রমনার পর নান্দনিক হাতিরঝিল ॥ ঢাকার ফুসফুস- ০ ঢাকাবাসীর জন্য নববর্ষের উপহার ॥ উদ্বোধনীতে প্রধানমন্ত্রী- ০ কার্বন-সিসার দূষণমুক্ত নিশ্বাস ফেলার মনোরম স্থান- ০ উদ্বোধনের পর দর্শনার্থীদের ঢল by ফিরোজ মান্না

হাতিরঝিল নাম নিলেই নাকে কেমন যেন দুর্গন্ধ লাগত। ময়লা-পচা পানির ডোবা ছিল এই ঝিলটি। ঝিলের চার ধার ঘিরে গড়ে ওঠা বস্তি। মহানগরীর জঞ্জাল ছিল দীর্ঘকাল হাতিরঝিল বেগুনবাড়ী খালটি। এখন আর এটি নগরীর জঞ্জাল হিসেবে কোন দিনই ফিরে আসবে না।
রমনার পর এটিই এখন রাজধানীর ফুসফুস হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। এখানে ঘুরে বেড়াতে গেলে নির্মল বাতাস আর মনোরম পরিবেশের দেখা মিলবে। মানুষ প্রাণ খুলে নিশ্বাস ফেলতে পারবেন। নান্দনিক সৌন্দর্যে সাজানো হয়েছে বহুল প্রত্যাশিত হাতিরঝিলকে। দৃষ্টিনন্দন এই ঝিলের জল এখন স্বচ্ছ। ময়লা আবর্জনার দেখা মিলবে না। সরকারের সদিচ্ছায় হাতিরঝিলটি এখন নগরবাসীর বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর মানুষের হাত লেগে একটা মনোরম পরিবেশ তৈরি হয়েছে হাতিরঝিল বেগুনবাড়ী সমন্বিত প্রকল্প। এখানে মানুষ প্রাণ খুলে নিশ্বাস নিতে পারবে। বিনোদনের কেন্দ্র হিসেবে হাতিরঝিল হবে একটা গুরুত্বপূর্ণ স্থান। নান্দনিক সৌন্দর্যের বহুল প্রতীক্ষিত এ হাতিরঝিল। নগরবাসীর জন্য এই স্থানটি উদ্বোধন করা হয়েছে বুধবার সকালে।
ঝিলের ওয়াকওয়ের দুই ধার ঘেঁষে ফুলে ফুলে সাজানো বাগান আর নানা রংবেরঙের পতাকায় সজ্জিত হাতিরঝিল উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কড়া নিরাপত্তার মধ্যে হাতিরঝিল প্রকল্পের উদ্বোধনের পরই প্রকল্প এলাকায় মানুষের ঢল নামে। রাজধানীর কার্বন আর সিসাযুক্ত বাতাসের মধ্যে এই এলাকাটি মুক্ত হিসেবে মানুষের মধ্যে দারুণ উৎসাহের সৃষ্টি করেছে। বিকেলে হাজার হাজার নর-নারী প্রকল্প এলাকায় ঘুরে বেড়িয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য ঢাকার বুকে এমন একটি জায়গা পেয়ে তারা ভীষণ আনন্দিত। প্রকল্পটি উদ্বোধনের পরেই শুরু হয় নৌকাবাইচ। ছেড়ে দেয়া হয় কয়েক শ’ পাতি হাঁস ও রাজহাঁস। বিশাল ঝিলের পানিতে হাঁসদের ছুটে চলা। খোলা আকাশের নিচে এমন একটি নিরাপদ জলাশয় পেয়ে মুক্ত মনে পরম আনন্দে ভেসে বেড়াচ্ছে।
রাজধানীর হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ী সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নতুন বছরের শুরুতে ঢাকাবাসীর জন্য উপহার এই প্রকল্প। সম্পূর্ণ নিজস্ব তত্ত্বাবধানে পাঁচ বছর ধরে কাজ চালিয়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ, সেনাবাহিনী, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা- কর্মচারী ও শ্রমিকদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বুধবার সকালে এ প্রকল্পের ফলক উন্মোচন করে ডিজিটাল পদ্ধতিতে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পরেই সবার জন্য উন্মুক্ত হয়ে যায়। মানুষের ঢল নামে হাতিরঝিল প্রকল্পের সৌন্দর্য দেখার।
প্রকল্পটি উদ্বোধনের সময় বিশেষ অতিথি ছিলেন এলজিআরডি ও সমবায়মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান খান, একেএম রহমতউল্লাহ এমপি, আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি, প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবু সাঈদ এম মাসুদ। রাজউকের চেয়ারম্যান নুরুল হুদা অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন গণপূর্ত সচিব ড. খন্দকার শওকত হোসেন। অনুষ্ঠানে সামরিক-বেসামরিক, বুদ্ধিজীবী, সংবাদমাধ্যমের কর্মীসহ সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে নগরীর পরিবেশ উন্নয়ন, যোগাযোগ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ, বৃষ্টি ও বন্যাজনিত