দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসা না আসার বাস্তবতা by মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৮ সেপ্টেম্বর এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করতে গিয়ে বলেছেন, ‘গুজব আছে একবার একটি দল ক্ষমতায় আসলে পরবর্তী নির্বাচনে আসতে পারে না। এবার সেই রেকর্ড ভাঙবে আওয়ামী লীগ। কারণ গত সাড়ে তিন বছরে আওয়ামী লীগ জনগণের উন্নয়নে যা করেছে, বিএনপি-জামায়াতের ৫ বছর আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই


বছর মিলিয়ে সাত বছরেও সেই উন্নয়ন হয়নি। হতাশ হওয়ার কিছু নেই। সাহসের সঙ্গে পথ চলে সংগঠনকে শক্তিশালী করুন। যতই ষড়যন্ত্র বা অপপ্রচার চালিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করুক, জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে (জনকণ্ঠ ৯ সেপ্টেম্বর-১২)।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তৃতা থেকে বেশ বড় একটি উদ্ধৃতি দিয়ে লেখাটি শুরু করেছি, কাউকে খুশি করা বা মনগড়া কিছু লিখে পাতা ভরানো আমার উদ্দেশ্য নয়। বাংলাদেশের সমাজ জীবনে যে সব কথা এখন ঘুরে বেড়ায়, তার মধ্যে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় কোন দল না আসার তত্ত্ব অন্যতম। গেল সপ্তাহেও আমার লেখার কয়েক লাইনে প্রচারণায় এমন একটি বিষয়ের কথা উল্লেখ করেছি। এর আগের দিন আমার অগ্রজ সহকর্মী অধ্যাপক আবদুল মান্নানও তাঁর একটি লেখায় বিষয়টি তুলে এনেছেন। এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যে বিষয়টি গুরুত্ব পাওয়ায় আমার নিজস্ব ধারণা ও পর্যবেক্ষণ তুলে ধরার প্রয়োজনীয়তা থেকে আজকের বিশেষ এই লেখাটি।
বেশ কিছু দিন থেকে দেশের বেশিরভাগ গণমাধ্যমে এমন একটি ধারণা দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে যার মোদ্দা কথা হচ্ছে, বাংলাদেশের জনগণের কোন দলকেই পর পর দু’বার নির্বাচিত করার নজির নেই। সুতরাং আগামী নির্বাচনেও জনগণ সেই দৃষ্টান্তই স্থাপন করবে। এ ধরনের প্রচার-প্রচারণার উদ্দেশ্য বুঝতে কাউকে প-িত হতে হবে না। এটি একটি সূক্ষ্ম প্রচারণা যা প্রতিষ্ঠিত করা গেলে ভোটারদের বড় অংশ ধরেই নেয় যে, তাহলে নিজের ভোটটা নষ্ট না করে যারা ক্ষমতায় আসবে তাদেরই ভোট দিয়ে নিজের ‘অবদানটুকু’ রাখি। এটি একটি সুচতুর প্রচারণা। এবার মিডিয়ার মাধ্যমে কোন কোন মহল এখন থেকেই বেশ ইচ্ছাকৃতভাবে প্রচারণাটি শুরু করেছে। এর ফলে সরকারী দল নৈতিকভাবে আগে থেকেই দুর্বল হয়ে পড়বে, বিরোধী দল চাঙ্গা হতে শুরু করবে। এর কিছু কিছু লক্ষণ আমরা আশপাশে এরই মধ্যে লক্ষ্য করতে শুরু করেছি। জামায়াত-বিএনপির নেতাকর্মী সমর্থকদের একটি অংশ বেশ নড়েচড়ে উঠতে শুরু করেছে। তারা ধরেই নিচ্ছে যে, আগামীতে তারা ক্ষমতায় আসতে যাচ্ছে, প্রতিপক্ষকে তখন দেখে নেয়া হবে এমন উচ্ছ্বাসের কথাও কেউ কেউ প্রকাশ করে ফেলছেন। কেউ কেউ আবার সাফারি পোশাক লন্ড্রিতে দেয়ার চিন্তা-ভাবনা করছেন। যাঁরা দল করেন, তাঁরা ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন এভাবে দেখবেন