স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নেই সাহারা, এলেন আলমগীর, তথ্যে ইনু দফতর বণ্টন

সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে নতুন শপথ নেয়া সাত মন্ত্রীর দফতর বণ্টন সম্পন্ন হয়েছে। একই সঙ্গে পুরনো কয়েক মন্ত্রীর দফতরেও রদবদল হয়েছে। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ স্বরাষ্ট্র ও তথ্য মন্ত্রণালয়ে পরিবর্তন আনা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনকে সরিয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।


স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন মহীউদ্দীন খান আলমগীর। অন্য দিকে তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে আবুল কালাম আজাদকে সরিয়ে হাসানুল হক ইনুকে দেয়া হয়েছে তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে। শনিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই দফতর বণ্টন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে।
মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণের পর দফতর বণ্টনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন মহীউদ্দীন খান আলমগীর। অবশেষে আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান এই নেতা মন্ত্রীর দায়িত্ব পেলেন। আওয়ামী লীগের বিগত শাসনামলে তিনি ছিলেন সরকারের পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সাহারা খাতুনকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে। নতুন মন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকে দেয়া হয়েছে তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। নতুন মন্ত্রী মুজিবুল হক পেয়েছেন রেলপথ বিভাগের দায়িত্ব। রেলপথ বিভাগ গঠন করে তাঁর দায়িত্ব দেয়া হয় আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে। পরে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় তিনি মন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা দেন। বর্তমানে দফতরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। ওই সময়ে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে এই বিভাগের দায়িত্ব পালন করেন যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এএইচ মাহমুদ আলীকে দেয়া হয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ বিভাগের দায়িত্ব। মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন। এর আগে এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন সৈয়দ আবুল হোসেন। এর আগে পদ্মা সেতুর দুর্নীতির অভিযোগে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে তাঁকে সরিয়ে দেয়া হয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে। এ লক্ষ্যে এটিকে নতুন মন্ত্রণালয় ঘোষণা করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতেও তাকে সরে যেত হয় মন্ত্রিসভা থেকে। দায়িত্বে থাকা অবস্থায় নতুন প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে ওমর ফারুক চৌধুরী শিল্প এবং আব্দুল হাই মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন।
পুরনোদের মধ্যে রাজিউদ্দিন আহম্মেদ রাজুকে টেলিযোগাযোগ থেকে সরিয়ে শ্রমমন্ত্রী করা হয়েছে। খন্দকার মোশাররফ হোসেন এখন শুধু প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সামলাবেন। খন্দকার মোশাররফের মতোই আব্দুর রাজ্জাক এখন শুধু খাদ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন। হাসানুল হক ইনুকে তথ্যমন্ত্রী করায় আবুল কালাম আজাদের হাতে থাকল শুধু সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়।
বৃহস্পতিবার নতুন সাত মন্ত্রী শপথ নেয়ার পর থেকে কে কোন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাচ্ছেন এ নিয়ে চলে নানা জল্পনা-কল্পনা। বিগত দুই দিন তোফায়েল আহমেদ এবং রাশেদ খান মেনন মন্ত্রিসভায় যোগ না দেয়ায় যেমন ছিল আলোচনা-সমালোচনা, তেমনি নতুনরা কে কোন্ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাচ্ছেন তা নিয়েও মানুষের আগ্রহ কম ছিল না। বৃহস্পতিবার শপথ গ্রহণের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, শপথ গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী কর্মদিবস রবিবারের আগেই নতুনদের দফতর বণ্টন সম্পন্ন করা হবে। সে মোতাবেক শনিবারই দফতর বণ্টন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। মন্ত্রিসভা থেকে কেউ বাদ পড়বেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী হাস্যোজ্জ¦ল ভঙ্গিমায় বলেন, যোগ-বিয়োগ সব জায়গাতেই থাকে। কিন্তু পুরনো কাউকে বাদ দেয়া হয়নি ঠিকই তবে পুরনো কয়েকমন্ত্রী দফতর রদবদল করা হয়েছে। এর মধ্যে সফল ভাবে দায়িত্ব পালন করলেও ড. আব্দুর রাজ্জাকে শুধু খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়ায় অনেকে অবাক হয়েছেন। সরকারের টানা সাড়ে তিন বছর তিনি খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়কেও সফলভাবে চালিয়ে নিয়ে এসেছেন। তার পরও আব্দুর রাজ্জাককে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।
এদিকে আওয়ামী লীগের অপর বর্ষীয়ান নেতা তোফায়েল আহমেদ এবং রাশেদ খান মেনন মন্ত্রিসভায় যোগদান না করায় বিরোধী দলের কঠোর সমালোচনায় পড়তে হয়েছে সরকারকে। তবে কে কে মন্ত্রী হচ্ছেন এই নাম প্রচার না করলে সরকারকে কঠোর এই সমালোচনা মোকাবেলা করতে হতো না। আগের দিন এই তথ্য ফাঁস করে দেয়ায় তা মিডিয়াতেও ফলাও করে প্রচার হয়েছে। অনেকে মনে করছেন এই তথ্য প্রচারের আগে তারা আসবেন কিনা তা জেনে তার পর প্রচার করলে সরকারকে এ নিয়ে বাড়তি কোন চাপ সহ্য করতে হতো না।
মহাজোট সরকারের শুরুতে প্রথম মন্ত্রিসভা গঠনের সময় কে কে মন্ত্রী হচ্ছেন তা জানানো হয়নি। এমনকি পরবর্তীতে মন্ত্রিসভায় যে রদবদল ঘটানো হয়েছে সেক্ষেত্রেও আগে থেকে কাউকে কিছু জানানো হয়নি। তাতে এই প্রক্রিয়া নিয়ে অতীতে কোন প্রশ্ন ওঠেনি। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দেখা গেছে কোন কোন ক্ষেত্রে কেউ কেউ মন্ত্রিত্ব গ্রহণ করতে চান না। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটি আবার ভিন্ন চিত্র। তার পরও এই সমালোচনা এড়ানো সম্ভব ছিল বলে তাঁরা মনে করেন।

No comments

Powered by Blogger.