পানি ধারণ, পানি নিষ্কাশন ও নান্দনিক সৌন্দর্য বৃদ্ধির এই সমন্বিত প্রকল্পটি সবার জন্য উন্মুক্ত হলো। মোট ৮ দশমিক ৮০ কিলোমিটার সার্ভিস রোড, ফুটপাথসহ ৮ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ে, চারটি সেতু, তিনটি ছোট সেতু ও চারটি ওভারপাসসহ এই প্রকল্পের উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটি হচ্ছে রাজধানীবাসীর জন্য তাঁর সরকারের নববর্ষের উপহার। প্রধানমন্ত্রী প্রকল্পটি উদ্বোধনের আগে ডায়াডক-১ এর ওপর দাঁড়িয়ে প্রকল্পসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে ১০ মিনিটের বেশি সময় কথা বলেন। এরপর তিনি গুলশান-১ অংশে স্থাপিত মঞ্চে আসেন।
লেকের গুলশান পয়েন্টে এক অনুষ্ঠানে ভাষণকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার বুড়িগঙ্গার তীরে তিল তিল করে গড়ে ওঠা ঢাকা মহানগরীর হারানো ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারে অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমি আশা করি, সম্মিলিত প্রয়াস ও সহযোগিতার মাধ্যমে আমরা ঢাকা মহানগরীকে আগামী প্রজন্মের জন্য বসবাসযোগ্য করতে সক্ষম হবো। ২০০৯ সালে সাধারণ নির্বাচনে তাঁর দলের প্রতি জনগণের ম্যান্ডেটের কারণে তাঁর সরকার এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। আওয়ামী লীগ সব সময় জনগণের কল্যাণ, জনগণের মৌলিক অধিকার পূরণ এবং বিশ্ব সম্প্রদায়ের মাঝে দেশকে মর্যাদায় আসীন করতে অগ্রাধিকার দেয়। জনগণের মাঝে হতাশা সৃষ্টি নয়, বরং বস্তুনিষ্ঠভাবে ভুল-ক্রুটি ধরিয়ে দিতে হবে। হাতিরঝিলের উন্নয়নের বিভিন্ন দিক উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ প্রকল্পে পূর্ব-পশ্চিম সংযোগ সড়ক, ইউ লুপ, ব্রিজ ও ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। লেকের উভয় পাশের সার্ভিস রোড কয়েকটি স্থানীয় রাস্তার সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে। এতে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হবে। এর পাশাপাশি লেকের পানির দূষণ রোধে পয়ঃনিষ্কাশন ও পয়ঃবর্জ্য অপসারণের অত্যাধুনিক ব্যবস্থা রয়েছে।
প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে আড়াই হাজার আসনবিশিষ্ট দেশের বৃহত্তম উন্মুক্ত মঞ্চ, ভিউইং ডেক, ওয়াটার ট্যাক্সি টার্মিনাল, ফুটব্রিজ এবং সাংস্কৃতিক ও ব্যবস্থাপনা ভবন নির্মিত হবে। নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তাঁর সরকার মহানগরীর উন্নয়ন পরিকল্পনা, আঞ্চলিক পরিকল্পনা ও মাঝারি শহর অবকাঠামো উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া নগরীর ট্রাফিক সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি যানজট ও জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, নদীদূষণ ও অপরিকল্পিত নগরায়ণ বন্ধ, আবাসন ও অন্যান্য নাগরিক সুবিধা প্রসারে সমন্বিত কর্মসূচী নেয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মোট ১ হাজার ৯৭১ কোটি টাকার এই প্রকল্প বাস্তবায়নকালে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদসহ বিভিন্ন বাধার কথা উল্লেখ করেন। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে এটাই প্রতীয়মান হয়েছে, সম্মিলিতভাবে আমরা যে কোন কঠিন কাজ করতে সক্ষম হতে পারি। ইতোমধ্যে বনানী ক্রসিংয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দর সড়কে ওভারপাস ও সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনার আওতায় (এসটিপি) ঢাকার চারপাশে ওয়াটার ওয়ে ছাড়াও ফ্লাইওভার, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কমিউটার ট্রেন সার্ভিস, আন্ডারগ্রাউন্ড টানেল এবং লিংক রোড নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নির্বিচারে