তাতে দোষের কিছু নেই। তবে আগামী নির্বাচনের দেড় বছর আগেই গণমাধ্যমের একটি অংশ, কোন কোন মহল যেভাবে নিশ্চিত করে কারও ক্ষমতায় আসা না আসা নিয়ে কথা বলছে তা বেশ বিস্ময়ের সৃষ্টি করার মতো। এ ধরনের প্রচারণায় জামায়াত-বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নেতাকর্মীরাই যে শুধু নড়েচড়ে উঠছেন তা-ই নয়, ওই ঘরানার শিক্ষক, পেশাজীবীদের মধ্যেও জেগে ওঠার কিছু লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। গত ৮ সেপ্টেম্বর রাত ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে জামায়াত-বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সঙ্গে এক দীর্ঘ মতবিনিময় করেছেন। সহকর্মীদের সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানতে পেরেছি যে, অংশ নেয়া অনেক শিক্ষকই নিজ নিজ জীবন বৃত্তান্ত সেখানে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছেন, দু’একজন প্রসঙ্গক্রমে বলেছেন যে, ম্যাডাম আমি কিন্তু সিভি দিতে আসিনি। বোঝাই যাচ্ছে ক্ষমতায় আসলে উপাচার্য, উপউপাচার্য বা অন্য কিছু হওয়ার প্রতিযোগিতায় নিজেদের নেয়ার অবস্থান এ থেকেই শুরু হয়ে গেছে। বেগম খালেদা জিয়া অন্য যে সব পেশার জামায়াত-বিএনপিপন্থীদের সঙ্গে সহসা বসতে যাচ্ছেন সেখানেও একই লক্ষণই দেখা যাবে। ক্ষমতা, চেয়ার, পদ, পদবি ইত্যাদিকেন্দ্রিক রাজনীতি ও পালাবদলে আশাবাদী হওয়ার কিছু নেই। আশ্চর্যান্বিত হওয়ারও কিছু নেই। এটিই যেন আমাদের রাজনীতির প্রধান বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠেছে।
ফিরে আসছি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রসঙ্গে। প্রধানমন্ত্রী দেশে ক্ষমতা বদলকে কেন্দ্র করে যে প্রচারটি এ দেশে রয়েছে সে সম্পর্কে অবগত আছেন সেটি তাঁর কথা থেকে বুঝতে পারা গেছে। সেটিকে তিনি উল্লেখ করে এক অর্থে ভালই করছেন। কেননা তাঁর দলের অনেক নেতাকর্মীই উক্ত প্রচারণায় অনেকটাই দ্বিধান্বিত আছেন, আসল বিষয়টি কী তা ঘরোয়াভাবে বললেও মুখ খুলে বলতে পারছেন না। এখন প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে মুখ খোলায় তাঁরা হয়ত কিছুটা সাহস খুঁজে পেয়েছেন। তবে যে সব নেতাকর্মী নিজের এলাকায় তেমন কোন কাজ করেননি, কিংবা দুর্নাম কুড়িয়েছেন তাঁদের বিষয়টি একেবারেই আলাদা। আমরা জানি না, তেমন এমপি বা নেতার সংখ্যা কত হতে পারে সেটি দল ও মহাজোট কতটা নির্ভর করার মতো তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে তা আমরা জানি না। সেটি অন্য প্রসঙ্গ। তবে প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে পর পর দু’বার কোন দলকে জনগণ নির্বাচিত করে না এমন বক্তব্যের যে বিরোধিতা করেছেন সেটি তাঁর আস্থার দৃঢ়তার সঙ্গে জড়িত বিষয় বলে মনে হচ্ছে। তিনি বলেছেন, এই ধারণা ভেঙ্গে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয় লাভ করবে। জনগণের ভোটের মাধ্যমেই তিনি সেই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। এর বাস্তব ভিত্তি হিসেবে তিনি তাঁর সরকারের উন্নয়ন কর্মকা-ের