পবিত্র কোরআনের আলো-জাদু নবীদের শিক্ষা নয় মহৎ শিক্ষাও নয়

১০১। ওয়া লাম্মা-জা-আহুম রাসুলুম মিন ই'নদিল্লা-হি মুছ্বাদ্দিক্বাল লিমা-মাআ'হুম নাবাজা ফারি-ক্বুম মিনাল্লাজি-না উ-তুল কিতা-বা; কিতা-বাল্লা-হি ওয়ারা-আ জুহু-রিহিম কাআন্নাহুম লা-ইয়া'লামু-ন। ১০২। ওয়াত্তাবাউ' মা-তাতলুশ্ শাইয়া-তি-নু আ'লা-মুলকি ছুলাইমা-না; ওয়ামা-কাফারা ছুলাইমা-নু ওয়ালা-কিন্নাশ্ শাইয়া-তি-না কাফারু-


ইউআ'ল্লিমু-না ন্না-ছাছ্ ছিহ্রা; ওয়ামা-উনজিলা আ'লাল মালাকাইনি বিবা-বিলা হা-রু-তা ওয়ামা-রু-তা; ওয়ামা-ইউআ'ল্লিমা-নি মিন আহাদিন হাত্বা ইয়াক্বু-লা-ইন্নামা-নাহ্নু ফিতনাতুন ফালা-তাকফুর; ফাইয়াতাআ'ল্লামু-না মিনহুমা-মা ইউফার্রিক্বু-না বিহি-বাইনাল মারয়ি ওয়াজাওজিহি-; ওয়ামা-হুম বিদ্বা-র্রি-না বিহি-মিন আহাদিন ইল্লা- বিইজনিল্লা-হি; ওয়া ইয়াতাআ'ল্লামু-না মা-ইয়াদুর্রুহুম ওয়ালা- ইয়ানফাউ'হুম; ওয়ালাক্বাদ আ'লিমু-লামানিশ্তারা-হু মা-লাহু- ফিল আ-খিরাতি মিন খালা-কি্বন; ওয়ালাবি'ছা মা-শারাও বিহি- আনফুছাহুম; লাও কা-নু- ইয়া'মালু-না। (সুরা বাকারা : আয়াত ১০১-১০২)

অনুবাদ : ১০১। যখনই তাদের কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে কোনো নবী আসে এবং তাদের কাছে বিদ্যমান কিতাবের সত্যতা স্বীকার করে তখনই সেই আগের কিতাবের ধারকদের একটি দল পূর্ববর্তী কিতাবে উল্লিখিত সেই কথাগুলো (পরবর্তী নবীর আগমনের কথা) এমনভাবে পেছনে ফেলে দিল যেন তারা এ ব্যাপারে কিছুই জানে না।
১০২। এমন কিছু জিনিসও এরা অনুসরণ করতে লাগল, যা শয়তান কর্তৃক সোলায়মানের রাজত্বকালে সমাজে চালু করা হয়েছিল। সোলায়মান কখনো আল্লাহকে অস্বীকার করেনি। আল্লাহকে তো অস্বীকার করেছে সেসব অভিশপ্ত শয়তান যারা মানুষকে জাদুমন্ত্র শিক্ষা দিয়েছে। আর ওই জাদুরও তারা অনুসরণ করেছে, যা নাজিল করা হয়েছিল বাবেলে হারুত ও মারুত নামে দুই ফেরেশতার ওপর। সেই দুই ফেরেশতা যখনই কাউকে এ বিষয়ের শিক্ষা দিত, তাদের বলে দিত, 'আমরা তো হচ্ছি আল্লাহর পরীক্ষামাত্র, অতএব তোমরা এ দিয়ে কুফরি কোরো না'। এর পরও তারা এদের কাছ থেকে এমন কিছু বিদ্যা শিখে নিয়েছিল, যা দিয়ে তারা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি করত; আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া কেউ কারো ক্ষতি সাধন করতে পারে না, তারা এমন কিছু শিখে, যা তাদের উপকার বা ক্ষতি কোনোটাই করতে পারে না; যদি তারা জানত, তারা যা কিনেছে পরকালে এর কোনোই মূল্য নেই। তারা নিজেদের জীবনের বিনিময়ে যা কিনল তা সত্যিই নিকৃষ্ট, যদি তারা সেটা জানত!

ব্যাখ্যা : ১০১ নম্বর আয়াতে পূর্ববর্তী প্রসঙ্গের ধারাবাহিকতায় ইহুদিদের চরিত্র বর্ণিত হয়েছে। ইহুদিদের তাওরাত কিতাবে শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এবং কোরআন নাজিল সম্পর্কে সুস্পষ্ট ইঙ্গিত আছে। অথচ যখন নবী এলেন কোরআন নাজিল হতে লাগল তখন তারা এমন ভান করল যেন তারা কিছুই জানে না। অথচ আল্লাহর কিতাব কোরআনে তাওরাত সম্পর্কে সুস্পষ্ট স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে। ১০২ নম্বর আয়াতে বনি ইসরাইল বংশোদ্ভূত নবী ও বাদশাহ সোলায়মানের শাসনামল ও জাদুবিদ্যার প্রসঙ্গে বলা হয়েছে। হজরত সোলায়মান (আ.)-এর আমলে জাদুবিদ্যার বিস্তার ঘটেছিল, কিন্তু হজরত সোলায়মান (আ.) জাদুকর ছিলেন না। জাদু কোনো মহৎ বিদ্যা নয়, বরং বিভ্রান্তিকর ছল-চাতুরি_এ কথাই এ আয়াতের মাধ্যমে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। কথিত আছে, হজরত সোলায়মানের রাজত্বকালে জিনেরা জাদুর প্রক্রিয়াসংবলিত একটি গ্রন্থ জনসাধারণের মধ্যে প্রচার করেছিল। হজরত সোলায়মান তা জানতে পেরে ওই কিতাবটি একটি সিন্দুকে পুরে মাটির নিচে পুঁতে ফেলেন। হজরত সোলায়মান (আ.)-এর মৃত্যুর পর জিনেরা সেটা বের করে লোক সমাজে প্রচার করতে লাগল যে সোলায়মান এ কিতাবের বলেই রাজত্ব করতেন। কোনো কোনো তাফসিরকারের মতে, এ বিবরণে বর্ণিত জিনেরা আসলে মানুষ জাদুকর ও ওঝারাই ছিল বলেও বর্ণনা করা হয়েছে। এ আয়াতের একাংশে প্রাচীন বাবেল বা ব্যাবিলন শহরে জাদু চর্চার প্রসঙ্গে বলা হয়েছে। একসময় বাবেল শহরে জাদুবিদ্যার খুব প্রচলন ছিল। এর প্রভাবে লোকেরা জাদুকরদের জাদু এবং নবীদের মো'জেজার পার্থক্য বুঝতে পারত না। লোকেরা জাদুকরদের নবী মনে করে তাদের অনুসরণ করত। এই বিভ্রান্তি দূর করার জন্য আল্লাহ তায়ালা হারুত ও মারুত নামক দুজন ফেরেশতাকে সেখানে পাঠিয়ে জাদুবিদ্যার মূল তত্ত্ব মানুষকে বুঝিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। জাদুতে অনেক চটক থাকলেও জাদু যে মানুষের জন্য কোনো মহৎ শিক্ষা নয় এবং অতীতে মানুষ জাদুর দ্বারা অনেক বিভ্রান্ত হয়েছে এ কথাই এ আয়াতে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.