জলাধার ধ্বংস বন্ধে ঢাকার জন্য প্রথমবারের মতো জিআইএসভিত্তিক ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) অনুমোদন করা হয়েছে। এ ছাড়া ২০১৬ থেকে ২০৩৫ সাল পর্যন্ত পরবর্তী ২০ বছরের জন্য ড্যাপ প্রণয়নের কাজ চলছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে আড়াই হাজার আসনবিশিষ্ট দেশের বৃহত্তম উন্মুক্ত মঞ্চ, ভিউইং ডেক, ওয়াটার ট্যাক্সি টার্মিনাল, ফুটব্রিজ এবং সাংস্কৃতিক ও ব্যবস্থাপনা ভবন নির্মিত হবে। হাতিরঝিল লেকের গুলশান পয়েন্টে এক অনুষ্ঠানে ভাষণদানকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার বুড়িগঙ্গার তীরে তিল তিল করে গড়ে ওঠা ঢাকা মহানগরীর হারানো ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারে অঙ্গীকারাবদ্ধ। রাজধানীর পূর্ব থেকে পশ্চিমে যোগাযোগ সহজতর করার পাশাপাশি নগরবাসীর জন্য একটি বিনোদনের স্থান হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে সোনারগাঁও থেকে রামপুরা পর্যন্ত। ৩০২ একর জমির ওপর এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। বিদেশী পরামর্শক ও সহযোগিতা ছাড়া এই প্রকল্প বাস্তবায়ন শুধু ঢাকা নয়, বিশ্বের জন্য একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বেগুনবাড়ী-হাতিরঝিল প্রকল্পের গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর আগে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর এই ঝিল বন্ধ করে এখানে স্কুল, প্লট ও ঘরবাড়ি করার অনেক প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু আমি সেগুলো বাতিল করে দিয়েছি। বন্যাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে রাজধানীতে পানি নিষ্কাশনের সুযোগ রাখার জন্য জলাধার ও খাল-ঝিল সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা থেকে সেসব প্রস্তাব নাকচ করা হয় বলে প্রধানমন্ত্রী জানান। পরিবেশের সুরক্ষার জন্য যে কোন প্রকল্প করতে হলে সেখানে জলাধার ও খাল থাকতে হবে বলে নির্দেশ দেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আগামী প্রজন্মের জন্য উন্নত সমাজ ব্যবস্থা রেখে যেতে চাই। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের কারণে ঢাকাবাসী স্বস্তির নিশ্বাস ফেলার একটি জায়গা পেল। আমরা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পেরেছি আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে সব কাজ করতে পারি। প্রকল্প এলাকায় যে গাছ রোপণ করা হয়েছে, তা বড় হলে হাতিরঝিলের ‘চেহারা পাল্টে’ যাবে বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। বারো মাসে তের পার্বণের এই দেশে মানুষ এখানে এসে বিভিন্ন অনুষ্ঠান-উৎসব উপভোগ করতে পারবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। এ প্রকল্পের কারণে ক্ষতিগ্রস্তদের ফ্ল্যাট এবং যাদের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে তাদের প্লট দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আব্দুল মান্নান খানকে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে উপস্থিত পরিবশেবিদ ও কলাম লেখক আবুল মকসুদেকে উদ্দেশ করে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘আজ নাকি পরিবেশবাদীরা বিক্ষোভ করবেন। আমি এখানে এসে মকসুদ সাহেবকে দেখে আশ্বস্ত হয়েছি বিক্ষোভ হবে না।’