কথাই উল্লেখ করেছেন। খুব নির্মোহভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে যে, খাদ্যোৎপাদন, শিক্ষা, বিদ্যুত উৎপাদন, তথ্য প্রযুক্তিসহ বেশ কিছু ক্ষেত্রে বর্তমান মেয়াদে সরকার নজরকাড়া সাফল্য দেখাতে পেরেছে। যোগাযোগমন্ত্রী রেল এবং যোগাযোগ ব্যবস্থায় কিছুটা স্বস্তি আনার জন্য প্রাণপণ লড়াই করে যাচ্ছেন। স্বীকার করতে হবে, আওয়ামী লীগ নিজের সাফল্যের কথা নিজেই প্রচার করতে জানে না, আওয়ামী লীগ বোধ হয় ধরেই নেয় যে, দেশের মানুষ সব তথ্য-উপাত্ত জানে, বিভিন্ন টিভি চ্যানেল ও সংবাদপত্র যত নেতিবাচক সংবাদ বা টকশোই প্রচার করুক না কেন, জনগণ সব খবরাখবর রাখে এবং তাতে বিভ্রান্ত হওয়ার কোন কারণ নেই। ২০০১ সালে নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের মধ্যে সে ধরনের ধারণাই কার্যকর ছিল। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল নির্বাচনের আগে মিডিয়ায় কয়েকজন গডফাদারের আতঙ্ক এতটাই ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব হলো যে, শহুরে ভোটারদের বড় অংশই আওয়ামী লীগ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল। মজার ব্যাপার হলো, ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচনে ভোট দিয়ে জিতিয়ে আনা হলো বিএনপি-জামায়াতকে যারা নির্বাচনের দিন থেকেই সহিংসতার এমনই রেকর্ড গড়ে তুলেছিল যার কোন তুলনা খোঁজা যায় না, গোটা রাষ্ট্রব্যবস্থাকে পরিবর্তন করার জন্য আওয়ামী নিধনে তারা নেমে পড়ল, সংখ্যালঘু ভোটারদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। যারা ২০০০-০১ সালে দেশে সন্ত্রাস ও গডফাদারের উত্থান নিয়ে মিডিয়ায় লাগামহীন প্রচারণা ছড়িয়েছিল তারা ১ অক্টোবরের নির্বাচনের পর ৫ বছর বাংলাদেশে বোমাবাজি, জঙ্গীবাদ, কিবরিয়া, আহসানউল্লা মাস্টার হত্যা, ২১ আগস্টের হত্যাকা-, ১০ ট্রাক অস্ত্র পাচারসহ নানা সন্ত্রাসের রাজত্বে যে বীভৎস রূপ দেখেছিল তার ব্যাখ্যা কিভাবে দেবেন জানি না। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, ২০০১-২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোটের শাসনে বাংলাদেশকে রাষ্ট্র চরিত্রের দিক থেকেই বদলিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। তখন জামায়াত-বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছিল যে, জামায়াত-বিএনপির ঐক্য অটুট থাকলে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের বা মুক্তিযুদ্ধের শক্তির রাষ্ট্র ক্ষমতায় ফিরে আসা অসম্ভব হবে। তা যে ইতিহাস বিকৃতি ঘটিয়ে জিয়াউর রহমানকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক বানানো হচ্ছিল, বেতার-টিভি, প্রচার-প্রচারণায় আওয়ামী লীগকে দেশদ্রোহী শক্তি, বঙ্গবন্ধুসহ জাতীয় নেতৃবৃন্দকে ইতিহাস থেকে ছুড়ে ফেলা, তাদের রাজনৈতিক চরিত্রে কালিমা লেপনের কাজটি ব্যাপকভাবে শুরু করা হয়েছিল। এসব কিছুকে স্থায়ী করার জন্যই ইয়াজউদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার, আজিজ-মাহফুজ-জাকারিয়াদের