কিউইদের ৪৫ রানের লজ্জা

সাইমন ডৌল বেশ হতাশ। ভবিষ্যদ্বক্তা হিসেবে খানিকটা নাম কুড়াতে চেয়েছিলেন সাবেক নিউজিল্যান্ড পেসার ও ধারাভাষ্যকার। টেস্ট শুরুর আগে বলেছিলেন, পঞ্চম দিনের টিকিট ছাপানোর প্রয়োজন নেই।
কাল লাঞ্চের সময় সেই ডৌল বিরস বদনে বলছেন, ‘আমার তো মনে হয় না ম্যাচ তৃতীয় দিনে গড়াবে!’ র‌্যাঙ্কিংয়ে এক আর আট নম্বর দলের লড়াই। তলানিতে থাকা দলটি আবার মাঠের বাইরের নানা সমস্যায় জর্জরিত। লড়াইটা অসমই ছিল। কিন্তু তাই বলে ম্যাচের প্রথম সেশনেই টেস্টের ভাগ্য একরকম লেখা হয়ে যাবে, এতটা নিশ্চয়ই কেউ ভাবতে পারেনি! তবে ভেন্যু যখন কেপটাউন, অপ্রত্যাশিত কিছুই যেন প্রত্যাশিত। মাইকেল ক্লার্কদের ৪৭-এর পর আরেকটি অভাবনীয় স্কোর দেখল, দেখাল নিউল্যান্ডস। এবার ৪৫ রানে গুটিয়ে গেল নিউজিল্যান্ড! উইকেটে কোনো জুজু নেই, এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ দিন শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার রান ৩ উইকেটে ২৫২। সেঞ্চুরি করেছেন আলভিরো পিটারসেন। আমলা ও ক্যালিস যেভাবে খেলেছেন, আউট হওয়ার আগ পর্যন্ত মনে হয়নি, আউট হতে পারেন। স্কোরকার্ড তো কথা বলছেই। উইকেট যে ভয়ংকর কিছু নয়, সেটির আরেকটা প্রমাণ টস জিতে ব্রেন্ডন ম্যাককালামের ব্যাটিং নেওয়া। উইকেটে ঘাসের ছোঁয়া আছে, তবে এমন কিছু নয়। রৌদ্রোজ্জ্বল আকাশে মেঘের ছিটেফোঁটা নেই। কিন্তু খেলা শুরু হতেই নিউজিল্যান্ডের ইনিংস ঢেকে যেতে থাকল কালো মেঘে। নিজের আর দলের চরম ব্যর্থতায় টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে প্রথম দিনটা ম্যাককালামের জন্য হলো বিভীষিকাময়। নিউজিল্যান্ডের সঙ্গী একগাদা লজ্জার রেকর্ড।
মূল হন্তারক ভারনন ফিল্যান্ডার, এই টেস্টে যাঁর খেলাই ছিল অনিশ্চিত। সকালেই ফিটনেস টেস্ট দিয়েছেন। অধিনায়ক স্মিথের দৃষ্টিতে ‘সাময়িক ফিট।’ আগেই বলে দিয়েছিলেন লম্বা স্পেল করাবেন না। সেটার প্রয়োজনও হলো না। ফিল্যান্ডারের প্রথম ৫ ওভার শেষেই নিউজিল্যান্ড ধ্বংসস্তূপ! প্রথম ওভারে ফিরিয়েছেন গাপটিলকে, তৃতীয় ওভারে ম্যাককালাম ও ব্রাউনলিকে। তৃতীয় ওভার শেষে ফিল্যান্ডারের নামের পাশে ৩-৩-০-৩! পরের দুই ওভারে আরও ২ উইকেট, ৫ উইকেট পেয়ে গেছেন ২৫ বলেই। এর চেয়ে কম বলে ৫ উইকেট আছে ইতিহাসে শুধু দুই অস্ট্রেলিয়ান আর্নি টোশাক (১৯ বল) ও হিউ ট্রাম্বলের (২৩ বল)। ৭ রানে পেয়েছেন ৫ উইকেট, এর চেয়ে কম রান দিয়ে ৫ উইকেট তুলে নিতে পেরেছেন মাত্র তিনজন। এমন ভয়ংকর কোনো বোলিং করেননি ফিল্যান্ডার। নিজের মতোই জায়গায় বল ফেলে গেছেন, আর ছোট ছোট সুইং। বাকি ‘কাজটা’ কিউই ব্যাটসম্যানরাই করেছেন। শুধু ওয়াটলিংয়ের আউটটিতেই ব্যাটসম্যানের দায় ছিল কম।
ফিল্যান্ডারের হাতে শুরু, মরকেল-স্টেইন জুটিতে শেষ। ফ্লিনের ফিরতি ক্যাচ নিয়ে যখন যবনিকা টানলেন স্টেইন, লাঞ্চ হতে তখনো বাকি ১৯ মিনিট। রানের হিসাবে এই ৪৫ নিউজিল্যান্ডের তৃতীয় সর্বনিম্ন, তবে ওভারের হিসাবে সবচেয়ে ছোট। আর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সব দেশ মিলিয়েই সবচেয়ে কম রানের ইনিংস। দারুণ এক আউটসুইঙ্গারে ব্রেসওয়েলের স্টাম্প উড়িয়ে চতুর্থ দক্ষিণ আফ্রিকান হিসেবে ৩০০ উইকেটের মাইলফলক ছুঁয়েছেন স্টেইন। পরে সেই ব্রেসওয়েলকে চার মেরেই টেন্ডুলকার-পন্টিং-দ্রাবিড়ের পর চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে ১৩ হাজার রান পেরিয়ে গেছেন জ্যাক ক্যালিস।
শুরুতেই স্মিথকে আউট করেছেন ব্রেসওয়েল। টেস্টের প্রথম সেশনের ১১ উইকেট এই ম্যাচকে জায়গা দিয়েছে রেকর্ড বইয়ে। পরে ১১.২ ওভারে প্রথম ইনিংসে লিড নিয়ে নিজেদের রেকর্ড ছুঁয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা (আগেরটি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২০০৫ সালে)। প্রথম দিন শেষেই ২০৭ রানের লিড দক্ষিণ আফ্রিকার, হাতে ৭ উইকেট। ডৌলের ভাবনাটাকেই মনে হচ্ছে বাস্তবতা, ম্যাচ আজই শেষ হয়ে গেলেও অবাক হওয়ার থাকবে না! তথ্যসূত্র: টেন ক্রিকেট ও ওয়েবসাইট।

No comments

Powered by Blogger.