বিএনপির পাঁচ শীর্ষনেতা অর্থ পাচার ও বিদেশে বাড়ি কিনেছেন- অভিযোগ তদন্ত করে প্রাথমিক তথ্য পেয়েছে দুদক by মহিউদ্দিন আহমেদ

বিদেশে অর্থ পাচার করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনের পরিবারের সদস্যদের নামে বাড়ি কেনার অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। এছাড়া কয়েক মাস আগ থেকে দলের সাবেক ও বর্তমান আরও ৫ শীর্ষ নেতার পরিবারের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ দুদক কর্মকর্তারা অনুসন্ধান করছেন।


বিদেশে টাকা পাচারের বিষয়ে দুদক যাঁদের বিষয়ে অনুসন্ধান করছে তাঁদের মধ্যে খন্দকার মোশাররফ ছাড়াও আছেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোরশেদ খান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আলী আসগর লবী, বিএনপির সাবেক নেতা ও সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা।
অভিযুক্তরা বিদেশে টাকা পাচার করে প্রায় সবাই লন্ডনে নিজেদের স্ত্রী ও সন্তানদের নামে বাড়ি কিনেছেন এমন অভিযোগও রয়েছে। যাঁদের নামে বাড়ি ক্রয় করেছেন বলে দুদকে অভিযোগ এসেছে তারা হলেন, খন্দকার মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী বিলকিস আক্তার হোসেন, দুই ছেলে মারুফ হোসেন, মাহবুব হোসেন, মোরশেদ খানের ছেলে ফয়সাল মোরশেদ খান, আলী আসগর লবীর দুই ছেলে সাকিব আসগর ও ফয়সল আসগর, ইকবাল হাসান মাহমুদের স্ত্রী রোমানা মাহমুদ ও তাঁদের ছেলে আবেদ হাসান মাহমুদ, ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার স্ত্রী ব্যারিস্টার সিগমা হুদা, দুই মেয়ে শ্রাবন্তি হুদা ও অন্তরা হুদা। এর মধ্যে দুদক ইতোমধ্যে কয়েকজনের বিদেশে অর্থপাচারের ব্যাংক হিসাব এবং লন্ডনে বাড়ির ঠিকানা উদ্ধার করেছে। তার মধ্যে ড. খন্দকার মোশাররফের নামে বিভিন্ন ব্যাংক এ্যাকাউন্টে বৈদেশিক লেনদেন বিবরণী অনুযায়ী তিনি ২০০৮ সালের ১৫ মে লন্ডনে এবং একই বছর এম মোরশেদ খান যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ টাকা পাচার করেছেন বলে তথ্য পেয়েছে দুদকের কর্মকর্তারা। আর নাজমুল হুদার স্ত্রী সিগমা হুদা ও কন্যা অন্তরা হুদার লন্ডনে বাড়ির ঠিকানা হচ্ছে ১৫৩ দ্য ওয়াটার গার্ডেন। টাইটেল নম্বর এনজিআই ৬৪৯৭৮৭। অপর বাড়িটি কেনা হয়েছে স্ত্রী ও আরেক কন্যা শ্রাবন্তি হুদার নামে। এ বাড়ির ঠিকানা হচ্ছে চার নম্বর দিনহাম রোড। একটি বাড়ি কেনা হয় তিন লাখ ৮০ হাজার ইউরো দিয়ে। আরেকটির সঠিক মূল্য পাওয়া যায়নি। আর মওদুদ লন্ডন শহরের ১৫ হান্টিংটন এলাকার কেন্ট ডিএফাইভ-এর টুএফডি এ্যাপার্টমেন্ট ২০১০ সালে ক্রয় করেন। ওই বছরের মার্চ মাসের পাঁচ তারিখে তিনি এইচএসবিসি ব্যাংকের মাধ্যমে এ্যাপার্টমেন্টের ফান্ড প্রেরণ করেন। এ্যাপার্টমেন্টের মূল্য হচ্ছে তিন লাখ ৬০ হাজার পাউন্ড। বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা। অভিযোগ অনুযায়ী এরা সবাই মিলে প্রায় ২০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন বলে দুদক কর্মকর্তারা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন।
দুদক সূত্র জানায়, সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির কয়েক নেতা ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা বিদেশে অর্থপাচার করে সেখানে বাড়ি কিনেছেন মর্মে গত বছর কিছু অভিযোগ দুদকে আসে। এর মধ্যে সুনির্দিষ্ট তথ্য উপাত্তের বর্ণনা রয়েছে এমন অভিযোগের ভিত্তিতে সংশ্লিদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করার সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। এজন্য দুদকের চার কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয় কমিশন। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা হলেন দুদকের উপপরিচালক হারুনুর রশীদ, শাহীন আরা মমতাজ, এসএম সাইদুর রহমান ও মোঃ মোনায়েম হোসেন। দায়িত্ব পেয়ে তাঁরা সংশ্লিষ্টদের নামে বিভিন্ন ব্যাংক এ্যাকাউন্টের তথ্য বিবরণী সংগ্রহ করেন। এতে বৈদেশিক লেনদেন বিবরণীও সংগ্রহ করা হয়। ওইসব তথ্যের ভিত্তিতে বর্তমানে সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ কার্যক্রম শুরু করেছেন। এর মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে নোটিস দিলে তিনি হাইকোর্টে রিট করে নোটিসের ওপর স্থগিতাদেশ নেন। তবে, অনুসন্ধানকাজের ওপর কোন নিষেধাজ্ঞা না থাকায় অনুসন্ধানকাজ অব্যাহত আছে। এছাড়া ব্যারিস্টার সিগমা হুদা বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছেন। দেশে ফিরলে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। খন্দকার মোশাররফ হোসেনের পরিবারের সদস্যদের চিঠি দেয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্যদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে দুদক সূত্র জানিয়েছে।
দুদক কর্মকর্তারা জানান, সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি কিভাবে বিদেশে টাকা প্রেরণ করা হয়েছে তার প্রকৃত চিত্র জানতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক বিভাগের শাখাকে চিঠি পাঠিয়েছেন দুদকের সংশ্লিষ্ট অনুসন্ধান কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান সাংবাদিকদের বলেন, সাবেক কয়েক মন্ত্রী ও তাঁদের পরিবারের বিরুদ্ধে লন্ডনে বাড়ি কেনার অভিযোগ আসে। অভিযোগগুলোর দালিলিক তথ্য প্রমাণ বের করতে কয়েক কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.