দিয়ে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করিয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আনার নীলনকশা বাস্তবায়ন করা হচ্ছিল। ১/১১ তাদের সেই অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা, ২১ জানুয়ারির তথাকথিত নির্বাচন স্তব্ধ করে দেয়। ২০০১ সালের নির্বাচনের আগে কি মিডিয়ার প্রচারক মহল, ভোটারদের বড় অংশ এমনটি হবে বলে ধারণা করতে পেরেছিল? অধিকন্তু তখন তাদের ধারণাটি তো দেয়া হয়েছিল যে, গডফাদারদের উত্থান ঠেকাতে হলে, ইসলাম রক্ষা করতে হলে, ভারতের তাঁবেদারি থেকে বাঁচতে হলে আওয়ামী লীগকে ঠেকাতে হবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ তখন না পেরেছে নিজেদের অর্জনগুলো জনগণের কাছে ভালভাবে তুলে ধরতে, না পেরেছে ৪ দলীয় জোটের রাজনৈতিক চরিত্রকে তুলে ধরতে। রাষ্ট্র ক্ষমতায় এই শক্তির উত্থানের পরিণতি কী হতে পারে সে সম্পর্কে কোন ধারণাই দিতে পারেনি। ফলে আওয়ামী লীগের মতো রাজনৈতিক দলের ক্ষমতায় থাকার সঙ্গে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের রাজনৈতিক চরিত্রের লাভ কতটুকু, না থাকার ফলে ক্ষতিটা কতটুকু হতে পারে, এর গতিপ্রকৃতি কোন দিকে মোড় নিতে পারে এ সম্পর্কে কোন ধারণাই দেয়া সম্ভব হয়নি। একটি রাজনৈতিক দল যদি দেশের নেতৃত্ব কার হাতে থাকলে কী হতে পারে, চরিত্র ধারণ করতে পারে, না থাকলে কতটা উল্টো পথে যেতে পারে এ ব্যাখ্যা যদি তুলে ধরতে না পারে তাহলে সমাজের অগ্রসর মানুষ কিভাবে বুঝবে, অনুমান করবে এটি একটি বড় প্রশ্ন। সে কাজটি আওয়ামী লীগ তখন করতে পারেনি বলে ১৯৯৬-২০০১ সময়ে আওয়ামী লীগ তুলনামূলকভাবে দেশটি ভালভাবে চালিয়েও কয়েকজন সন্ত্রাসী গডফাদারের কারণে বা তাদের নিয়ে প্রচারিত অভিযোগের কারণে ভীত হয়ে সাধারণ ভোটারদের উল্লেখযোগ্য অংশ ভোটদানে প্রচারণার শিকার হয়েছেন। এর ফলাফল কী হয়েছে তা নতুন করে বলার নেই, বলাটি বোধ হয় যথার্থ নয়। সেই ৫ বছরের রাজনৈতিক অবস্থার গভীর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ সব সময়ই দাবি রাখে।
আমাদের আশপাশে আওয়ামী লীগের যেসব শুভানুধ্যায়ী রয়েছেন তাঁরা আওয়ামী লীগের প্রচার বিমুখিনতা নিয়ে জানতে চান। আমাদের কারও কাছেই কান জবাব নেই। ফলে ফাঁকা মাঠে বিরোধী দল এককভাবে মিডিয়া কাঁপিয়ে চলছে। এর ফলে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে। এত সব বিষয় নিয়ে যে সব প্রচার-অপপ্রচার ও বিভ্রান্তি রয়েছে সেগুলোর উত্তর আওয়ামী লীগকেই তো দিতে হবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ দিচ্ছে না। ফলে জনমত বেশ গোমট অবস্থার মধ্যে আছে, আছে নানা বিষয়ে ক্ষোভ ও হতাশাও। এসব দূর করা না গেলে নির্বাচনে প্রভাব পড়া খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। আবার বিষয়গুলো নিয়ে যদি সরকার দৃঢ় অবস্থান স্পষ্ট করতে পারে, হলমার্ক গ্রুপের দুর্নীতির আসল রহস্য উদঘাটন করতে পারে, পদ্মা সেতু নির্মাণে পদক্ষেপ নেয়া যায়, শেয়ার মার্কেটে একটা মোটামুটি সন্তোষজনক অবস্থা ফিরিয়ে আনা যায়, দ্রব্যমূল্য