প্রকল্প বাস্তবায়নকালে গণমাধ্যমে বিভিন্ন সমালোচনামূলক খবর প্রকাশ হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে কোন ভাল কাজের জন্য একটু ধৈর্য ধরতে হয়। বিভিন্ন সংবাদ পরিবেশন করা হয়। যাতে মানুষের মনে হতাশার সৃষ্টি হয়। এ ধরনের সমালোচনায় যাতে হতাশা সৃষ্টি না হয়, কাজ করার মানসিকতা হারিয়ে না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে আহ্বান জানান তিনি। যাঁরা সমালোচনা করেন তাঁদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। তাঁরা সমালোচনা করেছে বলেই হয়ত আমরা এই প্রকল্পে বিশেষ নজর দিয়েছি। যাঁরা সমালোচনা করেন তাঁদের আমি বলব, সমালোচনা করেন, হতাশার সৃষ্টি করবেন না। যাতে কাজ করার আগ্রহ হারিয়ে না যায়,’ বলেন সরকারপ্রধান।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর হাতিরঝিলে প্রকল্পটিতে এক ঝাঁক রাজহাঁস ছেড়ে দেয়া হয়। কয়েকটি নৌকাও ঝিলে বাইতে দেখা যায়। সেখানে আয়োজন করা হয় নৌকাবাইচের। হাতিরঝিল নাম বলে প্রকল্প এলাকায় দুটি হাতিও আনা হয়। হাতি দুটি প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে স্বাগত জানায়। উদ্বোধন উপলক্ষে সড়কগুলো সাজানো হয় ফুলের টব ও নানা রঙের পতাকা দিয়ে। প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে গুলশান লিংক রোডসহ কয়েকটি সড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছিল।
উল্লেখ্য, রাজধানীর পূর্ব থেকে পশ্চিমের যোগাযোগ বাড়ানোর লক্ষ্যে গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়, যা বাস্তবায়নে ৯৩ শতাংশ অর্থের যোগান দেয় সরকার। ২০০৭ সালের ৮ অক্টোবর একনেকে এক হাজার ৪৭৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকার এই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। পরে, ভূমি অধিগ্রহণ ব্যয়সহ সংশোধিত প্রকল্প ব্যয় দাঁড়ায় এক হাজার ৯৭১ কোটি ৩০ লাখ টাকা। সমন্বিত এ প্রকল্পের প্রাণ হাতিরঝিল ও বেগুনবাড়ী খাল, যার দুই পাশ দিয়ে যান চলাচলের জন্য তৈরি করা হয়েছে ১৬ কিলোমিটার সড়ক, চারটি সেতু, আরও চারটি ক্ষুদ্র সেতু (ভায়াডাক্ট) এবং চলাচলের জন্য চারটি ওভারপাস। বিনোদনের জন্য খালে থাকছে নৌকা চালানোর ব্যবস্থা, ছোট পরিসরে পিকনিক স্পটসহ বেশ কিছু সুবিধা। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, সেনাবাহিনীর ১৬ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন, ঢাকা ওয়াসা এবং এলজিইডি যৌথভাবে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। প্রকল্পে পরামর্শকের দায়িত্বে ছিল বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়।
সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্প এলাকায় চারটি ব্রিজ এবং চারটি ওভারপাস নির্মাণ করা হয়েছে। বেশিরভাগ অবকাঠামোর নির্মাণকাজ প্রায় শেষ। এখন চলছে ফিনিশিং টাচ কিছুটা বাকি আছে। এসব ওভারপাস ও ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে দিব্যি সাধারণ মানুষের চলাচলের জন্য বুধবার থেকে খুলে দেয়া হয়েছে। প্রকল্প এলাকায় চারটি ব্রিজ, চারটি ওভারপাস, ৮ দশমিক ৮ কিলোমিটার সার্ভিস রোড, ৮ কিলোমিটার এক্সপ্রেস রোড, ২৬০ মিটার ভায়োড্যাক্ট, প্রায় ১২ কিলোমিটার ওয়াকওয়েসহ ঢাকা ওয়াসার তত্ত্বাবধানে ডাইভারশন স্যুয়ারেজ এবং স্পেশাল ডাইভারশন স্ট্রাকচার নির্মাণ। প্রকল্পের সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে গুলশান সংযোগকারী একটি ব্রিজ এবং রামপুরা ব্রিজের দু’পাশে দুটি ইউলুপ নির্মাণ। এ দুটি ইউলুপ নির্মাণের কারণে হাতিরঝিল থেকে আসা সড়কটি রামপুরা প্রগতি সরণিতে এসে মিলেছে। এ জন্য কোন ইন্টারসেকশনের প্রয়োজন হবে না। ফলে বাড়তি যানজটের সৃষ্টি থেকে মুক্ত থাকবে। রামপুরা ব্রিজ এলাকায় বিদ্যমান যানজট কমে যাবে। টঙ্গী ডাইভারশন রোড অংশে ইউলুপ নির্মাণ করা হচ্ছে না। সাতরাস্তা থেকে মৌচাক পর্যন্ত প্রস্তাবিত ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হবে। এখানে ইউলুপ নির্মাণ করা হলে এই ফ্লাইওভারে গতিপথ বাধাগ্রস্ত হবে। তবে ফ্লাইওভারের একটি র‌্যাম হাতিরঝিলের একটি সড়কের সঙ্গে মিশে যাবে।

No comments

Powered by Blogger.