বুড়িগঙ্গার তীর ঘেঁষে নির্মিত হবে ছয়টি ৫১তলা ভবন- সিকদার গ্রুপের উদ্যোগ ॥ মাটির গুণাগুণ পরীক্ষা ও ভূমিকম্পরোধক করতে হবে ॥ সেমিনারে বিশেষজ্ঞ মত

ঢাকা মহানগরীতে ‘হাইরাইজ’ ভবন নির্মাণ এখন সময়ের দাবি। ভূমিস্বল্পতার বিষয়টি মাথায় রেখে রাজধানীতে ৫০ তলার ওপর আবাসিক ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সিকদার গ্রুপ। পশ্চিম ধানম-ি এলাকায় বুড়িগঙ্গার তীর ঘেঁষে ৬টি ৫১তলা আবাসিক ভবন নির্মাণ করবে তারা।


শনিবার এক সেমিনারে সিকদার রিয়াল এস্টেট কোম্পানির পক্ষ থেকে এ কথা জানানো হয়। সেমিনারে অংশগ্রহণকারী বক্তারা অবশ্য প্রকল্পটি শুরু করার আগে মাটির উপযুক্ততা যাচাই করে নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। সিকদার রিয়েল এস্টেট কোম্পানি লিমিটেড আয়োজিত ‘বহুতল ভবনের সুবিধা-অসুবিধা’ শীর্ষক এক সেমিনারে অংশ নেন রাজউকের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী নূরুল হুদা, রিহ্যাব সভাপতি নসরুল হামিদ বিপু এমপি, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব একেএম কামাল উদ্দীন, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন, বুয়েটের শিক্ষক রাকিব আহসান, অধ্যাপক আনসারী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নূরুল ইসলাম নাজেম, উত্তরা ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্পের পিডি এমদাদুল ইসলাম এবং আমেরিকান ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ফারুক হোসেন।
সেমিনারে সিকদার রিয়েল এস্টেট কোম্পানির ভাইস চেয়ারম্যান পারভীন হক সিকদার বলেন, ঢাকা মহানগরী দিন দিন বসবাসের যোগ্যতা হারাচ্ছে। মানুষের ঘনত্বের কারণে এখন আর জমি পাওয়া যাচ্ছে না। যেহেতু জমির অভাব সেহেতু এখন আর আমাদের উপরের দিকে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। মানুষের বাসস্থান দিতে হলে ‘হাইরাইজ’ ভবন নির্মাণ করতে হবে। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যআয়ের মানুষের জন্য উঁচুতলার ভবনগুলো বেশি জরুরী। জায়গাস্বল্পতার কারণে নাগরিক জীবনে চরম দুর্ভোগ বিরাজ করছে। মানুষের অসচেতনতা, পরিবেশ দূষণ ও যানজট সমস্যা নগরবাসীকে নাকাল করে তুলেছে। পরিকল্পিতভাবে বহুতল ভবন নির্মাণ করে মানুষের মাথার ওপর একটা ছাদ দিতে হবে। তাছাড়া ঢাকা শহরে জায়গার দাম সোনার চেয়ে দামী হয়ে পড়েছে। এখন টাকা হলেও জমি পাওয়া যাচ্ছে না। এই চিন্তা সামনে নিয়ে সিকদার গ্রুপ ৫০ তলার ওপরে ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। রাজধানীর ধানম-ি এলাকায় বুড়িগঙ্গার তীর ঘেঁষে একটি প্রকল্পের জায়গা নেয়া হয়েছে। ৬২ বিঘা জায়গার ওপর ৬টি ৫১ তলাবিশিষ্ট পরিবেশবান্ধব ভবন নির্মাণ করবে। সেখানে নাগরিক জীবনের সব ধরনের সুযোগসুবিধা রাখা হবে। দীর্ঘমেয়াদী এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে ইতোমধ্যে অনেক কাজ এগিয়ে নেয়া হয়েছে। পরিকল্পনাটি বাস্তবায়িত হলে মহানগরীতে একটা প্রভাব পড়বে। বহুতল ভবন নির্মাণে সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে নগর বিশেষজ্ঞদের মতামত নেয়ার জন্যই আজকের এই সেমিনার। এ সেমিনার থেকে মূল্যবান পরামর্শ বের হয়ে আসবে। আমরা এ পরামর্শ নিয়েই আমাদের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করব। সেমিনারে বক্তারা হাইরাইজ ভবনের পক্ষে মত দিলেও এর অসুবিধার দিকগুলোও তাঁরা তুলে ধরেন। তারা বলেন, রাজধানীতে জমি এখন দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠেছে। মানুষের মৌলিক চাহিদা বাসস্থান নিশ্চিত করতে উপরের দিকে যেতেই হবে। স্বল্প মাটির উপর বেশি বাসস্থান নির্মাণ করতে হবে। তবে ঢাকা শহরের শতকরা ৩০ ভাগ জায়গাই ছিল জলাভূমি। এই জায়গাগুলো ভরাট করে ২০ থেকে ২৪ তলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এ সব জায়গাই হচ্ছে বেশি বিপজ্জনক। কারণ একটু বড় মাত্রার ভূমিকম্প হলে এসব ভবন বেশি ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। অন্যদিকে ঢাকা শহরে প্রতিনিয়ত যে হারে মানুষ বাড়ছে, তাতে হাইরাইজ ভবন ছাড়া এই মানুষগুলোর বাসস্থানের ব্যবস্থা করাও সম্ভব নয়। ঢাকা শহরে এক জরিপে বলা হয়েছে বস্তি এলাকায় মানুষের ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৫৭ হাজার। অন্য সব এলাকায় মানুষের ঘনত্ব ২০ থেকে ৪০ হাজার প্রতি বর্গকিলোমিটারে। ঢাকা শহরের মাটির ধরন নিয়ে বিশেষজ্ঞরা নানা মত পোষণ করেছেন। তাঁরা কেউ কেউ বলেন, এখানে ১০ থেকে ৩০ মিটার পর্যন্ত মাটির ঘনত্বের তারতম্য রয়েছে। মাটির ওপর ভিত্তি করে হাইরাইজ ভবন নির্মাণ করতে হবে। যদি এটা না করা হয় তাহলে ঝুঁকি থেকেই যাবে। এ পরও বিপুলসংখ্যক মানুষের বসবাসের জন্য একটা ব্যবস্থা হাতে নিতেই হবে। এজন্য সরকার ডিটেল এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) বাস্তবায়ন করছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ঢাকা মহানগরীতে বহুতল ভবন নির্মাণে ভূমিকম্পরোধক ব্যবস্থা রাখা দরকার। নিরাপদ বাসস্থানের জন্য এটা জরুরী। ঢাকা শহরের মানুষের ঘনত্ব আগামী ১০ বছরের মধ্যে দ্বিগুণেরও বেশি হবে। তখন রাস্তাঘাট চলাচলের উপযুক্ততা হারাবে। অপরিকল্পিত নগরায়নে পানি ও স্যুয়ারেজ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়বে।

No comments

Powered by Blogger.