লাগামহীন অবস্থায় যেন আর যেতে না পারে এ বিষয়গুলো নিয়ে সরকারবিরোধী ও গণমাধ্যমের অভিযোগসমূহের বিশ্বাসযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য জবাব দিতে পারলে তবেই মানুষের আস্থার জায়গাটি অটুট থাকবে। আস্থার জায়গায় সঠিক তথ্য না থাকলে নির্বাচনে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। সে ক্ষেত্রে গণেশ উল্টে যাওয়াটি মোটেও অসম্ভব ব্যাপার নয়। আবার মানুষকে সঠিক তথ্য দেয়া গেলে, সরকারের দৃঢ়তা বোঝানো গেলে জনগণ দ্বিতীয়বার আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে না এমন কথা মোটেও বলা যাবে না।
১৯৯৬ সালে বিএনপি ১৫ ফেব্রুয়ারির পর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জয়লাভ করার বাস্তব কারণ ছিল না। ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরাজয়ের পেছনে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল, অতি আত্মবিশ্বাসী মনোভাব, বিভ্রান্তি ও এবং মহল বিশেষের ষড়যন্ত্র বিশেষভাবে কাজ করেছে। বিএনপি ২০০৭ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার জন্য যা করেছে তা দিয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে জয়লাভ করা যায় না। আওয়ামী লীগ ২০১৪ সালের নির্বাচনে জনগণের আস্থা যদি যথাযথভাবে ধরে রাখতে পারে, যেসব সমস্যা এ মুহূর্তে রয়েছে সেগুলো দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে সক্ষম হলে, বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার পরিবেশ প্রতিষ্ঠা করতে পারার পরও জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে না এমন শপথ বৃহত্তর জনগোষ্ঠী করেছে বলে শুনিনি। সব কিছু নির্ভর করছে সম্মুখের দিনগুলোতে দল ও সরকার হিসেবে আওয়ামী কিভাবে মোকাবিলা করবে তার ওপর। আমাদের নির্বাচনের ইতিহাস বেশি দিনের নয়। অভিজ্ঞতা তাই এখনও যথেষ্ট নয়। তারপরও বলতে হবে, ৪টি নির্বাচন অতিক্রম করার অভিজ্ঞতা থাকা জনগণ ৫ম বা ভবিষ্যত নির্বাচনে অতীতের মতোই দল পরিবর্তনের ভোট দেবে এমনটি হলফ করে বলা যাবে না। সব কিছু নির্ভর করছে সরকারের আন্তরিকতা ও দক্ষতা রাখার ওপর। শেখ হাসিনা তাঁর দলের নেতাকর্মীদের মনোবল দৃঢ় করার সাহস জুগিয়েছেন এটি ভাল কথা। একই সঙ্গে জনগণের আস্তা অর্জনে স্থানীয় পর্যায়ের নেতৃবৃন্দকে বিতর্কের উর্ধে উঠে কাজ করতে হবে। এসবে ঘাটতি রেখে খুব বেশি সাফল্য ঘরে তোলা যাবে না। সম্মুখের দেড় বছর সেই পরীক্ষায় আওয়ামী লীগকে উত্তীর্ণ হতে হবে, জনগণকে আওয়ামী লীগ ছাড়া ২০০১-২০০৮ সালের বাস্তবতার কারণ ও ব্যাখ্যা তুলে ধরতে হবে, প্রচার যুদ্ধে আওয়ামী লীগকে নামতে হবে, তবে সেই প্রচার প্রচারণা যেন হয় পরিশীলিত, বাস্তবতানির্ভর এবং রাজনৈতিক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে পরিপূর্ণ, যা শুনে বা বুঝে জনগণ নির্বাচনে আবেগের চাইতে রাজনৈতিক সচেতনতা ও বিচার-বুদ্ধির প্রয়োগ ঘটাতে সক্ষম হবে। সেই কাজে আওয়ামী লীগকে এগিয়ে আসতে হবে।
লেখক : অধ্যাপক, কলামিস্ট

No comments

Powered by Blogger.