সাগর-রুনি হত্যাঃ ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে খুনিরা গ্রেপ্তার না হলে বৃহত্তর কর্মসূচি

সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির হত্যাকারীদের ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে গ্রেপ্তার করা না হলে, পরের দিন আন্দোলনের বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে সাংবাদিক সংগঠনগুলো। আজ রোববার বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন বাংলার সামনে অবস্থান কর্মসূচি থেকে এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়।
পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী সাগর-রুনি হত্যার বিচারের দাবিতে সকাল থেকে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে এটিএন বাংলার কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে সাংবাদিক সংগঠনগুলো। এ সময় সাংবাদিক নেতারা সাগর-রুনি হত্যাসহ সব সাংবাদিক হত্যার বিচার দাবি করেন। একই সঙ্গে তাঁরা সাংবাদিক সমাবেশ নিয়ে আদালতের নির্দেশনার কঠোর সমালোচনা করেন।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) একাংশের সভাপতি ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, কোনটি মানহানিকর আর কোনটি নয়, তা আদালত নির্ধারণ করবেন আর সাংবাদিকেরা তা মেনে নিয়ে আন্দোলন করবেন, এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই। সাংবাদিকদের প্রতিবাদের ভাষা আদালতের রুলিংয়ের ওপর নির্ভর করবে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, খুনির বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে আদালতে দাঁড়াতে হলে পুরো সাংবাদিক সমাজ আদালতে দাঁড়াতে প্রস্তুত আছে।
এটিএন বাংলার চেয়ারম্যানের উদ্দেশে ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, ভবিষ্যতে যদি মাহফুজুর রহমান তাঁর অবস্থান পরিবর্তন না করেন, তাহলে এটিএন বাংলা ও এটিএন নিউজ থেকে মাহফুজুর রহমানকে বের করে দিয়ে এ দুটি চ্যানেলকে জনগণের গণমাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হবে।
বিএফইউজের আরেক অংশের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, ‘আগের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ৪৮ ঘণ্টার কথা বলেছিলেন। আপনি সাহারা খাতুন হবেন না। আমরা আপনার ভূমিকা দেখতে চাই। তথ্যমন্ত্রীর ভূমিকা দেখতে চাই।’ ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তার করা না হলে ২৬ তারিখের সমাবেশ থেকে আন্দোলনের বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে তিনি জানান।
সমাবেশে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক মহাসচিব মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ‘আদালতের নির্দেশনা নিয়ে আমরা বক্তব্য রাখব না। আমরা বিবেকের তাড়নায় বক্তব্য রাখব। সে বক্তব্য কারও বিরুদ্ধে গেলে বুঝতে হবে, কেন বিরুদ্ধে যাচ্ছে।’
আদালতের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘বিচারিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সাংবাদিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নামবেন না। এটি হলে দুর্যোগ নেমে আসতে পারে।’
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) একাংশের মহাসচিব শওকত মাহমুদ বলেন, ‘খুনি কে, আমরা তা জানি না। তবে সন্দেহ জেগেছে, খুনি সম্ভবত কারওয়ান বাজারে থাকে।’
সাগর-রুনি সম্পর্কে এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমানের দেওয়া বক্তব্যের প্রতি ইঙ্গিত করে শওকত মাহমুদ বলেন, ‘খুনিদের মুখে যে ধরনের কথাবার্তা শোভা পায়, সে ধরনের কথা এ কারওয়ান বাজার থেকেই শোনা গেছে।’ সাগর-রুনির হত্যাকারীদের বিচারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ দেশের আদালতে বিচার না পেলে আন্তর্জাতিক আদালতের দ্বারস্থ হবেন সাংবাদিকেরা। কোনো মন্ত্রী বা ব্যবসায়িক স্বার্থে যদি এ হত্যাকাণ্ড ধামাচাপা দেওয়া হয়, তাহলে এ সরকারকে একদিন কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।’
আদালত কাজে লাগিয়ে আন্দোলন নস্যাত্ করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে অভিযোগ করে মনজুরুল আহসান বলেন, আদালতের নির্দেশনা দিয়ে সাংবাদিকদের কণ্ঠ রোধ করা যাবে না। তিনি অবিলম্বে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) দুটি অংশ এবং জাতীয় প্রেসক্লাব ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি যৌথভাবে এ কর্মসূচি পালন করে। সমাবেশে অন্যান্য সাংবাদিক নেতাদের মধ্যে আব্দুল জলিল ভূইয়া, আব্দুস শহীদ, ওমর ফারুক, শাবান মাহমুদ প্রমুখ বক্তব্য দেন।
কর্মসূচির কারণে সকাল থেকেই কারওয়ান বাজারে এটিএন বাংলার কার্যালয় ও আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
সাগর-রুনি হত্যাসহ সব সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতনের সুষ্ঠু তদন্ত, কর্মক্ষেত্রে সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধ, পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত, মুক্ত গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন দাবিতে ৫ সেপ্টেম্বর আন্দোলনের ঘোষণা দেন সাংবাদিক নেতারা। এ জন্য সরকারকে ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন তাঁরা। এ সময়ের মধ্যে দাবি আদায় না হলে প্রেসক্লাবের সামনে সুশীল সমাজ ও পেশাজীবী সংগঠন নিয়ে সমাবেশ করার ঘোষণা দেওয়া হয়। একই সঙ্গে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করারও দাবি জানানো হয়। তা না হলে ২৬ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আবার অবস্থান ও সমাবেশের ঘোষণা দেওয়া হয়। কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১১ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এবং ১৬ সেপ্টেম্বর এটিএন বাংলার কার্যালয় ঘেরাও ও সমাবেশ করার ঘোষণা দেন সাংবাদিকেরা।
সাগর-রুনি হত্যার ঘটনায় এটিএন বাংলার কার্যালয় ঘেরাও এবং সমাবেশ কর্মসূচির বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে গত সোমবার মাহফুজুর রহমান মামলা করলে ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ফজলে এলাহী ভূঁইয়া আবেদনটি খারিজ করে দেন।

No comments

Powered by Blogger.