অর্থনীতি সমিতির সম্মেলন উদ্বোধন- পরিকল্পনার সবকিছু পাঁচ বছরে বাস্তবায়ন সম্ভব নয়: প্রধানমন্ত্রী

জনগণ ও সমাজকে সচেতন করা গেলে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা বহুলাংশে বাস্তবায়ন করা সম্ভব বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ জন্য তিনি অর্থনীতিবিদদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত হয়ে আসি।


তবে উন্নয়ন পরিকল্পনার সবকিছুই পাঁচ বছরের মধ্যে বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়।’ দেশের অর্থনীতিবিদদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা যদি জনগণকে সচেতন করতে পারেন, তাহলে আমরা অনেক কিছু বাস্তবায়ন করতে পারব।’
রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির অষ্টাদশ দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সুস্থিত ও নিরবচ্ছিন্ন গণতন্ত্র অপরিহার্য। অতীতে বারবার জনগণের সাংবিধানিক অধিকার ও তাদের বাকস্বাধীনতা কেড়ে নিয়ে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করা হয়েছে। আমরা এ অবস্থার পরিবর্তন চাই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার শোষণ, বৈষম্য ও বঞ্চনামুক্ত একটি ধর্মনিরপেক্ষ, প্রগতিশীল ও উদার গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়তে অঙ্গীকারবদ্ধ। তিনি ২০২১ সাল নাগাদ স্বাধীনতার ৫০ বছরপূর্তিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষার মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করায় তাঁর অঙ্গীকারের কথাও পুনর্ব্যক্ত করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি অর্থশাস্ত্রের চাহিদা-জোগানের জটিল সমীকরণ ও রেখাচিত্র বুঝি না। তবে সহজ-সরলভাবে এটা বুঝি, দ্রব্য উৎপাদন করতে হবে, উৎপাদিত দ্রব্য বণ্টন করে মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ব্যবসা করতে আসিনি। আমরা উৎপাদন বাড়িয়েছি। খাদ্য উৎপাদন বাড়িয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি। বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়েছি। অর্থনীতিকে উজ্জীবিত করতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছি। কেননা, আমি দেশের মঙ্গলের জন্য রাজনীতি করি।’
প্রধানমন্ত্রী সম্পদের ন্যায্য বণ্টন নিশ্চিত করে উৎপাদন বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘আমি জানি বিষয়টি জটিল, তবে অসাধ্য নয়।’
অর্থনীতি সমিতির এবারের সম্মেলনের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘বৈশ্বিক অর্থনীতি ও রূপকল্প-২০২১।’ এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বের অর্থনীতিতে এখন অনেক টানাপোড়েন। বিশ্বের অর্থনীতি আগের তুলনায় অনেক বেশি পরস্পর নির্ভরশীল।’
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি আবুল বারকাতের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সমেঞ্চলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক হান্নানা বেগম। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক তৌফিক আহমদ চৌধূরী।
সম্মেলনের প্রতিপাদ্য বিষয় সম্পর্কে আবুল বারকাত বলেন, ‘বিশ্ব অর্থনীতিতে যে টালমাটাল অবস্থা চলছে, বাংলাদেশের উন্নয়নযাত্রায় তার প্রভাব পর্যালোচনার তাগিদ থেকেই এ বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে। আমরা মনে করি, নতুন ভাবনা প্রয়োজন, নতুন চিন্তা প্রয়োজন।’
উদ্বোধনী পর্বে অর্থনীতি চর্চায় বিশেষ অবদান রাখার জন্য চারজন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদকে স্বর্ণপদক দিয়ে সম্মান জানানো হয়। প্রয়াত অধ্যাপক আখলাকুর রহমানের পক্ষে তাঁর স্ত্রী রওশন আরা রহমান ও মেয়ে তাহমিনা রহমান এবং প্রয়াত অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদের পক্ষে তাঁর স্ত্রী রওশন জাহান প্রধামন্ত্রীর হাত থেকে স্বর্ণপদক নেন। ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বিদেশে থাকায় তাঁর স্ত্রী জাহেদা আহমদ পদক নেন। আর অধ্যাপক মইনুল ইসলাম নিজে উপস্থিত হয়ে স্বর্ণপদক নেন।
এই চারজন অর্থনীতিবিদের প্রত্যেকেই বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।

No comments

Powered by Blogger.