বিভিন্ন স্থানে প্রতারণা অবশেষে গ্রেপ্তার

বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তির কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পর অবশেষে বগুড়ায় এসে ধরা পড়েছেন আলোচিত ইছাহাক আলী সরকার। তিনি কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলা সদরের বাসিন্দা বলে জানা গেছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বগুড়া সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সুমন কুমার মহন্ত বলেন, ইছাহাক আলী ভদ্রবেশী প্রতারক। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বগুড়ার ১০-১২ জনের কাছ থেকে ৭৮ লাখ টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
পুলিশের দেওয়া তথ্যমতে, বগুড়ার একটি মোটেলে থাকতেন ইছাহাক আলী। ঘুরতেন প্রাইভেটকারে। নিজেকে তিনি পরিচয় দিতেন ‘আনন্দ সিড’ নামে একটি বেসরকারি সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে। শহরের উপকণ্ঠে বাসাভাড়া নিয়ে তাতে আনন্দ সিডের কার্যালয়ও খোলেন। এরপর এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) থেকে বিভিন্ন প্রকল্পে স্বল্পসুদে ঋণ পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে তিনি বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন।
সম্প্রতি বগুড়ার পল্লী উন্নয়ন একাডেমির সাবেক খামার ব্যবস্থাপক মীর আলতাফ হোসেন, নর্থবেঙ্গল ডেইরি অ্যান্ড বিফ ফ্যাটিনিং প্রাইভেট লিমিটেডের পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন, শেরপুরের ঠিকাদার আবদুল হাকিম, ব্যবসায়ী মনছের আলী ও মিজানুর রহমান, শাজাহানপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম, কৃষক আবদুর রহমান এবং গাবতলীর ঠিকাদার মাহবুবুল আলমসহ কয়েকজনকে এডিবি থেকে ঋণ পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে তাঁদের কাছ থেকে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে গা-ঢাকা দেন ইছাহাক আলী।
এ ছাড়া ইছাহাক আলীর বিরুদ্ধে চাকরি দেওয়ার কথা বলে শহরতলি চারমাথা এলাকার খলিলুর রহমান ও সেফওয়ে মোটেলের কর্মচারী আরিফুর রহমানসহ কয়েকজনের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতানোর অভিযোগ রয়েছে। প্রাইভেটকারের ভাড়া বাবদ শেরপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম ৬৫ হাজার এবং আবদুর রহিম নামের একজন রেন্ট-এ কার ব্যবসায়ীর মাইক্রোভাড়া বাবদ ৩৫ হাজার টাকা তাঁর কাছে পাওনা রয়েছেন।
মীর আলতাফ হোসেন অভিযোগ করেন, তাঁর প্রকল্পে ১৮ কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুরের কথা বলে ইছাহাক আলী ২০১১ সালের ২৮ জুলাই তাঁর সঙ্গে লিখিত চুক্তি করেন। চুক্তি মোতাবেক এডিবি থেকে ২০১২ সালের ১০ জুনের মধ্যে ওই ঋণ পাইয়ে দেওয়ার কথা ছিল। এ জন্য প্রকল্প তৈরি, দাতাদের খুশি, যাতায়াত ও আনুষঙ্গিক খরচ বাবদ তিনি ৬০ লাখ টাকা দাবি করেন। প্রাথমিকভাবে তাঁকে ২৩ লাখ টাকা দেওয়া হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে ঋণ পাইয়ে না দিয়ে তিনি গা-ঢাকা দেন। এভাবে কয়েকজনের কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। এরপর শেরপুর উপজেলার প্রতারিত ব্যক্তিরা একজোট হয়ে তাঁকে খুঁজতে থাকেন। একপর্যায়ে তাঁরা ২৪ ডিসেম্বর গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থেকে তাঁকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন।
বগুড়া সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রিয়াজ উদ্দিন আহমেঞ্চদ প্রথম আলোকে বলেন, ইছাহাক আলী এডিবি থেকে ঋণ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ায় মোয়াজ্জেম হোসেন তাঁর বিরুদ্ধে প্রতারণা মামলা করেন। ওই মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
এর আগে জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার ফুলদীঘি দুস্থ মহিলা উন্নয়ন সংস্থার পরিচালক মনছুর রহমান ২০০৭ সালে জয়পুরহাট সদর থানায় ইছাহাক আলীর বিরুদ্ধে চার লাখ ৬০ হাজার টাকার প্রতারণা মামলা করেন। এ ছাড়া তিনি সারা দেশের আরও ৬২টি সহযোগী সংস্থার (পার্টনার এনজিও) কাছ থেকে প্রকল্প তৈরি, দাতাদের আপ্যায়ন, যাতায়াত ও আনুষঙ্গিক খরচ বাবদ প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। এসব ঘটনায় ইছাহাক আলীর বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন আঞ্চলিক এনজিওর কর্মকর্তারা প্রতারণার মামলাও করেন।
যশোর সদরের ‘গ্রিন ফাউন্ডেশন’ নামে বেসরকারি সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ইব্রাহিম হোসেন বলেন, দুটি প্রকল্পে তহবিল পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে সাড়ে চার লাখ টাকা নেন ইছাহাক আলী। এ ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে তিনি মামলা করেছেন।

No comments

Powered by Blogger.