বোয়ালখালী আওয়ামী লীগ- খুঁড়িয়ে চলছে দলীয় কার্যক্রম by মুহাম্মদ শামসুল হক

১৪ বছর ধরে সম্মেলন হচ্ছে না বোয়ালখালী আওয়ামী লীগের। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে দলীয় কার্যক্রম। দায়সারাভাবে নির্দিষ্ট কয়েকটি জাতীয় দিবসের কর্মসূচি পালন ছাড়া নেতা-কর্মীদের সক্রিয় রাখার জন্য তেমন কোনো সাংগঠনিক কার্যক্রম নেই।
এ কারণে হতাশ হয়ে পড়েছেন সাধারণ কর্মী-সমর্থকেরা।
উপজেলা ও ইউনিয়ন যুবলীগ-ছাত্রলীগের কার্যক্রমও চলছে একইভাবে। ছাত্রলীগের অধিকাংশ নেতা-কর্মীর ছাত্রত্ব নেই। থানা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুল ইসলামসহ (দুই ছেলে) কেউ কেউ হয়েছেন একাধিক সন্তানের বাবা। নেতা-কর্মীদের বেশির ভাগই দলের চেয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যে সরকারি সুযোগ-সুবিধা আদায়ের চেষ্টায় নিয়োজিত। এ অবস্থায় দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচি ঐক্যবদ্ধভাবে পালিত হলেও তাতে নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি থাকে কম।
স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কাগজে-কলমে আনুষ্ঠানিকভাবে বিভক্তি না থাকলেও দুটি আলাদা পক্ষ রয়েছে বোয়ালখালী আওয়ামী লীগে। এক পক্ষের প্রতি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোছলেম উদ্দিন এবং অপর পক্ষের প্রতি সহসভাপতি এস এম আবুল কালামের সহানুভূতি রয়েছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নূরুল আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক বোরহান উদ্দিন মো. এমরান, প্রচার সম্পাদক রেজাউল করিম ওরফে বাবুল প্রমুখ। মোছলেম উদ্দিনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। এস এম আবুল কালামের অনুসারীদের মধ্যে রয়েছেন সহসভাপতি আহমদ হোসেন ও এমদাদুল হক, যুগ্ম সম্পাদক এস এম সেলিম, আইন সম্পাদক রুস্তম আলী, কোষাধ্যক্ষ রেজাউল করিম ওরফে রাজা, সমাজকল্যাণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম প্রমুখ।
অনেকের অভিযোগ, স্থানীয় ও জেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতাদের উদাসীনতার কারণে দীর্ঘদিন ধরে কমিটিগুলোর সম্মেলন হচ্ছে না। ফলে যুবলীগ, ছাত্রলীগের বয়স্ক নেতাদের আওয়ামী লীগে স্থান না হওয়ায় সৃষ্টি হচ্ছে না নতুন নেতৃত্ব। পুরোনো কমিটির অনেকে বয়স্ক এবং অসুস্থ হয়ে পড়ায় সাংগঠনিক কাজে নিয়মিত সময় দেওয়া তাঁদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। এরই মধ্যে পূর্ব গোমদণ্ডী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মফিজুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম, আমুচিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মুন্সি মিয়াসহ বিভিন্ন কমিটির অন্তত পাঁচজন নেতা-কর্মী মারা গেছেন। এভাবে নেতৃত্ব শূন্যতার কারণে সার্বিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছে সংগঠন। এ নিয়ে সাধারণ নেতা-কর্মীদের মাঝে রয়েছে ক্ষোভ ও হতাশা।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘রাজনীতি করতে গেলে পদের জন্য লবিং হতেই পারে, সেটা রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা বলা যায়, কোন্দল নয়।’
যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন সংগঠনের সম্মেলন না হওয়ার জন্য জেলা কমিটির উদাসীনতাকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, ‘শিগগিরই জেলা কমিটি থেকে সাড়া না পেলে আমরা নতুন প্রজন্মকে নিয়ে উপজেলা কমিটি করার উদ্যোগ নেব।’
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আতাউল হকের মতে, ক্ষমতায় এলে যেকোনো দল সাংগঠনিকভাবে কিছুটা ঝিমিয়ে পড়ে। বোয়ালখালীও তার ব্যতিক্রম নয়। তিনি বলেন, ‘এখানে সাংগঠনিক তৎপরতা দুর্বল হলেও জাতীয় কর্মসূচিগুলো আমরা পালন করছি।’ আতাউল হক জানান, সম্প্রতি দলের বর্ধিত সভায় শিগগিরই জেলা সম্মেলন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হয়েছে। জেলা সম্মেলনের পর উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সম্মেলন করা হবে।
দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এস এম আবুল কালাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন কমিটির সম্মেলন ও নেতৃত্ব নির্বাচন না হওয়ায় দলে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। পুরোনোদের অনেকে দলের চেয়ে স্বার্থসিদ্ধিতে ব্যস্ত রয়েছে। সম্মেলনের মাধ্যমে সাংগঠনিকভাবে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি করা গেলে তারা নতুম উদ্যমে দলকে এগিয়ে নেওয়ার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ত।
এ প্রসঙ্গে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোছলেম উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিগত নির্বাচন, বাবু ভাইয়ের প্রেসিডিয়াম সদস্য হওয়া, পরবর্তী সময়ে তাঁর অসুস্থতা ও মৃত্যুসহ নানা কারণে জেলা কমিটির সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি। আশা করি কিছুদিনের মধ্যে জেলা কমিটির সম্মেলন শেষ করে উপজেলা কমিটিগুলো করা সম্ভব হবে। দলে বিভক্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যেকোনো দলে সব নেতা-কর্মী সব সময় সক্রিয় থাকেন না। বিভিন্ন বিষয়ে ভিন্নমত থাকাও স্বাভাবিক। সম্মেলনের পর সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।
জানা যায়, বোয়ালখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ১৯৯৮ সালের অক্টোবরে। আতাউল হককে সভাপতি এবং নূরুল আলমকে সাধারণ সম্পাদক করে তিন বছরের জন্য গঠিত ৬১ সদস্যের এই কমিটি ২০০২ সালে অ্যাডহক ভিত্তিতে পুনর্বহাল করা হয় কোনো সম্মেলন ছাড়াই।

No comments

Powered by Blogger.