রাজনৈতিক সংকট-দ্রুত অর্থবহ সংলাপে বসুন

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সোমবার সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে সৃষ্ট সংকট নিরসনের জন্য প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক পর্যায়ে যোগাযোগ হচ্ছে। তাদের সাড়া পেলে আনুষ্ঠানিক আলোচনা হবে।
প্রধান দুই রাজনৈতিক দল ও জোটের আলোচনা তো দূরের কথা, যখন মুখ দেখাদেখি কার্যত বন্ধ, তখন এ ধরনের মন্তব্য জনমনে কিছুটা হলেও স্বস্তি এনে দেওয়ার কথা। হরতাল-ধর্মঘট-অবরোধে নয়, ভাংচুর-অগি্নসংযোগে নয়; বরং আলোচনার মাধ্যমেই যে কোনো ইস্যুর নিষ্পত্তির পক্ষে রয়েছে বাংলাদেশের জনমত। সব দল এতে আন্তরিক সাড়া দেবে, এটাই প্রত্যাশিত। কিন্তু বরফ গলতে গলতেও যেন গলল না। বিএনপির শীর্ষ পর্যায় থেকে জানিয়ে দেওয়া হলো, অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চলছে না। এটাও বলা হলো, জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্যই 'তলে তলে আলোচনার কথা বলা হচ্ছে। তলে তলে আলোচনা নয়, তলে তলে আপনারা ষড়যন্ত্র করছেন।' এ ধরনের পাল্টাপাল্টি অবস্থানে জনগণ কেবল হতাশ হবে না, নতুন করে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার শঙ্কায় তাদের উদ্বেগও বাড়বে। আমরা আশা করব, দেশের শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ তাদের অবস্থানে পরিবর্তন আনবেন এবং আগামী নির্বাচন যাতে সব দলের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে অবাধ ও সুষ্ঠু পরিবেশে শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হতে পারে, তার উপায় উদ্ভাবন করবেন। একে অপরের অবস্থানে চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র খুঁজে লাভ নেই। বাক্যবাণে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করারও দরকার নেই। 'সাপকে বিশ্বাস করা যায়, তবু আওয়ামী লীগকে বিশ্বাস করা যায় না' কিংবা 'বিরোধী নেত্রী সাপের ঝাঁপি মাথায় নিয়ে চলেছেন'_ এ ধরনের পরস্পরের বিরুদ্ধে কথার মারপ্যাঁচে কর্মীদের মনোবল হয়তো চাঙ্গা করা যায় কিন্তু জনগণের উৎকণ্ঠা তাতে বিন্দুমাত্র কমে না। সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের মেয়াদ এক বছরও নেই। নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুর ফয়সালা তাই দ্রুত করে ফেলতে হবে। এ নিয়ে যত দেরি হবে, জটিলতা তত বাড়বে। বিরোধীরা দাবি আদায়ে আন্দোলন তীব্র করার হুমকি দিয়ে চলেছে। সরকারও অবস্থানে অনড়। এই অচলাবস্থার অবসান ঘটাতেই হবে। রাজনৈতিক ইতিহাসে প্রকাশ্যে আলোচনার পাশাপাশি নেপথ্যে যোগাযোগের নজির ভূরি ভূরি। বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ অতীতে সেটা করেছেও। কিন্তু চূড়ান্ত বিচারে সিদ্ধান্তমূলক আলোচনা হতে হবে জনগণের জ্ঞাতসারেই। সরকার যখন অনানুষ্ঠানিক পর্যায়ে আলোচনা চলার কথা বলছে, তখন ধরে নিতে হবে যে, এর পেছনে সত্যতা রয়েছে। ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলে অনেক প্রাজ্ঞ ও বিচক্ষণ রাজনীতিক রয়েছেন। এ উপলব্ধি তাদের থাকার কথা যে, পরোক্ষ আলোচনা কোনোভাবেই দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে না। বিরোধী পক্ষের দাবির পেছনে জনমতের উল্লেখযোগ্য অংশের সমর্থন রয়েছে। আবার বিরোধী পক্ষকেও বুঝতে হবে, আওয়ামী লীগ এবং তাদের মহাজোটও জনসমর্থনে মোটেই পিছিয়ে নেই। তাই সমঝোতার জন্য খোলা মন নিয়েই উভয় পক্ষকে অগ্রসর হতে হবে। এটাও মনে রাখতে হবে, গ্রহণযোগ্য একটি ফর্মুলা উদ্ভাবনের জন্য প্রধান দুই দলকেই ছাড় দিতে হবে। কেহ কারে নাহি জিনে সমানে সমান_ এমন ধরনের অচলাবস্থা সৃষ্টি হলে তার জন্য জনগণ কিন্তু কাউকেই ছাড় দেবে না।

No comments

Powered by Blogger.