ডাক্তার হবার স্বপ্ন...

বর্তমান সময়ের চাহিদা সম্পন্ন পেশা ডাক্তারী। অধিকাংশ বাবা-মার স্বপ্ন সন্তান ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করবে। সেবার পাশাপাশি এ পেশায় রয়েছে সামাজিক মর্যাদা। এ পেশায় ক্যারিয়ার গড়তে হলে এইচএসসির পর মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে হবে। প্রতিযোগিতামূলক এ পরীক্ষায় জয়ী হতে হলে অধ্যাবসায়ের বিকল্প নেই।


শিক্ষার্থীকে ব্যতিক্রমী অনুশীলনের মাধ্যমে প্রস্তুতির বিষয়গুলো আত্মস্থ করতে হয়। কেবল আত্মবিশ্বাস আর যথাযথ অনুশীলনের মাধ্যমে মেডিক্যালে ভর্তির সুযোগ পাওয়া সম্ভব। আসুন জেনে নেই মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষার বিস্তারিত।

ভর্তির যোগ্যতা
১. যারা ২০০৯ বা ২০১০ সালে এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় উর্ত্তীন হয়েছেন এবং ২০১১ বা ২০১২ সালে এইচএসসি বা সমমানের (পর্দাথ, রসায়ন ও জীববিদ্যাসহ) পরীক্ষায় উর্ত্তীন হতে হবে। ইংরেজী ২০০৯ সালের পূর্বে এসএসসি/ সমমানের পরীক্ষায় ছাত্র/ছাত্রীরা আবেদনের যোগ্য হবেন না।

২. বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি ও এইচএসসি উভয় পরীক্ষায় মোট জিপিএ-৮.০ প্রাপ্ত ছাত্রছাত্রীরাই কেবল ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে। উভয় পরীক্ষায় জীববিজ্ঞান থাকা বাঞ্ছনীয়। জীববিজ্ঞানে ন্যূনতম জিপিএ-৩.৫০ পেতে হবে।

৩.সকল উপজাতীয় ও পার্বত্য জেলার অ-উপজাতীয় প্রার্থীদের ক্ষেত্রে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় মোট জিপিএ কমপক্ষে ৭.০০ হতে হব্ েতবে এককভাবে কোন পরীক্ষায় জিপিএ ৩.০০ এর কম হলে আবেদন যোগ্য হবে না। এ বিষয়টি বেসরকারী মেডিক্যাল/ ডেন্টাল কলেজে ভর্তিচ্ছু বিদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।

ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি
ভর্তি পরীক্ষায় মোট নম্বর ২০০। এসএসসির জিপিএ-এর ৮ গুণ এবং এইচএসসির-১২ গুণ যোগ করে মোট ১০০ এবং বাকি ১০০ এমসিকিউ পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেয়া হবে। পরীক্ষায় উদ্ভিদবিদ্যা-১৫, প্রাণিবিদ্যা-১৫, পদার্থ-২০, রসায়ন-২৫, ইংরেজী-১৫, সাধারণ জ্ঞান-১০। প্রতিটি প্রশ্নের নম্বর-১। প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য .২৫ নম্বর কাটা যাবে।
ভর্তি তথ্য
অনলাইনে আবেদন জমা শুরু হবে ১৮ সেপ্টম্বর, ২০১২। আবেদন জমা দেবার শেষ তারিখ ১৭ অক্টম্বর ২০১২। ভর্তি পরীক্ষা ২৩ নভেম্বর ২০১২। অনলাইনে আবেদন জমা ও ভর্তি সংক্রান্ত বিস্তারিত জানতে পারবেন যঃঃঢ়://ফমযং.ঃবষবঃধষশ.পড়স.নফ এবং িি.িফমযং.মড়া.নফ ওয়েবসাইটে।

বিষয় অনুসারে প্রস্তুতি
মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি টেক্সস বই থেকেও প্রশ্ন করা হয়। পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান থেকে প্রশ্ন করা হয়। এজন্য মূল বইয়ের প্রথমপত্র ও দ্বিতীয়পত্র সম্পর্কে ধারণা রাখা জরুরী। কেবল এক লেখকের বইয়ের ওপর নির্ভর না করে একাধিক লেখকের বই আয়ত্তে রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে টেক্সস বইয়ের বিকল্প নেই। টেক্সট বইয়ের খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে ভাল ধারণা থাকা বাঞ্ছনীয়। পুরনো পড়াগুলো বার বার রিভাইজ দিতে হবে। টেক্স্ট বইয়ের পাশাপাশি ইংরেজী ও সাধারণ জ্ঞান থেকেও প্রশ্ন করা হয়। অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ইংরেজী বিষয়কে গুরুত্ব দিতে হবে। কেননা ইংরেজীতে অন্যদের চেয়ে তুলনামূলক ভাল করলে ভর্তি পরীক্ষায় নিজের টিকে থাকার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। ইংরেজীর ব্যাকরণ অংশ যেমন পার্টস অব স্পিচ, সেনটেন্স, জেন্ডার, নাম্বার, আর্টিকেলস, টেন্স, ভয়েস, ট্রান্সফরমেশন অব সেনটেন্সেস, ন্যারেশন, প্রিপজিশন, ট্যাগ কোয়েশ্চেন, কন্ডিশনাল সেনটেন্স, রাইট ফরম অব ভার্বস, স্পেলিং, এনটোনিম- সিনোনিম, কারেকশন, এ্যানালোজি ইত্যাদি সম্পর্কে ভাল ধারণা রাখতে হবে।

