চরম দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই- ধর্ষকদের দৌরাত্ম্য

দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা কেবল দিল্লিতেই ঘটেনি, বাংলাদেশের টাঙ্গাইলেও ঘটেছে। ঘরে আটকে রেখে তিন দিন ধরে চারজন মিলে অমানুষিক নির্যাতন করেছে নবম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে। প্রচণ্ড মানসিক আঘাতে অসুস্থ হয়ে মেয়েটি এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এদিকে ৩১ ডিসেম্বর বিকেলে পঞ্চগড়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছে প্রথম শ্রেণীর এক ছাত্রী, যে নিতান্তই একটি শিশু। ধর্ষকদের দৌরাত্ম্য এমনভাবে বেড়ে চলেছে যেন এদের থামানোর কেউ নেই। একেকটা ঘটনা ঘটার পর গতানুগতিক ধরপাকড় চলে, কিন্তু চূড়ান্তভাবে শাস্তি নিশ্চিত হয় না বলে ধর্ষণের পুনরাবৃত্তি বন্ধ হয় না।
টাঙ্গাইলের ঘটনায় বান্ধবীর প্রতারণায় মেয়েটি চার তরুণের আগ্রাসী রিপুর শিকার হয়। গত ৬ ডিসেম্বর মেয়েটিকে আটক করা হয়। তারপর তিন দিন একটানা নির্যাতনের পর তারা তাকে রেললাইনের পাশে ফেলে রেখে যায়। সামাজিক সম্মানহানির আশঙ্কায় নির্যাতিত মেয়েটির পরিবার বিষয়টি গোপন করার চেষ্টা করে। বাধ্য হয়ে ১২ ডিসেম্বর তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলেও চিকিৎসকদের কাছে তার দুর্ভোগের আসল কারণটি গোপন করা হয়। পরে চিকিৎসার স্বার্থে ২২ ডিসেম্বর চিকিৎসকেরা জানতে পারেন, মেয়েটি ভয়াবহ যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। অবশেষে মানসিক অসুস্থতার জন্য তাকে নিয়ে আসা হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। পঞ্চগড়ের ঘটনায় বাড়ির ছোট্ট মেয়েটি পাতা কুড়াতে বাগানে গেলে মো. আসলাম (৩৫) নামের এক প্রতিবেশী কৌশলে তাকে ঘরে নিয়ে ধর্ষণ করে।
এই দুটি উদাহরণ মাত্র। এ রকম অজস্র ধর্ষণের ঘটনায় অজস্র পুরুষ শত শত শিশু-কিশোরীসহ বিভিন্ন বয়সী নারীর ওপর যৌন সহিংসতা চালাচ্ছে। এসব ঘটনার ভগ্নাংশই সংবাদ হয়, মামলা হয় আরও কম এবং বিচারে শাস্তি পাওয়ার উদাহরণ হাতে গোনা যায়। অন্য যেকোনো অপরাধের শিকার প্রকাশ্যে ফরিয়াদ করে, মামলা করে, বিচারের জন্য চেষ্টা চালায়। কিন্তু ধর্ষক পুরুষ জানে, অপরাধের শিকার বিষয়টি গোপন করবে, তার পরিবার তাকে চুপ করিয়ে রাখবে। আর বিচার চাইতে গেলেও পুরুষালি সমাজের সৃষ্টি তথাকথিত ‘লোকলজ্জা’, ‘সতীত্ব’, ‘অপবাদ’ ইত্যাদির কারণে ন্যায়বিচার সুদূরপরাহত হবে।
শিশু থেকে বৃদ্ধা সব বয়সী নারীর জন্য বাংলাদেশ ক্রমেই অনিরাপদ হয়ে উঠছে। কখন কোন পুরুষ কোন নারীর প্রতি ধর্ষণের মতো চরম সহিংসতা ঘটাবে, তা বলার উপায় নেই। নির্যাতিত নারীর প্রতি সহানুভূতির অভাব এবং আইন ও বিচারব্যবস্থার শিথিলতা, পুরুষবান্ধব সামাজিক বিধিবিধান—সবকিছুই নারীকে আরও অনিরাপদ এবং ধর্ষণের সামনে অরক্ষিত করে রাখে। কিন্তু এভাবে আর চলতে দেওয়া যায় না। ধর্ষণের এই বাড়বাড়ন্ত অবশ্যই রোধ করতে হবে। সে জন্য প্রতিটি ধর্ষণের বিচার যেমন নিশ্চিত করতে হবে, তেমনি ধর্ষণ-সহায়ক মন-মানসিকতাও গোড়া থেকে বদলাতে হবে। একটি ঘটনায়ও যেন ধর্ষণের বিচারে শিথিলতা না আসে।

No comments

Powered by Blogger.