জড়িতরা যেন ছাড় না পায়- ডেসটিনির টাকা পাচার

ডেসটিনি গ্রুপের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের প্রতিবেদনে যেসব তথ্য পাওয়া গেল, তাতে এটা পরিষ্কার হয়েছে যে প্রতারণামূলক ব্যবসার মাধ্যমে তারা জনগণের অর্থই শুধু আত্মসাৎ করেনি, বিদেশেও টাকা পাচার করেছে।


অবৈধভাবে অর্থ লেনদেনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় এই প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ পাঁচজনের জামিনও বাতিল হয়েছে। এই আর্থিক অপকর্মের সঙ্গে জড়িত এই প্রতিষ্ঠান ও এর কর্তাব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়, সেটাই দেখার বিষয়।
যুবক কেলেঙ্কারি ঘটনার পর আশা করা গিয়েছিল যে সমবায়, মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) বা এ ধরনের নানা নামে জনগণের টাকা লুটপাটের প্রক্রিয়া থেমে যাবে। কিন্তু সেটা যে সম্ভব হয়নি তার প্রমাণ ডেসটিনি, ইউনিপেটুইউ বা এ ধরনের আরও অনেক প্রতিষ্ঠানের সক্রিয়তা। জনগণের টাকা মেরে দিয়ে অনেকেই গা ঢাকা দিয়েছেন। এ ধরনের ব্যবসার মাধ্যমে জনগণকে যাতে প্রতারিত করা সম্ভব না হয়, সে ব্যাপারে সরকারের কঠোর নজরদারি প্রয়োজন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট তদন্ত করে বলছে যে ডেসটিনি গ্রুপের লোকজন নিজেদের মধ্যে কৌশলে অর্থ লেনদেন করে বিদেশে অর্থ পাচার করেছেন। হংকংয়ে একটি এলসির সূত্র ধরে দেখা যাচ্ছে যে সেখানে এভাবে যে অর্থ লেনদেন হয়েছে তার পরিমাণ প্রায় ৬৩ কোটি টাকা। ডেসটিনি গ্রুপ ২০০৬ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত খোলা এলসির বিপরীতে আমদানি মূল্য পরিশোধ করেছে মোট এক কোটি ৮৫ লাখ ৩২ হাজার ৯৪৪ মার্কিন ডলার। হংকংয়ে একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যে ধরনের অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেছে, অন্যান্য ক্ষেত্রেও তা হয়েছে কি না, সে ব্যাপারে যথাযথ তদন্ত হলে পরিষ্কার হওয়া যাবে যে বিদেশে পাচার করা অর্থের প্রকৃত পরিমাণ কত।
কমিশনের নামে ডেসটিনি গ্রুপের পরিচালকেরা যেভাবে অর্থ গ্রহণ করেছেন, তা বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত অনুযায়ী আত্মসাৎ ছাড়া আর কিছু নয়। বিস্ময়কর হচ্ছে, এই গ্রুপের প্রধান তিনটি প্রতিষ্ঠানের হিসাবে জমা হওয়া পাঁচ হাজার ১৩২ কোটি ৪৬ লাখ টাকার প্রায় পুরোটাই কৌশলে তুলে নেওয়া হয়েছে। এত বিপুল অর্থ কোথায় গেল, সে ব্যাপারে তথ্য নেই বলে প্রথম আলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যাচ্ছে। কিন্তু কাদের নামে এই অর্থ হস্তান্তরিত হয়েছে, তা দিবালোকের মতো পরিষ্কার। অতএব, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ ও অর্থ উদ্ধারে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার বিকল্প নেই। এই গ্রুপের প্রতারণামূলক ব্যবসার কারণে যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁদের ক্ষতিপূরণের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে বর্তমানে ব্যবস্থা নেওয়ার যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। একই সঙ্গে ক্ষমতা, প্রভাব ও প্রতিপত্তি খাটিয়ে যেন কেউ পার পেয়ে যেতে না পারেন, সেটাও সরকার নিশ্চিত করবে—এটাই দেশবাসীর প্রত্যাশা।

No comments

Powered by Blogger.