সাধারণ জ্ঞানের প্রস্তুতি
কোথায় কখন কী ঘটছে এসব সাম্প্রতিক বিষয়ের ওপর খোঁজখবর রাখতে হবে। রেডিও- টেলিভিশনের খবর শুনতে হবে। সাধারণ জ্ঞানে ভাল করার জন্য বাজারে প্রচলিত বিভিন্ন বইয়ের পাশাপাশি বাংলা পিডিয়া, বাংলাদেশের ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বই, এনসাইক্লোপিডিয়া ও উইকিপিডিয়ার সহায়তা নেয়া যেতে পারে। দৈনন্দিন বিষয়ে ভাল করার জন্য জাতীয় দৈনিকের গুরুত্বপূর্ণ খবর ও সম্পাদকীয় অংশে চোখ রাখতে হবে।
পরীক্ষার খুঁটিনাটি
মেডিক্যাল পরীক্ষায় জীববিজ্ঞান থেকে ৩০ নম্বরের, রসায়ন থেকে ২৫, পদার্থবিজ্ঞান থেকে ২০, ইংরেজী থেকে ১৫ ও সাধারণ জ্ঞান থেকে ১০ নম্বরের মোট ১০০ নম্বরের পরীক্ষা হয়ে থাকে। টেক্সটে গুরুত্ব দেয়ার পাশাপাশি ইংরেজী ও সাধারণ জ্ঞানেও গুরুত্ব দিতে হবে। কোন বিষয়কে অবহেলা করা চলবে না। পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য সিলেবাসভুক্ত জীববিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন বইয়ের পাশাপাশি বাজারে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত অন্য বইগুলো অনুসরণ করা যেতে পারে।

সময়ের সর্বোচ্চ ব্যবহার
মেডিক্যালে ভর্তির জন্য কতক্ষণ পড়তে হবে সে বিষয়ে ধরাবাধা কোন নিয়ম নেই। প্রস্তুতির জন্য প্রতিটি মুহূর্ত যেন ফলপ্রসূ হয় সেদিকে নজর দিতে হবে। সময়গুলোকে পাঠ্যবিষয় অনুযায়ী বণ্টন করে নিতে পারেন। পুরনো পড়াগুলো রিভাইজ দিতে হবে। প্রয়োজনে রুটিন করে নিতে হবে। সাফল্যের চাবিকাঠি সময়ানুবর্তিতা। প্রতিটি পড়া তিনি রুটিন অনুসারে সময় করে পড়তেন। রুটিন করা বিষয়ে এলোমেলো না পড়ে অবশ্যই রুটিন করে পড়া উচিত, কেননা রুটিন করলে পড়াশোনাটা বেশ গোছালো হয়।

পরীক্ষার হলে করণীয়
অনেকেই পরীক্ষার হলে নার্ভাস হওয়া যাবে না। অনেকের প্রস্তুতি ভাল থাকার পরেও পরীক্ষার হলে নার্ভাসনেসের কারণে কাক্সিক্ষত ফল লাভ করতে পারে না। উত্তর দেয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে উত্তরপত্রে বৃত্ত যেন ঠিকঠাক ভরাট করা হয়। অনেকেই তাড়াহুড়া করতে গিয়ে ভুল করে উত্তরপত্রে এক প্রশ্নের উত্তর অন্য বৃত্তে ভরাট করে থাকে। উত্তর দেয়ার সময় প্রশ্নের ধারাবাহিকতা লক্ষ্য করে উত্তর দিতে হবে। পরীক্ষার হলে আনকমন প্রশ্ন দেখে একদম ঘাবড়ে যাওয়া যাবে না। পরীক্ষায় দু-একটা প্রশ্ন আনকমন আসতেই পারে, এটা মাথায় রেখে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। আনকমন প্রশ্ন দেখে হতাশ হওয়া চলবে না। ১০০টি প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য সময় ৬০ মিনিট। অর্থাৎ একটি প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য সময় ৩৬ সেকেন্ড। এই অল্প সময়ের ভেতরে প্রশ্ন পড়া ও উত্তরপত্রে বৃত্ত ভরাটের কাজ করতে হবে। ে উত্তর দেয়ার সময় সচেতন থাকা জরুরী।
ইমাদুল হক প্রিন্স

No comments

Powered by Blogger.