষণ আছে, নেই দয়া ভালবাসা, আছে ক্ষমতার লোভ। কিন্তু পীড়িতকে নিপীড়ন করতে কোন দ্বিধা নেই।
প্রযুক্তি সাধনায় উৎকর্ষ আছে কিন্তু শক্তির অপব্যবহারের কোন তুলনা নেই। ফলে উত্তরকুটের জনপদ স্বাভাবিকভাবে আশা করে শিবতরাইয়ের জনপদ তাদের অধীনে বশ্যতা স্বীকার করুক। তা যখন হবার নয় তখন উত্তরকুটের রাজা রণজিৎ প্রথমে শিবতরাইয়ের অর্থনৈতিক রুট নন্দী সংকট রুদ্ধ করলেন। এভাবেই এগিয়ে চলে নাটকের কাহিনী...। মানবজীবনের মুক্তির বারতা ঘোষণার মধ্য দিয়ে শেষ হয় নাটক ‘মুক্তধারা’। প্রাণবন্ত অভিনয়ে এ গল্পকেই জীবন্ত করে তুললেন ফেরদৌসী মজুমদার, ত্রপা মজুমদার, মারুফ কবির ও নূর জামান রাজা।

No comments

Powered by Blogger.