জামায়াত-পুলিশ সংঘর্ষে মালিবাগ রণক্ষেত্-সাবেক এমপি তাহেরসহ আটক ১৭, আহত ৫০

রাজধানীর মালিবাগ রেলগেট এলাকায় গতকাল বুধবার বিকেলে জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এতে পুলিশসহ আহত হয়েছে কমপক্ষে ৫০ জন।
ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে জামায়াতে ইসলামীর মজলিসে শুরার সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরসহ ১৭ জনকে আটক করেছে পুলিশ ও র‌্যাব। জামায়াতের দাবি, পুলিশের শটগানের গুলিতে ঢাকা মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি নুরুল ইসলাম বুলবুলসহ কমপক্ষে ৩৫ জন আহত হয়েছেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) সাইফুল ইসলাম জানান, জামায়াত-শিবিরকর্মীরা রামপুরা, মগবাজার ও আশপাশের এলাকায় হামলা ও নাশকতা চালাতে পারে- এ খবর পেয়ে গতকাল দুপুর থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রস্তুত ছিল। ওই সময় বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালানো হয়। বিকেলে আকস্মিকভাবে রামপুরার বিভিন্ন গলি থেকে শতাধিক জামায়াত-শিবিরকর্মী একটি মিছিল নিয়ে সামনে এগোতে থাকে। মিছিলকারীরা গাড়ি চলাচলে বাধা দিলে পুলিশ তাদের ধাওয়া করে। সে সময় ওই মিছিল এবং আশপাশের বিভিন্ন গলি থেকে তিন-চার শ জামায়াত-শিবিরকর্মী পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এতে কমপক্ষে ১১ জন পুলিশ সদস্য আহত হন।
এসি সাইফুল জানান, ঘটনার সময় জামায়াত-শিবিরকর্মীর তুলনায় পুলিশের সংখ্যা কম ছিল। হামলাকারীদের কাছে ককটেল ও অস্ত্র ছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়লে শটগানের গুলি ছোড়া ছাড়া অন্য কোনো উপায় ছিল না।
জানা গেছে, মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃত কেন্দ্রীয় নেতাদের মুক্তি এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে গতকাল জামায়াতের ঢাকা মহানগর শাখার পূর্বঘোষিত কর্মসূচি ছিল। দুপুরের পর থেকেই বিচ্ছিন্নভাবে পাঁচ-সাতজন করে নেতা-কর্মী পথচারীর বেশে মালিবাগ চৌধুরীপাড়া এলাকায় জড়ো হতে থাকে। বিকেল ৪টার দিকে মালিবাগ রেলগেট এলাকায় জামায়াত-শিবিরের কয়েক শ নেতা-কর্মী মিছিল বের করে। সে সময় আশপাশের গলি, মার্কেট ও ফুটপাতেও ছদ্মবেশে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা অবস্থান নেয়। মিছিল নিয়ে তারা সরকারবিরোধী স্লোগান দিয়ে সামনে এগোতে থাকে। সে সময় পুলিশ মিছিলকারীদের ধাওয়া দেয়। দ্রুত আশপাশের এলাকায় ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ওই সময় জামায়াত-শিবিরকর্মীরা বিভিন্ন গলি ও ভবন থেকে পুলিশের ওপর ইট-পাথর ছোড়ে; হামলাও চালায়। সংঘর্ষ বাধলে মালিবাগ থেকে রামপুরা টিভি সেন্টার পর্যন্ত পুলিশি অ্যাকশনে ও গুলি-টিয়ার শেলের শব্দে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়ায়। রামপুরা-মালিবাগ সড়কের দুই পাশের ভবনগুলোর বাসিন্দারা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে দরজা-জানালা বন্ধ করে দেয়। দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। সাধারণ পথচারীরা ভয়ে ছোটাছুটি করতে থাকে। এলাকায় থমথমে পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এক ঘণ্টা ধরে চলা সংঘর্ষে এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সন্ধ্যার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
ঢাকা মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদ জানান, পুলিশ তাঁদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে লাঠিচার্জ করলে সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষের সময় নুরুল ইসলাম বুলবুলসহ কমপক্ষে ৩৫ জন নেতা-কর্মী পুলিশের শটগানের গুলিতে আহত হয়।
রামপুরা থানার ওসি দেলোয়ার হোসেন খান কালের কণ্ঠকে বলেন, জামায়াত-শিবিরের মিছিল ও আশপাশের গলি থেকে পুলিশের ওপর ইট-পাথর ছোড়া হয়। সেই সময় টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট এবং শটগানের ছররা গুলি ছুড়ে হামলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়। সংঘর্ষের সময় ব্যাপক ভাঙচুর চালায় জামায়াত-শিবিরকর্মীরা। ঘটনাস্থল থেকে ১৭ জনকে আটক করা হয়েছে। ঘটনায় ইন্ধন দেওয়ার জন্য জামায়াত নেতা তাহেরকে আটক করেছে র‌্যাব। অন্য হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে একাধিক টিম আশপাশের এলাকায় তল্লাশি চালাচ্ছে।
সূত্র জানায়, যুদ্ধাপরাধের বিচার বিঘি্নত করতে জামায়াত-শিবিরের পরিকল্পিত হামলার খবর আগেই পেয়ে যান গোয়েন্দারা। সেই মোতাবেক সংশ্লিষ্ট এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়।
গতকাল দুপুর থেকে রামপুরা, মগবাজারসহ আশপাশের এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, পুলিশ, র‌্যাব ও গোয়েন্দারা সেসব জায়গায় অবস্থান নিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর নজরদারির মধ্যেই জামায়াত-শিবির পুলিশের ওপর হামলা চালায়।
র‌্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান লে. কর্নেল জিয়াউল আহসান কালের কণ্ঠকে বলেন, ঢাকাসহ সারা দেশে জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডব ঠেকাতে গোয়েন্দা নজরদারি চলছে। এ অবস্থায়ই গতকাল বিকেলে পুলিশের ওপর হামলা চালায় জামায়াত-শিবির। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে র‌্যাব সদস্যরা পুলিশের সঙ্গে যোগ দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেন। পরে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করতে খিলগাঁও ও রামপুরা এলাকায় অভিযান চালানো হয়। সন্ধ্যা ৭টার দিকে জামায়াত নেতা আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরকে খিলগাঁও এলাকায় তাঁর এক আত্মীয়ের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন নাশকতামূলক ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.